কনসার্টে গান গাইছেন আঁখি আলমগীর
কনসার্টে গান গাইছেন আঁখি আলমগীর

কনসার্টকেন্দ্রিক রোজগার বন্ধ হতে বসেছে

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার কনসার্ট শুরু হয়েছিল। শুরুতে সীমিত পরিসরে, তারপর উন্মুক্ত জনপরিসরে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আবার স্থগিত ও বাতিল হতে শুরু করে কনসার্টগুলো। কেননা, কনসার্টে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় না। এতে কনসার্টকেন্দ্রিক রোজগার প্রায় বন্ধ হতে বসেছে আয়োজকদের। খোলা জায়গায় দম ফেলা ও আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

গত বছরের লকডাউনের পর পুনরায় কনসার্ট শুরু হয়, বিশেষ করে মিলনায়তনগুলোতে

গত বছরের লকডাউনের পর পুনরায় কনসার্ট শুরু হয়, বিশেষ করে মিলনায়তনগুলোতে। সীমিত পরিসরের সে আয়োজনগুলোর বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের। দীর্ঘদিন ‘হোম অফিস’ বা ঘরবন্দী কর্মীদের অবসাদ দূর করতে কনসার্টের আয়োজন করেছে অফিস কর্তৃপক্ষ।

এরপর একপর্যায়ে শুরু হয় উন্মুক্ত কনসার্ট। সেসব কনসার্টে গান পরিবেশন করেছে নগরবাউল, মাইলস, সোলস, দলছুট, চিরকুট, কুমার বিশ্বজিৎ, রবি চৌধুরী, মমতাজ, আঁখি আলমগীর, দিনাত জাহান মুন্নী, কনা, কোনাল, কিশোর, রাজিব, সাব্বির, ইমরান, পুলক, মুহিন, লিজা, জলের গানসহ আরও অনেক শিল্পী ও গানের দল।

৫ মার্চ উত্তরা ক্লাবে কুমার বিশ্বজিৎ

তবে সেসব অনুষ্ঠানে গান করে বা উপভোগ করে তেমন তৃপ্ত হতে পেরেছেন কম শিল্পী বা দর্শক। এ রকম বেশ কিছু অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিল্পীদের অনেকেই বলেন, দর্শকদের মুখ দেখা না গেলে গান করেও বিশেষ আনন্দ পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কনসার্টে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন কাজ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করার কথা ছিল এ রকম বেশ কিছু কনসার্ট স্থগিত হয়েছে। মার্চ মাসের অন্যতম বড় আয়োজন ছিল জয় বাংলা কনসার্ট। মহামারি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না বলে সেটা বাতিল করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গাজীপুরে আয়োজিত একটি কনসার্টে গান করার কথা ছিল জেমসের।

গাজীপুরে আয়োজিত একটি কনসার্ট জনতার অতিরিক্ত চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না বলে স্থগিত করা হয়।

জনতার অতিরিক্ত চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আয়োজিত সেই কনসার্ট স্থগিত করা হয়। এর আয়োজক আনজাম মাসুদ জানান, লোকজনের চাপের কথা মাথায় রেখে প্রশাসন সেটি বন্ধ করে দেয়।
এভাবে কনসার্ট বাতিল হলে আয়োজকেরা আয় হারাবেন। এ ছাড়া কনসার্টের জন্য ব্যবহৃত আলো, সাউন্ডবক্স, ডেকোরেটরের মতো অনুষঙ্গভিত্তিক ব্যবসাগুলোও আয় হারাবে। বিকল্প ব্যবস্থায় কী করা যায়? এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন অনুষ্ঠান আয়োজক ও উদ্যোক্তা জানান, একই খরচে কীভাবে অনুষ্ঠানকে দুই ভাগে করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। তাতে জনসমাগম অর্ধেক করে দুই ভাগে অনুষ্ঠানগুলো করার বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।

অবশ্য অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্লুজ কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম জানান, বিকল্প ব্যবস্থায় কনসার্টের আয়োজন করা সম্ভব নয়। এ রকম কোনো পরিকল্পনা তাঁদের আপাতত নেই। তবে অনলাইনে জুতসই কিছু করার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা চলছে।

দেশে কনসার্টের সংস্কৃতি এখনো রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কনসার্ট করা সম্ভব নয়। যদিও তাতে মিউজিশিয়ানরা আয় হারাচ্ছেন। বিকল্প পথ কী হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিকল্প পথ বিশ্বে অনেকেই ভেবেছিলেন। চেষ্টাও করেছেন ইউটিউব কনসার্ট করার, সেটা ততটা সফল হয়নি। ইন্টারনেটে যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ ও টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়া অনলাইনে কনসার্টের আয়োজন সম্ভব নয়।
শাফিন আহমেদ, ভোকাল ও গিটারিস্ট, মাইলস
শাফিন আহমেদ

সাম্প্রতিক লকডাউনের আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি কনসার্টে অংশ নেয় জনপ্রিয় গানের দল মাইলস। দলটির অন্যতম ভোকাল ও গিটারিস্ট শাফিন আহমেদ জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দেশে প্রচুর কনসার্টের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, দেশে কনসার্টের সংস্কৃতি এখনো রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কনসার্ট করা সম্ভব নয়। যদিও তাতে মিউজিশিয়ানরা আয় হারাচ্ছেন। বিকল্প পথ কী হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিকল্প পথ বিশ্বে অনেকেই ভেবেছিলেন। চেষ্টাও করেছেন ইউটিউব কনসার্ট করার, সেটা ততটা সফল হয়নি। ইন্টারনেটে যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ ও টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়া অনলাইনে কনসার্টের আয়োজন সম্ভব নয়।