তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে

চরিত্রে ঢুকে আমি শান্তি পাই

প্রথম ধারাবাহিক ‘দেনা পাওনা’ দিয়েই আলোচনায় তাবাসসুম ছোঁয়া। প্রথম আলোর মুখোমুখি এই তরুণ অভিনেত্রী। কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

প্রশ্ন

ধারাবাহিকে নাম লেখানোর পর এক বছর হয়ে গেল। নিজের ভেতর কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছেন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : সব মিলিয়ে তিন বছর হলো আমার অভিনয়ে আসা। অভিনয় শিখে আসিনি। অভিনয় শুরুর পর থেকে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত গুণী গুণী অভিনয়শিল্পী–কলাকুশলীর কাছ থেকে শিখছি। পরিচালক (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল) রাজ ভাইসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত টিম থেকে শিখে চর্চা করছি, যেন আরও ভালো করা যায়। অভিজ্ঞতা থেকে বলব, আমার জীবনটা আকাশ-পাতাল বদলে গেছে।

তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

কীভাবে বদলে গেল জীবন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : কীভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অভিনয় করতে হয়, কীভাবে চোখের পলক ফেলতে হয়, কীভাবে যথাযথ এক্সপ্রেশন দিতে হয়, সংলাপ দিতে হয়—এসবের কিছুই জানতাম না। আমার কোনো অভিভাবক ছিল না। এখন কাজ করতে করতেই সব শিখছি। নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য পড়াশোনা করছি। আগের সঙ্গে তুলনা করলে এটাই মনে হয়, আমার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

প্রশ্ন

এখন কি অভিনয়েই ক্যারিয়ার গড়তে চান?

তাবাসসুম ছোঁয়া : আমি কনটেন্ট ক্রিয়েশন থেকে এসেছি। কিছু কাজ করার পর মনে হলো, অভিনয়ই আমার আসল জায়গা, অভিনয়ই করতে চাই। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। আর অনেক রকম শখ তো সবারই থাকে। সেখানে ভিডিও বানানো, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি—এগুলো পাশাপাশি চলবে। এ ছাড়া নিয়মিত শখে নাচ শিখছি। অভিনয়ের পাশাপাশি আমার যা ভালো লাগে, সেগুলো নিয়ে থাকতে চাই।

তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে কোন বিষয়টা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়?

তাবাসসুম ছোঁয়া : দর্শক আমাকে এতটাই পছন্দ করেন যে আমি এখন ‘নিপা’ নামেই পরিচিত। সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়। এটা যেন জাদুর মতো। এ জন্য আসলে আমার হার্ড ওয়ার্কিং ছিল। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি, আজ যদি শতভাগ পরিশ্রম করি, পরের দিন আরও ডাবল পরিশ্রম করব। লাকও ফেভার করেছে। ‘দেনা পাওনা’ নাটক থেকে পাওয়া ভালোবাসা আমার জন্য আশীর্বাদ। আমি সব সময় যে স্বপ্নটা দেখেছি, সেটা পূরণ হচ্ছে। নিজেকে সুখী মানুষ মনে করি।

প্রশ্ন

কনটেন্ট ক্রিয়েটর থেকে অভিনয়ে যদি সফল না হই—কখনো এমনটা মনে হয়েছিল?

তাবাসসুম ছোঁয়া : একটি কাজ করেই তো আর সফলতার মানদণ্ডে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আমি যখন ‘দেনা পাওনা’ নাটকের গল্প শুনি, তখনই আমার ভালো লাগে। পারিবারিক ঘটনার এই নাটকগুলো একসময় দেখেছি। তা ছাড়া রাজ ভাইয়ের জনপ্রিয় অনেক ধারাবাহিক ছিল। সেখান থেকে আমার মনে হয়েছিল, এটি দর্শকপ্রিয় হতে পারে। কিন্তু দর্শকপ্রিয়তা না পেলে অভিনয় করতাম না, বিষয়টা তেমন নয়। কারণ, তত দিনে আমি অভিনয়ের প্রেমে পড়েছিলাম।

তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

কখন, কীভাবে পড়লেন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : দুই বছর আগের কথা। জাহিদ প্রীতম ভাইয়ের ‘তিলোত্তমা’ নাটকের শুটিংয়ে, আমার চরিত্রটিকে লাশের পাশে বসে থাকতে হয়। বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাকে নীরবে কাঁদতে হবে। পরিচালক আগেই বলে দিয়েছেন, আপনজন কেউ মারা গেলে যেভাবে মানুষ কাঁদে, সেভাবে কাঁদতে হবে। আমার চোখে পানি চলে এল। শুটিং শুরু হয়। দূর থেকে বৃষ্টির পানি ছিটানো হচ্ছিল। একসময় একসঙ্গে অনেক পানি এক পাশে পড়ে ছিটকে যায়। সব অভিনয়শিল্পী শুটিং ছেড়ে দ্রুত উঠে পড়েন। কিন্তু আমি দৃশ্যের মধ্যে এতটাই ডুবে ছিলাম যে কিছুই বুঝতে পারিনি। সেদিন সবাই আমার প্রশংসা করেছিল। বিশেষ করে (অভিনেতা মীর) রাব্বি ভাইয়ের একটা কথা এখনো মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যেভাবে চরিত্রে ঢুকেছ, এভাবে অনেকেই পারে না। লেগে থেকো।’ আমার কাছেও মনে হয়েছিল, চরিত্রে ঢুকে আমি শান্তি পাই। সেই থেকেই সিদ্ধান্ত নিই, অভিনয়টাই করে যাব।

প্রশ্ন

নাটকের ‘নিপা’ অনেক শান্ত, আপনি কেমন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : আমি ‘নিপা’র বিপরীত মানুষ। চটাং চটাং কথা বলি। দ্রুত কথা বলি। বেশির ভাগ সময় কথা বলতেই থাকি। কিন্তু শুটিংয়ে আমাকে চুপচাপ থাকতে হয়। চোখের ইশারায় কথা বলতে হয়। শুরুতে জোরে জোরে কথা বলতাম। এখন চরিত্রের সঙ্গে মানানসই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাসাতেও আমি অনেক সময় চরিত্রের মতো হয়ে যাই।

তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, রাস্তায় হঠাৎ দুটো শিশু জড়িয়ে ধরেছিল...

তাবাসসুম ছোঁয়া : আমি ধানমন্ডিতে শুটিং করছিলাম। এমন সময় দেখি, দুটি শিশু রাস্তা পার হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। পরে বলল, আমার নাটক তারা দেখে। কিউট দুটি শিশু। আমার সঙ্গে সেলফিও তুলেছিল। ঘটনাটি আমার জন্য বিশেষ। দর্শকমনে একটু জায়গা করতে পারাটাই আমার ভালো কাজের প্রেরণা।

তাবাসসুম ছোঁয়া। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

ফেসবুকে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করেন, এগুলোর ক্যামেরার পেছনে কে থাকেন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : এটা আসলে কখনোই বলা হয় না। ভিডিওগুলো তৈরি করার জন্য মা-খালা, আমার বোনেরা সহায়তা করে। আমি বলে দিই, সেভাবেই ক্যামেরা ধরে রাখে তারা। আমরা একটা ফ্রেন্ডলি পরিবার। মা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। পরিবারের সবাই আমাকে সহায়তা করে। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।

প্রশ্ন

কী নিয়ে ব্যস্ততা এখন?

তাবাসসুম ছোঁয়া : এখন নাটকের কাজ বেশি করছি। বেশ কিছু ওটিটির কাজে কথা হয়েছে। সেগুলো এখনই বলতে চাইছি না। তবে নিজেকে নতুন করে তৈরি করছি। গ্রুমিং করছি। পাশাপাশি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। ভিডিও বানাই, এ–ই আমার ব্যস্ততা।