সাদিয়া আয়মান। খালেদ সরকার
সাদিয়া আয়মান। খালেদ সরকার

মনে হচ্ছে, বছরের সেরা সময় পার করছি

তিন বছর ধরে অভিনয় করছেন সাদিয়া আয়মান। টেলিভিশন নাটক, ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্র দিয়ে এবারের ঈদ নিজের করে নিয়েছেন এই তারকা। তানিম নূরের সিনেমা ‘উৎসব’ ও অমিতাভ রেজার সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’য় অভিনয়ের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। সাফল্য কেমন উপভোগ করছেন, কাজের প্রস্তুতি কেমন ছিল, আগামীর পরিকল্পনা কী—এসব জানতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো

প্রশ্ন

‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ আর ‘উৎসব’—সিরিজ ও সিনেমা দুটিতেই আপনার অভিনয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুটিতে আপনার চরিত্র দুই ধরনের। চরিত্রগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে যদি বলেন...

সাদিয়া আয়মান: একটি সিনেমা, অন্যটি সিরিজ, চরিত্রও দুই ধরনের; প্রস্তুতিও সেভাবে নিতে হয়েছে। ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজের প্রস্তাব অনেক আগেই পাওয়া, আগে শুটিংও হয়েছে। তাই সেটারই প্রস্তুতি আগে নিতে হয়েছে, শারীরিক  ও মানসিক—দুটোই। চরিত্রের ভাবনা তো আছেই। শুটিংয়ের আগে ওজন বেড়ে গিয়েছিল, তাই কমানোর মিশন শুরু করি। ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজের সুন্দরী চরিত্র একরকম চঞ্চল, দুষ্টু; একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আবার উচ্চাকাঙক্ষীও। তবে ওর লক্ষ্য হচ্ছে, মায়ের কাছে যাবে, বুঝতেও দেয় না। শুরু থেকে বোঝাও যায় না। এটা বোঝা যায়, মেয়েটার মধ্যেও আবেগ আছে, যা লুকিয়ে রাখতে পারে। খুব গভীরতাসম্পন্ন একটা চরিত্র। শেষের দৃশ্যটা করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পুরো সিরিজে চরিত্রটা এক রকমের ছিল, শেষের দিকে তা পুরোপুরি পাল্টে যায়। আবেগ লুকিয়ে রেখে সংলাপ দেওয়া, চরিত্রের উপস্থাপন কঠিনই হয়। এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে যাওয়টা...। প্রস্তুতি বলতে পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আমি, আমরা সবাই মহড়া করি। কয়েকবার পুরো টিমের বসা হয়। চরিত্রের লুক তৈরি করে অন ক্যামেরায়ও কাজ করি। সব মিলিয়ে সুন্দর প্রি–প্রোডাকশন ছিল। এমনিতে অমিতাভ ভাইয়ের প্রি–প্রোডাকশন খুবই দারুণ, শুটিংয়ে গিয়ে নতুন করে কিছুই ভাবতে হয় না।

‘উৎসব’ নিয়ে যদি বলি, ২০২৪ সালের নভেম্বরে কাজটির প্রস্তাব আসে, সিদ্ধান্ত নিই কাজটা করব। তাই অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে দিই। ‘উৎসব’ নিয়ে আমি সিরিয়াস ছিলাম। নব্বইয়ের দশকের চরিত্রের চরিত্র, ঠিকঠাকমতো উপস্থাপন করতে হবে। যদিও ওই সময়টা আমি দেখিনি, জানিও না কিছু। তবে সংলাপ দারুণ ছিল। লুক, কস্টিউম, মেকআপ—সবই নব্বইয়ের দশকের মতো ছিল। আমি শুধু অভিনয় করে গেছি। জেসমিন চরিত্র ওই সময়কার একজন ধীরস্থির মেয়ের, আবার একদম বোল্ড—যার একটা লক্ষ্য আছে, যা সে অর্জন করতে চায়। স্বামীর কাছে বড় ধরনের ধোঁকা পেয়ে সে যে ওই পরিবারে থাকবে, সে রকম মেয়েও নয়। জেসমিন চরিত্রকে আমি কোনো না কোনোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। মনে হয়েছে, কোনো না কোনোভাবে এ চরিত্রের মূল্যবোধ ও চিন্তাধারা অনেকটাই আমার সঙ্গে যায়। এরপর আমি আমার মতো করে ভেবেছি এবং অভিনয়টা করে গেছি।

‘উৎসব’ ছবিতে জাহাঙ্গীর ও জেসমিনের দুই বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌম্য জ্যোতি, জাহিদ হাসান এবং সাদিয়া আয়মান ও আফসানা মিমি।
প্রশ্ন

ওজন কমানোর কথা বলছিলেন...

