রবীন্দ্রনাথের গানে মুখর সিরাজগঞ্জ
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা হবে। অপেক্ষায় হাজারো মানুষ। হঠাৎ বেজে ওঠে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’ গানটি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গান দিয়েই তাঁর স্মৃতিধন্য সিরাজগঞ্জে প্রথমবারের মতো শুরু হয় ৩৯তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন। রবীন্দ্রনাথের গানে মুখর হয়ে উঠল সিরাজগঞ্জ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজনে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এর উদ্বোধন করেন ভাষাসংগ্রামী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সৈনিক কামাল লোহানী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিষদের সিরাজগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম, সম্মেলন উদ্যাপন পরিষদ সিরাজগঞ্জের আহ্বায়ক টি এম সোহেল।
প্রদীপ প্রজ্বালনের পর ‘রবিরশ্মি’ শীর্ষক সুবচন পাঠ করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ। প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন তুলে ধরে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘রবীন্দ্রসংগীত না শুনে আমার একটা দিনও কাটে না। যে মানুষ রবীন্দ্রসংগীত উপভোগ করতে পারে না, তার মতো দুর্ভাগা আর নেই। দুঃখ হয়, নতুন প্রজন্ম তাদের পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়া কবিগুরুর গল্প-কবিতাগুলো ছাড়া তাঁর অন্য কোনো লেখা তেমন পড়ে না।’
বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সাধনা চলেছে সিদ্ধির পথে। শুরুতে এই সংগঠনের কাজ ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। এখন তা সারা দেশে ছড়িয়েছে। সংস্কৃতিচর্চা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। সমাজের অনাচার দূর করতে সংস্কৃতি একটি আশ্রয়। সেই আশ্রয়ে সারা দেশের মানুষকে আমরা এক মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই।’
আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গানে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় সংগীত পরিবেশন করে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিরাজগঞ্জ ও স্থানীয় সবুজ কানন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে সহস্রাধিক রবীন্দ্র অনুরাগী এ সম্মেলনে যোগ দেন। গাজীপুর জেলা রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সদস্য সামিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রাণের টানে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমরা অনুষ্ঠানে এসেছি। প্রতিবছর সম্মেলনের এ সময়ের অপেক্ষায় থাকি।’ ঢাকা থেকে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ বছর সিরাজগঞ্জে সম্মেলন হওয়ায় আমরা বেশ উপভোগ করছি।’
এ সম্মেলনে দেওয়া হবে রবীন্দ্রপদক-২০২০। এ বছর পদক পাচ্ছেন দেশের প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফাহমিদা খাতুন। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাত শতাধিক শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক। তিন দিনের এ সম্মেলন শেষ হবে রোববার।
১৯৭৮ সালে জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ নামে যাত্রা করে এ সংগঠন। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের আয়োজন করে। পরের বছর দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্যে সংগঠনের নাম বদলে করা হয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ। সংগঠনের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে ‘বাঙালির আপন সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসার’। নাম পরিবর্তন হলেও অব্যাহত রয়েছে স্মরণীয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী প্রয়াত জাহিদুর রহিমের স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াস ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি-পদক’ পুরস্কার প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন
-
শেয়ারবাজারে লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
-
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সংসদে যা জানালেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
-
মন্ত্রী–এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় শাস্তি হবেই: ওবায়দুল কাদের
-
ছেলের পক্ষে প্রচারণার অভিযোগে শাজাহান খানকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
-
গণতন্ত্রের ঘাটতি বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে