Thank you for trying Sticky AMP!!

আশায় বুক বাঁধতে পারিনি

আঁখি আলমগীর। ছবি: ফেসবুক থেকে

আমাদের বাড়ির সামনে থেকে সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যুতের তার নিতে হবে। প্রকৃতিকে বাঁচিয়েও কিন্তু উন্নয়ন করা যায়। সেটা আমরা ভাবিনি। পৃথিবীর পরিবেশের কোনো ভারসাম্য নেই। তাই আমার মনে হয় করোনা প্রকৃতির প্রতিশোধ। আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ক্ষতি করছি। তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য রক্ষায় মনোযোগী হইনি। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, বন উজাড় করা, গাছাপালা নিধন করেই গেছি।

আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। কখনো বুঝিনি উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে। শিক্ষিত সমাজ, বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যে কত প্রয়োজন, সেটা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। এখন সেটা গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। করোনার এই সংকট কেটে যাবে আজ, কাল বা পরশু কোনো একদিন। এরপর থেকে নতুন করে যখন জীবন শুরু হবে, তখন আমাদের চিহ্নিত হয়ে যাওয়া সমস্যাগুলোয় সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।

আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি। কারণ, এটা এমন অসুখ, হ্যান্ডশেক করলে ছড়ায়, পাশাপাশি বসলে ছড়ায়! কী আশ্চার্য। মানুষ এই অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ করবে? উপায় দেখছি না বলেই দিশেহারা বোধ করছি। তারপরও বাসায় আছি, বাসাতেই থাকি। অপেক্ষায় আছি, কবে করোনামুক্ত একটা সকাল পাব। মনে মনে ভাবছি, একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনব, করোনা আর নেই। সৃষ্টিকর্তা করোনা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছেন।

যে সুসংবাদের আশায় আছি, সেটা এখনো পাইনি। আশায় বুক বাঁধতে পারিনি। ব্রিটেনে ভ্যাক্সিনেশনের টেস্ট শুরু হয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই দেখছি না। আমাদের দেশেও তো আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শুরুর দিকে টেলিভিশনে খবর দেখতাম। এখন আর ভালো লাগে না।

আমরা একটা বন্দিজীবন পার করছি। এই জীবন নিয়ে কতক্ষণ গান করব, কতক্ষণ টেলিভিশন দেখব, কতক্ষণ বাচ্চাদের সঙ্গে সময় পার করব! এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চাদের মন কতক্ষণ ভালো থাকবে? একটা সময় অস্থির হবেই। ওদের স্কুল আছে, পড়াশোনা আছে। আমার মেয়ে এবার এ লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার কথা। সে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল যে মে মাস থেকে পরীক্ষা দেবে। এখন সে খুবই হতাশ। কবে পরীক্ষা, কেউ জানে না। আমার মনে হচ্ছে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমাদের বাঁচানোর আর কেউ নেই। আল্লাহ যদি সবাইকে মাফ করে দেন, তাহলে ভাইরাস চলে যাবে। এ ছাড়া এ ভাইরাসকে মারার কোনো অস্ত্র আমাদের হাতে নেই। আর আমরা জানিও না, এটার সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ করব।

করোনাকাল কেটে গেলেও সহসাই গানবাজনা হবে না। হাতেগোনা কয়েকজন বাদে গানের জগতের বেশির ভাগ মানুষই কষ্টে থাকবে। শিল্পী, কলাকুশলীদের মধ্যে অনেকে হয়তো অসুবিধার কথা বলতে পারছে না। তবে আমরা বুঝতে পারছি, অনেকেই এরই মধ্যে সমস্যায় পড়ে গেছে। আমরা যতটা চাকচিক্যময় জীবন যাপন করি না কেন, আমরা যা আয় করি, প্রায় পুরোটাই ব্যয় হয়। অথচ এটি মানুষ বোঝে না। আমাদের দেশের শিল্পীরা কিন্তু টাকার ওপর ঘুমায় না। তারা আয় যেমন করে, তেমনি খরচও আছে তাঁদের। আর বসে খেলে তো রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায়।

আঁখি আলমগীর। ছবি: ফেসবুক থেকে

গার্মেন্টস ও অন্যান্য খাতের মতো সরকারের উচিত আমাদের অঙ্গনের দিকে নজর দেওয়া। শিল্পীরা যেভাবে দেশের নানা দুর্যোগে আন্তরিকভাবে সাড়া দেয়, এই সময়টায়ও তাঁরা নানাভাবে মানুষকে সচেতন করছেন। এই মহাদুর্যোগ কেটে গেলে শিল্পীদের দিকে সরকারের তাকাতে হবে। সংস্কৃতি অঙ্গনের গুণীজন ও কর্তাব্যক্তিদের এ নিয়ে কথা বলা উচিত। প্রণোদনা আদায়ের পর এটি যেন সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃত অর্থে যারা কষ্ট করছে, তাদের কয়েক মাস চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পীদের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। সবাই খেয়াল করলে দেখবেন, এই দুর্যোগে কিন্তু শিল্পীরা ঘরে বসে থাকলেও থেমে নেই। তারা ঘরে বসে গান গেয়ে, কথা বলে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছে। কেউ নানাভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে গোপনে বা প্রকাশ্যে। দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এমনটা করে তারা। ভালোবাসা ছাড়া তারা কিন্তু আর কিছু চায় না।

এ ছাড়া দেশ ও বিশ্বের এই সংকটময় সময়ে সবাইকে সহানুভূতিশীল হতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। সবাই মিলে এই সময়টা পার করতে হবে। এই সময়টা কেটে গেলে কেউ যেন ছেলেমেয়েকে গান শেখাতে ভয় না পায়, সেই আস্থাটুকু তৈরি করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি যেন শেষ হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।