অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা কেমন হতে পারে—তা আবারও বিশ্ববাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল আইরিশ হিপহপ ব্যান্ড নিক্যাপ। গত শুক্রবার নরওয়ের অসলোর মঞ্চে ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ব্যান্ডটি। শুধু অবস্থান জানিয়েই থেমে থাকেনি, ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়াই নরওয়ের মাটিতেই দেশটির সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে নিক্যাপ।
শুক্রবারের শো শুরুর আগে পর্দায় ভেসে ওঠে একটি বার্তা, যেখানে নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। বার্তায় বলা হয়, দেশটির সরকার সার্বভৌম তহবিল ‘ওয়েল পেনশন ফান্ড’ বিনিয়োগের মাধ্যমে গণহত্যাকে সরাসরি সহায়তা করছে।
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘২১ মাসে ইসরায়েল ৮০ হাজারের বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।’ উপস্থিত দর্শকেরা তখন করতালি ও উল্লাসে ব্যান্ডটির সঙ্গে সংহতি জানান।
গত মাসে ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগে নিক্যাপকে তিন বছরের জন্য হাঙ্গেরিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। আগামীকাল ১১ আগস্ট দেশটির সিগেট ফেস্টিভ্যালে ব্যান্ডটির পারফর্ম করার কথা থাকলেও এর বিরোধিতা করে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে দেশটির ১৫০ জনের বেশি শিল্পী ও সংগীতশিল্পী।
এক বিবৃতিতে নিক্যাপ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদকারীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার আরও একটি চেষ্টা।’ উৎসবের আয়োজকেরা জানিয়েছে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ‘অপ্রয়োজনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক’। কারণ, ব্যান্ডটি তাদের আশ্বস্ত করেছিল যে তাদের পারফরম্যান্স ‘সিগেটের মূল্যবোধ বা হাঙ্গেরির আইন লঙ্ঘন করবে না’।
গাজার পক্ষ নেওয়াই ‘নিক্যাপ’ সবচেয়ে বেশি রোষানলে আছে যুক্তরাজ্য সরকারের। দেশটির সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত ২০২৪ সালে। সেবার তারা ‘ফেয়ারওয়েল টু দ্য ইউনিয়ন’ নামে একটি ট্যুরের আয়োজন করে। সেই ট্যুরের পর যুক্তরাজ্যের সরকার তাদের জন্য বরাদ্দ করা ১৫ হাজার পাউন্ড মূল্যের শিল্প অনুদান বাতিল করে। স্বাধীন বোর্ড সেই অনুদান অনুমোদন করার পরও সরকারের সিদ্ধান্তে তা বাতিল হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্যসচিব কেমি ব্যাডেনোচের দপ্তর পরে তা আটকে দেয়।
এক বিবৃতিতে ব্যাডেনোচের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এমন শিল্পীদের হাতে ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থ তুলে দিতে চাই না, যাঁরা যুক্তরাজ্যের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেন।’ তবে ব্যান্ডটি হাল ছাড়েনি, তারা আদালতে যায়। আদালত সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। এটি ছিল শিল্পের স্বাধীনতার এক বড় জয়।
বিতর্ক এখানেই থেমে থাকেনি। ২০২৪ সালে লন্ডনে এক কনসার্টে নিক্যাপের সদস্য লিয়াম ওগ ও’হান্নাই, যিনি মঞ্চে মো চারা নামে পরিচিত, হিজবুল্লাহর পতাকা প্রদর্শন করেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। গত সপ্তাহে তাঁর জামিন দেন ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মামলার শুনানি ধার্য করা হয় ২০ আগস্টে। নিক্যাপ আগেই জানিয়েছিল, তারা এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ মনে করে, তারা আদালতে জোরালোভাবে তা মোকাবিলা করবে।
১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে বিতর্কে জড়ায় নিক্যাপ। এ ঘটনার পর মার্কিন টিভি তারকা শ্যারন অসবর্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমেরিকাস গট ট্যালেন্টের এই বিচারক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘এই ব্যান্ড পারফরম্যান্সে রাজনৈতিক আগ্রাসী বক্তব্য ব্যবহার করেছে।’ তিনি দাবি করেন, ব্যান্ডটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন’ জানাচ্ছে এবং তাদের ভিসা বাতিল করা উচিত। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, বিশেষ কেস নিয়ে তারা সাধারণত মন্তব্য করে না। তবে ভিসা বাতিলের ক্ষেত্রে তারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা ও ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের’ মতো বিষয় বিবেচনা করে।