সাদিয়া আয়মান: আমি সব সময় মোটামুটি ফিট ছিলম। কিন্তু গত বছরের এপ্রিল-মেতে আমার ওজন বেড়ে যায়। ওই সময়ে খাবারের চাহিদাও বেড়ে যায়। নাটকে আমরা যারা কাজ করি, শুটিংয়ের মানসিক চাপ থাকে, যা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপের সময়টায় খাবারের চাহিদাও বেড়ে যায়। এ কারণে তখন আমার ১২-১৫ কেজি ওজন বেড়ে যায়। যখন দেখলাম সামনে এত ভালো ভালো কাজের কথা চলছে, নিজেরও একটা দায়িত্ব আছে পর্দায় নিজেকে ঠিকমতো উপস্থাপন করার। ভক্তরাও বলছিল, তারা সাদিয়া আয়মানকে মিস করে। ভাবছিলাম, কীভাবে ফিরে আসা যায়। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নাটকের কাজ করিনি। এই সময়ে ফিটনেস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করি। জিম করেছি, খাবারে পরিবর্তন এনেছি। তবে কঠিন ডায়েট করিনি। শুধু লাইফস্টাইল বদলে ফেলেছি। ১২-১৩ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলি।

সাদিয়া আয়মান।
প্রশ্ন

আপনি তো নব্বইয়ের দশকে বড় হননি, সে সময়ের বিষয়গুলোর সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিলেন?

সাদিয়া আয়মান: নব্বইয়ের দশকের শেষে জন্ম, ১৯৯৯ সালে। আমার বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। কাজিনরা আমার চেয়ে যারা ৮-৯ বা ১০ বছরের বড়, তাদের দেখতাম স্টাইল করে স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে যেত। খুব ভালো লাগত। ভাবতাম, বড় হলে আমিও এ রকম ড্রেস পরব, স্টাইল করব। বলা যায়, তাদের চলাফেরা কেমন, কীভাবে কথা বলে, তা অনেকটাই আমার জানা। কিন্তু অভিনয়ের সময় তা ফুটিয়ে তোলা বেশ টাফ। চরিত্রটা মাথায় নিয়েছি, মনে হয় এ রকম। জেসমিনের চরিত্রের যে চারপাশ, গভীরতা, চিন্তাধারা ও মানসিকতা—আমি আমার মতো করে ভেবেছি। কারণ, অভিনয় তো কারও থেকে কপি করা যায় না। অনুপ্রেরণা থাকে, সেটা এক জিনিস। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, কাউকে অনসুরণ না করে অভিনয় করব। সেটাই হবে আমার অভিনয়ের নিজস্বতা। এখন মানুষ এটাকে গ্রহণ করেছে, ভালোবেসেছে, এটাই অনেক বড় পাওয়া। আমি একটু ভয়েই ছিলাম, এই চরিত্র কি আসলেই নব্বইয়ের দশকের মতো হলো? বড় চরিত্রের জেসমিন হিসেবে অভিনয় করেছেন আফসানা মিমি আপা, তাঁর সঙ্গে আমার কোনো দৃশ্য ছিল না, তাই চ্যালেঞ্জ ছিল ফুটিয়ে তোলার।

সাদিয়া আয়মান।
প্রশ্ন

কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে এবারই আপনার সেরা ঈদ মনে হচ্ছে?

