কানাডায় হিমি। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
কানাডায় হিমি। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে

২৫০ ফিট উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ার সময় সত্যিই ভয় কাজ করেছিল...

ছোট পর্দার সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন কানাডা। কাজের ব্যস্ততা, দেশের বাইরে ঘোরাঘুরিসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হক

প্রশ্ন

আপনার নাটক মানেই কোটি ভিউ

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : ভিউয়ের বিষয়টা কখনোই আমার মাথায় কাজ করে না। তবে সারপ্রাইজিং লাগে যখন আশপাশের মানুষ বা খুব কাছের কেউ জানতে চান, ‘পরবর্তী নাটক কখন আসছে?’ একটা ঘটনা বলি, জিমে যাওয়ার পর সেখানে এক আন্টি বললেন ‘তোমার পরবর্তী নাটক কোনটা আসছে? আমার হাজব্যান্ড পাগল বানিয়ে ফেলছে, সারা দিন আমরা তোমার নাটক দেখি, পুরোনো কোনো নাটক বাকি নেই।’ এই যে মানুষের অপেক্ষা, তা সত্যিই ভালো লাগে।

কানাডায় হিমি। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

ফানি কনটেন্টই কেন বেশি করেন?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : এই প্রশ্নটা আমি বারবার পাই—কেন ফানি বা কমেডি কনটেন্ট বেশি করি, সিরিয়াস গল্পে দেখা যায় না। আমি কিন্তু সব ধরনের কাজই করি। হয়তো ফানি কনটেন্টগুলোর ছোট ছোট ক্লিপ ফেসবুকে বেশি ভাইরাল হয়, আর তা দেখে দর্শক নাটকটি দেখার আগ্রহ পান। দেখুন, সিরিয়াস কনটেন্টে কিন্তু আমরা বেশি শ্রম দিই। গল্প থেকে চরিত্রায়ণ, সব চ্যালেঞ্জিং, সবকিছু গুছিয়ে কাজ করতে হয়। ফানি কনটেন্ট তুলনামূলক সহজ, পরিশ্রমও কম। তাই সিরিয়াস কনটেন্টের তুলনায় যখন ফানি কনটেন্টগুলো বেশি জনপ্রিয় হয়, তখন নিজের কাছেও খারাপ লাগে। তবে আবার এটাও ভাবি, দর্শক ভালোবেসেছে বলেই তো এত ভিউ হয়েছে।

প্রশ্ন

ঘুরেফিরে একই টিমের সঙ্গেই আপনাকে দেখা যায়

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : বলতে পারেন নিলয় (আলমগীর) ভাইয়ের সঙ্গে অনেক বেশি দেখা যায়। দর্শক পছন্দ করেন বলে ভিউ হচ্ছে, তাই হয়তো নির্মাতারা আমাদের একসঙ্গে ভাবছেন। তবে অন্যদের সঙ্গে করা কাজও আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভিউ পেয়েছে। মোশাররফ (করিম) ভাইসহ অনেকের সঙ্গে নিয়মিত আমার কনটেন্ট আসছে। সামনেও কিছু কাজ আসবে। আগে যখন মেহজাবীন (চৌধুরী) আপু, তাহসান (খান) ভাই, (আফরান) নিশো ভাই বা অপূর্ব ভাইয়া নিয়মিত কাজ করতেন, তাঁদের একসঙ্গে কাজ দেখার জন্য দর্শকদের মধ্যে কিন্তু রোমাঞ্চ থাকত। আমি এটাকে কখনো নেতিবাচক দিক থেকে দেখি না। নিলয় ভাইয়ের সঙ্গে কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলেই তার ওপর ভিত্তি করে নতুন কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

ওটিটিতে আপনাকে দেখা যায় না কেন?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : যাঁরা ওটিটিতে নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের কিন্তু ওটিটিতেই বেশি দেখা যায়—মোশাররফ ভাইয়ের মতো ব্যতিক্রম ছাড়া। এখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে পরিচয় নেই, তাই হয়তো তাঁদের ভাবনায় থাকি না। তবে কিছু প্রস্তাবও এসেছে, কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। আর সত্যি বলতে কোনো সিন্ডিকেটের বিষয় নয়, এখানে যে কাজ করতেই হবে সে ইচ্ছা জন্মায়নি কখনো।

