ইদানীং ‘গোলাম মামুন’ ও ‘দাগি’র মতো ক্রাইম বা ড্রামাধর্মী কাজের জন্য আলোচিত হলেও শিহাব শাহীনের পরিচিতি রোমান্টিক কাজের জন্যই। এর আগে চরকিতে মুক্তি পাওয়া ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’র দর্শকদের সেটা ভালোই মনে থাকার কথা। মিষ্টি প্রেমের গল্পটি দর্শকেরা পছন্দ করেছিলেন। এবার একই প্ল্যাটফর্মে এসেছে তাঁর আরেকটি ওয়েব সিনেমা ‘তোমার জন্য মন’। ৫ নভেম্বর মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে আছেন এ সময়ের আলোচিত জুটি ইয়াশ রোহান ও তানজিম সাইয়ারা তটিনী। কেমন হলো শিহাব শাহীনের সিনেমাটি?
একনজরেসিনেমা: ‘তোমার জন্য মন’ধরন: রোমান্টিক ড্রামাচিত্রনাট্য ও পরিচালনা: শিহাব শাহীনঅভিনয়: ইয়াশ রোহান ও তানজিম সাইয়ারা তটিনীস্ট্রিমিং: চরকিরানটাইম: ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট
গল্পের শুরু ২০১৯ সালে। কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে ঘটনাচক্রে রওনকের (ইয়াশ রোহান) সঙ্গে পরিচয় হয় পিউর (তটিনী)। পরিচয়ের শুরুটা ঠিক ‘যথাযথ’ না হলেও ঘুরতে গিয়ে দুজন ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। বন্ধুত্ব গড়ায় ভালোবাসায়। একপর্যায়ে দুজন সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার। রওনকের পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় পিউর বাসায়। কিন্তু এখানেই বিপত্তি বাধে। বের হয়ে আসে রওনকের এমন এক পারিবারিক পরিচয়, যা কিনা সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রওনক ও পিউ কি এক হতে পারে, নাকি বিচ্ছেদের পথেই গড়ায় তাদের এ সম্পর্ক?
মাত্র ৮০ মিনিটের একটা ছোট্ট সিনেমা ‘তোমার জন্য মন’। কিন্তু নির্মাতা যখন শিহাব শাহীন, তখন এটুকু সময়ই যেন যথেষ্ট! প্রথম দৃশ্য থেকেই দর্শক গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যেও কাহিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সে জন্য তাঁর ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। মোটাদাগে গল্পে তেমন নতুনত্ব নেই, কিন্তু চিত্রনাট্য ও নির্মাণের জোরে শেষ পর্যন্ত উতরে গেছে।
রওনকের চরিত্রে ইয়াশ রোহান ভালো। নিজের অনুভূতির প্রতি সৎ থেকে চরিত্রের সংযত ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে। পিউ চরিত্রে তটিনীও চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করেছেন। প্রথম দিকে ‘গ্ল্যামারগার্ল’, পরে খোলস ভেঙে তিনি যেভাবে চরিত্রের ভঙ্গুরতা ফুটিয়ে তুলেছেন, তা দর্শককে ছুয়ে যায়। পর্দায় ইয়াশ–তটিনীর রসায়নও উপভোগ্য ছিল।
তবে পার্শ্ব চরিত্রগুলো ছিল একেবারেই সাদামাটা। বেশ কিছু চরিত্র কিংবা ঘটনাকে এখানে আরেকটু বিস্তারিতভাবে দেখানোর সুযোগ থাকলেও সেটি প্রাধান্য পায়নি। এটি সিনেমার বড় দুর্বলতা। মিষ্টি প্রেম, ইয়াশ–তটিনীর রসায়ন উতরে গেলেও সিনেমায় গভীরতা নেই। রওনক ও পিউর সম্পর্কের দিকটা আরেকটু ভালোভাবে দেখালে ভালো হতো। বিশেষত যশোরে ফিরে যাওয়ার পর তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার কোনো দৃশ্যই নেই। রওনকের সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবে যখন পিউ রাজি হয়ে যায়, একটু চমকেই যেত হয় বৈকি।
সিনেমায় রাজনীতির একটা পটভূমি থাকলেও প্রায় জনমানবহীন মাঠে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ চোখে পড়ে না। আবার পিউর হবু বরকে উপস্থাপন যেন একটু বেশিই ব্যঙ্গাত্মক লাগে, যা গল্পের সাবলীল গতির সঙ্গে গেল কি? শেষ দিকে কোভিড মহামারির সময়কে যেন দেখানো হয়েছে খুব হালকা ধাঁচে। যে রোগে দেশের হাজারো মানুষ মারা গেছেন, সিনেমায় এ সামাজিক বার্তাটা কি একটু বেশি হালকা হয়ে গেল?
চিত্রগ্রাহক কামরুল ইসলাম, সম্পাদক লিওন রোজারিও ও কালারিস্ট চিন্ময় রায়ের কাজ মন্দ নয়; শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কালার টোন ছিল ধারাবাহিক। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে সুন্দর সময় যেমন মানিয়ে গেছে, তেমনি কিছুটা নিষ্প্রভ রং ব্যবহার করা হয়েছে দুঃখের দৃশ্যগুলোয়। খৈয়াম সানুর আবহসংগীতও চলনসই। তবে সিনেমায় ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ থেকে নেওয়া ইমন চৌধুরী ও জেফারের কণ্ঠে ‘গাঁথো গাঁথো সুন্দর কন্যা, মালতীর মালা’ শুনতে ভালো লাগে।
‘তোমার জন্য মন’ অবশ্যই ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’র মতো হয়নি, তবে একবার দেখার জন্য ৮০ মিনিটের সিনেমাটি খুব খারাপও নয়।