সাদিয়া আয়মান: সত্যি বলতে, এ বছরের ঈদ ওয়ান অব দ্য বেস্ট। আমার প্রথম নাটক মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘ফুলের নামে নাম’, ২০২২ সালে মুক্তি পায়। কোরবানির ঈদে যখন নাটকটা মুক্তি পায়, অপরিচিত সবাই আমাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি করে। ওইবার মনে হয়, সে বছরের ঈদ সেরা। তখন ফেসবুকে লিখেছিলাম, ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। পরের বছর আমার অনেক নাটক মুক্তি পায়, বলা যায় পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হিসেবে। ওই ঈদেও আমাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়, প্রশংসা পাই। সেই ঈদও আমার জন্য ভালো লাগার ছিল। আবার ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরে ‘কাজলরেখা’ মুক্তি পায়, ওই বছর নাটকও মুক্তি পায় ‘তখন যখন’। নাটকে আমার চরিত্রের নাম ছিল রাহা। কাজলরেখা ও রাহা চরিত্র নিয়েও অনেক আলোচনা হয়। একদিকে সিনেমা, আরেক দিকে নাটক—সব মিলিয়ে সেরা ঈদ মনে হয়েছিল। এ বছরও টেলিভিশনে নাটক, ওটিটিতে ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’, সিনেমা হলে ‘উৎসব’—সব মিলিয়ে সেরা লাগছে। মনে হচ্ছে, বছরের সেরা সময় পার করছি। আমার অভিনয়জীবনে ওয়ান অব দ্য বেস্ট টাইম যদি বলি, এটা আরকি। শুরু থেকে যেভাবে প্রতিবছরই আমার জীবনে ঈদ ভালোভাবে আসে, আশা করছি ভালো কাজ দেওয়ার, প্রতিটি ঈদ যেন এভাবে উদ্‌যাপন করতে পারি।

প্রশ্ন

গত বছর ‘কাজলরেখা’তেও আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল, কিন্তু এরপর আর নতুন সিনেমায় দেখা যায়নি কেন?

সাদিয়া আয়মান: ২০২১ সালে ‘কাজলরেখা’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হই। পরের বছর শুটিং করি। গত বছর ছবিটি মুক্তি পায়। গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাইয়ের মতো নামকরা পরিচালকের সঙ্গে যখন আমি কাজ করি, তখন আমি তেমন কেউ নই। আমি সব সময় চাই, কাজের মান যেন বজায় থাকে। ‘কাজলরেখা’ খুবই মানসম্পন্ন একটি কাজ। যদি বলি, এ ছবি অনেক হিট হয়নি, কালেকশনও আসেনি, কিন্তু কাজের মান অনেক ভালো। অনেক আলোচনা হয়েছে। এ সিনেমা নিয়ে আমরা রটারড্যাম চলচ্চিত্র উৎসবেও গিয়েছিলাম, সেখানেও বিদেশি ফিল্মমেকারদের কাছ থেকে প্রশংসা পাই। ‘কাজলরেখা’ মানসম্মত সিনেমা বলেই আমার মনে হয়েছে, এর পর থেকে কাজ করলে একটু ভালো কাজই করব। ভালো গল্প, ভালো চরিত্র, ভালো নির্মাতার মাধ্যমে আবার আসব। গত বছরের শেষ দিকে ‘উৎসব’ ছবির প্রস্তাব পাই। মনে হয়েছে, এটাই দ্বিতীয় ফিল্ম হিসেবে থাক। এটাও ঠিক ‘কাজলরেখা’র পর অনেক সিনেমার প্রস্তাবও পাই। এলেও তো সব করা যাবে না, যেহেতু বড় পর্দা। মানুষ বড় পর্দার কাজ মনেও রাখে অনেক দিন। পয়সা খরচ তারা সিনেমা হলে আমাকে দেখতে আসবে, তাই ভালো গল্প, ভালো চরিত্র, ভালো অভিনয় যেন উপহার দিতে পারি, সে চিন্তাই থাকে।

সাদিয়া আয়মান। শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

সিনেমা নিয়ে ভাবনা কী? নাটকের কাজ কি কমিয়ে দেবেন?