প্রশ্ন

কানাডা ঘুরে এলেন

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : বিরতিটা খুব দরকার ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত কাজে ছিলাম, প্রতিদিন ভোরে বের হয়ে মাঝরাতে বাসায় ফেরা—এই রুটিনে নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম। কানাডায় গিয়ে বুঝতে পারলাম অনেক বেশি কাজ করে ফেলেছি। এ বিরতিতে অনেক কিছু শিখেছি, নিজেকে ও পরিবারকে সময় দেওয়া খুব জরুরি। এবার কাজে ফিরেও চেষ্টা করছি ছোট ছোট ব্রেক নেওয়ার। প্রতিদিন টানা শুট বা লেট নাইটের চাপ কমাচ্ছি। মাঝে মাঝে এক বা দুই বা তিন-চার দিন বিরতি নিচ্ছি। এটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি। এই বিরতিটা আমাকে সতেজ করেছে, নতুন করে কাজে ফিরে আসার শক্তি দিচ্ছে। এখন বুঝতে পারছি, কাজের সঙ্গে নিজের জন্য সময় দেওয়া এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া কতটা জরুরি।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

কেটি পেরি আর ডুয়া লিপার কনসার্ট কেমন লাগল?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : দুইটা ড্রিম কনসার্ট, সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ। তবে কনসার্টের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর ছিল পুরো ট্রিপটা। বাঞ্জি জাম্পিং, জিপ লাইনিং, একেকটা রাজ্য চষে বেড়িয়েছি। বাঞ্জি জাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতা দারুণ; ২৫০ ফিট উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ার সময় সত্যিই রোমাঞ্চ আর ভয় কাজ করেছিল। বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল—আমি সাধারণত খুব সাহসী নই, কিন্তু ভাইয়া সঙ্গে থাকায় কোনো চিন্তা ছাড়াই লাফ দিয়েছি। কনসার্ট আর অ্যাডভেঞ্চার—সব মিলে ‘হোল প্যাকেজ’ অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন

অবসর কীভাবে কাটান?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : অবসর সময় অনেকভাবে কাটাই। বাসায় থাকলে বিড়াল আর পাখিদের সঙ্গে সময় কাটে, বই পড়ি, সিনেমা দেখি। আব্বু-আম্মুর সঙ্গে আড্ডা দিই। ঘর পরিষ্কার ও সাজাতে পছন্দ করি—রুমের লে-আউট চেঞ্জ করি, অর্গানাইজড রাখি। শুটিং চলাকালীন ঘর অগোছালো হয়ে যায়, অবসরে সেটা ঠিক করি। রান্নাতেও মাঝে মাঝে হেল্প করি। বিভিন্ন তথ্যচিত্র, টিকটক ভিডিও আর পডকাস্ট শুনি। যেমন মেল রবিন্সের পডকাস্টে জীবন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক জরুরি আলোচনা থাকে।

প্রশ্ন

এই যে বলছিলেন সব গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। জীবন গুছিয়ে নেবেন কবে?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : জীবন পুরোপুরি কখনোই গোছানো যায় না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দিকের দায়িত্ব ও সম্পর্ক বদলায়—প্রতিটি বয়সে আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ আসে। বর্তমানে আমি মূলত ক্যারিয়ার, বাবা-মা এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক সামলাচ্ছি। কিন্তু এগুলো ঠিকভাবে গোছানো গেলেও নতুন কোনো জায়গা থেকে আবার জটিলতা আসে। তাই জীবন সব সময়ই চলমান ও অনগোইং প্রসেস, যা কখনোই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। আমি চাই নিজেকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে, কিন্তু পুরোপুরি ‘পরফেক্টলি’ গোছানো সম্ভব নয়।

বড় ভাইয়ের সঙ্গে কেটি পেরির কনসার্টে হিমি
প্রশ্ন

জানতে চাচ্ছিলাম বিয়ে করছেন কবে?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি : এখন বিয়ে বা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করার কোনো প্ল্যান নেই। মনে করি সবকিছুই সঠিক সময়ে হওয়া উচিত। বর্তমানে এটাই আমার লাইফের প্রধান ফোকাস নয়, তাই এখন কোনো তাড়াহুড়া নেই। সময়ই সব বলে দেবে! (হাসি)