‘মহানায়কের গান’–এর দ্বিতীয় মৌসুমের রেকর্ডিংয়ে তাহ্সিন ফারজানা তিলোত্তমা। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে
‘মহানায়কের গান’–এর দ্বিতীয় মৌসুমের রেকর্ডিংয়ে তাহ্সিন ফারজানা তিলোত্তমা। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

মেয়ের কণ্ঠে বাবার সিনেমার গান

‘রেকর্ড প্লেয়ারে পুরোনো দিনের গান শুনতেন বাবা, সেই গান শুনে আমাদের ঘুম ভাঙত। গান নিয়ে বাবার সঙ্গে খুবই সুন্দর স্মৃতি ছিল,’ বাবা প্রয়াত অভিনেতা বুলবুল আহমেদকে নিয়ে বলছিলেন মেয়ে ও সংগীতশিল্পী তাহ্‌সিন ফারজানা; তিলোত্তমা নামে পরিচিত তিনি।

অভিনেতা বুলবুল আহমেদ। ফাইল ছবি

এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে বুলবুল আহমেদ অভিনীত সিনেমার অনেক গান। কালজয়ী তেমনই কয়েকটি গান কণ্ঠে তুলেছেন তিলোত্তমা। বুলবুল স্মরণে ‘মহানায়কের গান’–এর দ্বিতীয় মৌসুম নিয়ে এসেছে সিলন টি। এই মৌসুমে থাকছে মোট ছয়টি গান। অভিনেতার ৮৪তম জন্মদিনে আজ সন্ধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে মৌসুমের প্রথম গান ‘দুটি মন’। সিলন টির ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশের পর সাড়া ফেলেছে। ‘সঙ্গিনী’ সিনেমার মূল গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার আজাদ রহমান।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিলন টি লিখেছে, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সত্তর-আশির দশকের “মহানায়ক” ছিলেন বুলবুল আহমেদ। তাঁর মেয়ে তিলোত্তমা আমাদের চলচ্চিত্র জগতে তাঁর বাবার কর্মের অবিস্মরণীয় অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি সংগীত শ্রদ্ধাঞ্জলি উপহার দিতে যাচ্ছেন।’

বাবার সঙ্গে তাহ্সিন ফারজানা তিলোত্তমা

‘মহানায়কের গান’ নিয়ে তিলোত্তমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যা সম্মান পেয়েছি, সবই বাবার কারণে। আমি নিয়মিত শিল্পী নই। শখ করে গান গাই। ওনারা (সিলন টি) যে আয়োজনটা করেছেন, এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা আমার জন্য। অনেক সুন্দর করে স্টেজ সাজিয়েছেন, বড় করে আব্বার ছবি রেখেছেন। ওনারা প্রথম সিজনে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। ভালো সাড়া পেয়েছেন দেখে দ্বিতীয় সিজনটা আরও সুন্দরভাবে করেছেন। ওনারা মহানায়কেরই ফ্যান।’ তিনি কৃতজ্ঞতা জানান সিলন টি কর্তৃপক্ষ, ক্রিয়েটোর পরিচালক রাশিদ খান, পার্থ বড়ুয়া, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শেখ জসিম এবং এ আয়োজনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবাইকে।

২০১৩ সালে বাবার অভিনীত গান নিয়ে ‘মহানায়কের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন তিলোত্তমা। পরে গানগুলো সিলন টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘মহানায়কের গান’–এর প্রথম মৌসুম।

‘মহানায়কের গান’–এর দ্বিতীয় মৌসুমের রেকর্ডিংয়ে তাহ্সিন ফারজানা তিলোত্তমা। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

তিলোত্তমা বলেন, ‘বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমি তোমার জন্য সিডি বের করব। ২০১০ সালে বাবাকে হারিয়ে খুব আফসোস হচ্ছিল, সিডিটা করতে পারলাম না। তখন মরিশাসে ছিলাম। ২০১২ সালে “মহানায়কের গান” শিরোনামে ১২টা গান রেকর্ড করি। ২০১৩ সালে গানগুলো রিলিজ করেছি।’
তিলোত্তমা আরও বলেন, ‘আব্বু গানও করতেন। কলেজ লাইফে আব্বু স্টেজ শো করেছেন। পুরোনো দিনের গান খুবই ভালো গাইতেন। পরিবারের গানের পরিবেশ ছিল। মা–বাবা দুজনই গান পছন্দ করতেন।’

‘মহানায়কের গান’–এর দ্বিতীয় মৌসুমের রেকর্ডিংয়ে তাহ্সিন ফারজানা তিলোত্তমা। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

বাবা ও মায়ের উৎসাহে শখের বশে গান করেন তিলোত্তমা। তিনি মূলত পুরোনো দিনের বাংলা গান ও গজল করেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তিনি বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ বছর ‘মহানায়ক বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা ২০২৫’ পাচ্ছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
১৯৪১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগামসি লেনে বুলবুল আহমেদের জন্ম। মা–বাবা নাম রেখেছিলেন তাবাররুক আহমেদ। তবে আদর করে ডাকতেন ‘বুলবুল’।

অভিনয়জীবন শুরু হয়েছিল ছোট পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে। টেলিভিশনে বুলবুল আহমেদের প্রথম নাটক আবদুল্লাহ আল–মামুনের ‘পূর্বাভাস’। ‘ইডিয়ট’ নাটকটির জন্য তিনি দর্শকহৃদয়ে আজও এক দুর্লভ স্থান অধিকার করে আছেন। যেকোনো নাটকে অভিনয়ের সময় বুলবুল আহমেদ নাটকের চরিত্রের ভেতর মিশে যেতেন। অভিনেতা হিসেবে সত্যিকার অর্থে পথচলা শুরু ১৯৬৮ সালে ‘পূর্বাভাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘ইডিয়ট’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘টাকায় কি না হয়’, ‘মালঞ্চ’, ‘হৈমন্তী’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘সারাদিন বৃষ্টি’, ‘রূপনগর’, ‘সারাবেলা’—এ রকম তিন শতাধিক নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। জহির রায়হানের উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’-তে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন তিনি। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই মারা যান তিনি।