সাদিয়া আয়মান: যেহেতু ‘উৎসব’ ভালো সাড়া ফেলেছে, যদি ভালো গল্প পাই, আবার নতুন সিনেমায় যুক্ত হবে। তখন আমার টিমের যদি মনে হয় সিনেমার প্রস্তুতির জন্য নাটকের কাজ কমিয়ে দিতে হবে, করব। ভালো কাজের জন্য কিছু ছাড় দিতে হয়। আবার যদি দেখি সিনেমায় ভালো গল্প পাচ্ছি না, সচরাচর হয়ও না, অপেক্ষা করতে হয়, সেটা লাগলে করব। নাটক শুরু থেকে আমি কমিয়েই করি। গত এক বছরে মনে হয় হাতে গোনা কয়েকটা করেছি। নাটকেও ভালো গল্প খুঁজি। আমি একটু মানের দিকে বেশি ফোকাসড। সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একেবারে কমিয়ে দেব, করব না, তা নয়।

ঘুরতে পছন্দ করেন সাদিয়া আয়মান। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

আপনি প্রচুর ঘোরাঘুরি করেন। ঘোরাঘুরি কাজ বা শারীরিক বা মানসিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলে বলে আপনার মনে হয়?

সাদিয়া আয়মান: টানা কাজের পর আমাকে বিরতি নিতে হয়। নিজের বিশ্রাম ও পড়াশোনার জন্য। গত বছর ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’র কাজ শেষে ঘুরতে গিয়েছিলাম, মালয়েশিয়ায়। এরপর এসে সিনেমার কাজে ঢুকে পড়ি। টানা কাজ শেষ করে আমি আবার ঘুরতে চলে যাই শ্রীলঙ্কায়। আমি মনে করি, ঘোরাঘুরি মানুষকে একটু প্রশান্তি দেয়। একটা চরিত্রে যখন অনেক দিন থাকি, মনে হয়, যদি ঘুরে আসি, তা দেশে হোক বা দেশের বাইরে হোক, মনটা সতেজ হয়। নতুন করে আবার ভাবতে পারি। সমুদ্র ও পাহাড়ে ঘোরাঘুরি আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। নতুন উদ্যমে কাজে ফেরা শক্তি দেয়। বাইরে গেলে বই পড়তে পারি, সিনেমা দেখতে পারি; এগুলো অনেক কাজে আসে। এ জন্যই ঘুরতে ভালো লাগে।

সাদিয়া আয়মান।
প্রশ্ন

ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে নানান ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। আপনি ঘুরতে গিয়ে এমন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, যা মনে পড়লে রোমাঞ্চিত হন?

সাদিয়া আয়মান: গত বছর নেদারল্যান্ডসে রটারড্যাম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘কাজলরেখা’ নিয়ে যাই। বাংলাদেশ থেকে কাতার ট্রানজিট হয়ে ১৮ ঘণ্টায় নেদারল্যান্ডসে যাই। এরপর আমস্টারড্যাম শহর থেকে রটারড্যাম শহরে যাই ট্রেনে চড়ে। তখন অনেক কনকনে শীত। যাওয়ার আগে শুনেছিলাম শীত, কিন্তু এতটা কল্পনাও করতে পারিনি। যখন স্টেশন থেকে বের হই, তখন মনে হচ্ছিল, গায়ে বরফের কাঁটা বিঁধছে। স্টেশন থেকে বের হয়ে লাগেজে যত গরম কাপড় ছিল, খুলে সব পরলাম। তখন অনেক রাত, এত রাতে উবারও পাচ্ছিলাম না। নতুন একটা শহর, ইউরোপের একটা শহর, সেখানে একটু ভাষাগত সমস্যা হয়। ইংরেজিতেও তাঁরা কথা বলেন না—কেউ ডাচ, কেউ জার্মান ভাষায় কথা বলেন। তাই কথা বলতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। আমি একটা হোস্টেল নিয়েছিলাম। কারণ, আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, যদি কখনো ইউরোপের একা ট্রাভেল করি, হোস্টেল নেব। সেখানেই থাকব, সেটাই করেছি। স্টেশন থেকে ৮-১০ মিনিটের হাঁটাদূরত্ব ছিল। একজন ডাচ নারী ছিলেন, তিনি খুবই সহযোগিতা করেছেন। সেই রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় তিনি লাগেজ টেনে নিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেন। এরপর হেঁটে চলে যাই। হোস্টেল খুঁজে বের করি। সেই রাতের কথা মনে পড়ে। কনকনে ঠান্ডায় হাত-পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যায় অবস্থা। এত ঠান্ডা আমার জীবনে কখনো পাইনি। পরদিন থেকে সব সয়ে যায়। পরে আমি ফ্রান্সে যাই। লন্ডন থেকে দেখা করতে আমার চাচি আসেন। সেখানে আমার চাচি ও কাজিনদের সঙ্গে দেখা। তখন সবাই মিলে পুরো এক দিন অনেক মজা করেছি। প্যারিস থেকে নেদারল্যান্ডসে আসব, ছয় ঘণ্টা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেটাও অনেক রোমাঞ্চকর ছিল। একা একা ছিলাম। নানান ধরনের মানুষ দেখলাম, অনেকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। ইউরোপের ভ্রমণ আমার এই ছোট্ট জীবনের অন্যতম মজার ঘটনা। নেদারল্যান্ডস থেকে বেলজিয়াম, বেলজিয়াম থেকে ফ্রান্স, এরপর ফ্রান্স থেকে নেদারল্যান্ডস হয়ে ঢাকায় ফিরি। আমি যখন দেশে ফিরে আসি, তখন মনে হয়েছে, একটা চ্যালেঞ্জ পরিপূর্ণ করেছি। এটা ভেবে রোমাঞ্চিত হই। আবার যদি সুযোগ হয়, ইউরোপে একা একা ঘুরতে চলে যাব।

