
বিয়ে করে সংসার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শার্লিন ফারজানা। ছয় বছর বিরতির পর আবার অভিনয় শুরু করেছেন। নতুন কাজ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
বিরতির পর আবার সিনেমার অভিনয়ে ফেরা। কেমন লাগছে?
শার্লিন ফারজানা : সিনেমার আগে আমি চার-পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেছি। তার আগে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছি। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় সিনেমার শুটিং শেষ হয়। সত্যি বলতে, শুটিংয়ে ফিরে এত ভালো লেগেছে, বলার মতো নয়। এ আনন্দের অনুভূতি বোঝাতে পারব না। বাসায় বসে থাকাটা ভালো লাগে না।
‘জীবন আমার বোন’ চলচ্চিত্রে কোন চরিত্রটা করছেন?
শার্লিন ফারজানা : নীলা, ভিন্ন রকম একটা চরিত্র। ১৯৭১ সালের একটি পরিবারের গল্প নিয়ে ছবিটা, পারিবারিক সেই আমেজও আছে। আমার চরিত্রটা পরিবার থেকে মুক্ত হওয়ার, ব্যক্তিস্বাধীনতার গল্প।
অভিনয় থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে?
শার্লিন ফারজানা : খুব আরাম কিন্তু একটা শূন্যতাও কাজ করে। মনে হয়, আমি যে মাধ্যমটায় কাজ করেছি, যেখানে আমার অবস্থান ছিল, সেটা যেন নেই। পারিবারিক জীবন তো সবার দরকার হয়। কিন্তু পাশাপাশি কর্মটা হচ্ছে জীবন। কর্ম ছাড়া কোনো জীবন কিন্তু জীবন নয়। কর্মে মুক্তি, কর্মে স্বাধীনতা, কর্মে নিজের মতো করে ভালো থাকার অবস্থা, ওইটা ছাড়া ভালো থাকা সম্ভব নয়।
কোন ঘরানা বা চরিত্রে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
শার্লিন ফারজানা : বিয়ের আগে একটা চাপ ছিল, নায়িকা থাকতে হবে। নায়িকা লুকেই যেন সব সময় আমাকে সবাই দেখে। চুলগুলো সব সময় সুন্দর, চেহারাও যেন সুন্দর থাকে। বিয়ের এসব চাপ কমে গেছে। কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই। এখন নিজেকে দেখতে নিজের অনেক বেশি স্বাধীন মনে হয়। মনে হয়, আমি নিজেকে আরও ভিন্ন রকম চরিত্রে দেখতে পাই। ভ্যাম্প চরিত্রে হোক, হরর ছবিতে হোক, খল হোক—যেসব আমি কখনো করিনি। যেমন সায়েন্স ফিকশন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে, তাই মাঝেমধ্যে মনে হয়, এলিয়েনের চরিত্র হলেও ভালো হয়।
বিয়ের আগে নায়িকা হতে চাওয়ার পেছনে কোনো কারণ?
শার্লিন ফারজানা : আমি জানি না কেন...মনে হতো ব্যক্তিজীবনেও আমাকে নায়িকা হয়েই থাকতে হবে। বিয়ের পর আমার জীবনে অনেক চেঞ্জ আসছে, এটা ভালো। বিয়ের আগের ওইটাও হয়তো ওই জীবনে দরকার ছিল। এখন মনে হয়, একটা চরিত্র আসবে, এত মাস ধরে মহড়া করতে হবে। আগে দেখা যেত, অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো নাটকের কাজ শেষ করতে হবে। সিনেমায় কাজ করতে হবে—এ মানসিকতা ছিল।
তার মানে বিয়ে ও সংসারজীবনের অভিজ্ঞতা আপনার অভিনয়ে প্রভাব ফেলেছে?
শার্লিন ফারজানা : একদম তাই। আমার মনে হয়, ইতিবাচক পরিবর্তনে (স্বামী) এহসান আমার জীবনে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। সে খুব ম্যাচিউরড একজন মানুষ। আমি তো পরিণত ছিলাম না। এখন আর ও রকম নেই আমি।
এখন কী রকম?
শার্লিন ফারজানা : জীবনের জন্য এখন বাঁচতে চাই। ব্যালান্স করা শিখেছি। সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। শুধু নিজে ভালো থাকব, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছি। পরিকল্পনা করা শিখেছি, সে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে ভালো লাগে।
আপনি দুই সন্তানের মা। মা হওয়ার পর জীবনে কোন পরিবর্তনগুলো সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছেন?
শার্লিন ফারজানা : আমি বিয়ের জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না। এরপর সন্তানের মা হলাম। যখন মা হলাম, ভাবলাম, অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছে। বাচ্চার মা হওয়ার পর একটা দিনও আমি খারাপ থাকিনি। ওদের স্পর্শই আমাকে অন্য রকম অনুভূতি এনে দেয়। আগে কোনো কিছু করার আগে চিন্তা করতাম না। এখন কিছু করার আগে অনেকবার ভাবি।
সামনের দিনগুলোতে দর্শক আপনাকে কী ধরনের কাজে দেখতে পারেন?
শার্লিন ফারজানা : অনেক ধরনের চরিত্রে দেখতে পাবে। প্রথমে হয়তো একটু আশাহত হতে পারে। আমার স্বামী শুনলেও আশাহত হয়, যখন আমি একটা আইটেম সং দেখে সে রকম কিছু একটাতে পারফর্ম করার কথা বলি। তাই এহসানও আমাকে মাঝেমধ্যে বলে, ‘তুমি আইটেম সং করবা!’ আমি বলি, হোয়াই নট? যদি ভালো হয়, গল্প সুন্দর হয়, করতে সমস্যা কোথায়? বরবাদ সিনেমার ‘চাঁদমামা’ গানটায় নুসরাতকে দারুণ লেগেছে। আমার যদি একই রকম ফিগার থাকে, মানিয়ে নিতে পারি, তাহলে কেন নয়? হয়তো শুরুতে কেউ চমকে যাবে। এর বাইরে নতুন একটা সিনেমায়ও আমাকে দেখা যাবে। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমা। অডিশনও দিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।