সাদিয়া আয়মান।
প্রশ্ন

ঈদের ছোট পর্দায়, সিনেমা বা ওটিটিতে দেশি-বিদেশি কী কাজ দেখলেন? কোনটা ভালো লাগল? কেন লাগল?

সাদিয়া আয়মান: প্রথম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত হল ভিজিটসহ ‘উৎসব’–এর প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই কারও কাজ দেখা হয়নি। নিজের কাজই দেখেছি, টিমের সঙ্গে বসে হলে সিনেমা। সিরিজ দেখেছি। আজ (মঙ্গলবার) ‘তাণ্ডব’ দেখার পরিকল্পনা আছে, এরপর ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ দেখব। এরপর নাটক দেখা শুরু করব।

প্রশ্ন

নতুন কাজকর্মের খবর বলুন।

সাদিয়া আয়মান: সত্যি বলতে, নতুন কোনো কাজ নিয়ে কথা হয়নি। মাত্রই তো দুটি বড় কাজ মুক্তি পেল, আমি এই সময়টা বেশ উপভোগ করছি।

সাদিয়া আয়মান।
প্রশ্ন

মানুষমাত্রই স্বপ্ন দেখে। কারও স্বপ্ন সহজেই পূর্ণ হয়, আবার কারও অনেক দেরিতে। আপনি এমন কোনো স্বপ্ন ছোটবেলায় দেখেছিলেন, যা পূরণ হয়েছে বা হয়নি? সেটা কী?

সাদিয়া আয়মান: ধরাছোঁয়ার বাইরের কোনো স্বপ্ন এই জীবনে দেখিনি। ছোটবেলায় নাচ শেখার খুব ইচ্ছা ছিল, পেইন্টিং করারও শখ ছিল। ছোটবেলায় আঁকাআঁকি করতে খুব পছন্দ করতাম। ড্রয়িংয়ের জন্য অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। স্কুল, কলেজ ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে। এখনো পেইন্টিং শেখার খুব ইচ্ছা। নাচ তো অভিনয়ের জন্য মাঝেমধ্যে করা হয়। এমনিতে আপাতত আমার জীবনের স্বপ্ন, ভালো কাজ করব, মানুষের ভালোবাসায় থাকব। মানুষের ভালোবাসা অনেক অনুপ্রাণিত করে, শক্তি দেয়, সাহস জোগায় ভালো কাজ করার। এ বছরের ঈদে তা নতুনভাবে উপলব্ধি হয়েছে। মায়ের বয়সী অনেকের কাছ থেকে আদর পেয়েছি, দোয়া করেছেন, এটা সারা জীবন ধরে রাখতে চাই।