Thank you for trying Sticky AMP!!

কালজয়ী ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানের সুর বিকৃতিতে এবার ধিক্কার ও নিন্দা জানাল সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট

নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানটির সুর বিকৃতিতে ধিক্কার ও নিন্দা ছায়ানটের

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বলিউডে তৈরি রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত হিন্দি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানটি। আর এ গানের রিমেকের সংগীতায়োজন করেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান। কিন্তু গানে নতুন করে এ আর রাহমান সুরারোপ করায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নজরুলভক্তদের মধ্যে। দাবি ওঠে, অবিলম্বে চলচ্চিত্রটি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে ওই বিকৃত করে সুর দেওয়া ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটিকে। কালজয়ী এই গানের সুর বিকৃতিতে এবার ধিক্কার ও নিন্দা জানাল সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।

Also Read: ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ বিতর্ক, ক্ষমা চাইলেন নির্মাতারা

এক বিজ্ঞপ্তিতে ছায়ানট ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’–এর পটভূমি ও প্রভাব বর্ণনা করে জানিয়েছে, ‘এই উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম স্বদেশপ্রেমের পটভূমিতে “ভাঙার গান” শিরোনামে কারার ঐ লৌহ–কবাট গানটি রচনা করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তো বটেই ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ভাগের পর পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ কোটি বাঙালিকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে বিদ্রোহী কবির এই গান। সম্প্রতি ভারতীয় একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর ও আঙ্গিকে কালজয়ী গানটি পরিবেশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চরম অবমাননা, স্রষ্টার অমর্যাদা এবং সংস্কৃতিবিনাশী কাজ।’
ছায়ানটের ভাষায়, ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল রচিত, পরাধীনতা–জর্জর মানুষকে জাগিয়ে তোলার এই গান বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ; অঙ্গাঙ্গি মিশে আছে আমাদের মর্মে, আত্মপরিচয়ের বিশ্বাসে। যে সুর ও বাণীর এমন ঐতিহাসিক পটভূমি, গভীর তাৎপর্য, তার ন্যূনতম বিচ্যুতি বাঙালি সইবে না, মানবে না কোনো বাণিজ্যিক চটুল বিকৃতি।’

Also Read: ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ বিতর্ক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের পর এবার মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক নেতারাও

এ আর রাহমান কর্তৃক নজরুলের গানের সুর বিকৃতিতে ছায়ানট দেখছে ‘কোনো ব্যক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠীর হীন বাণিজ্য করার অপপ্রয়াস’ হিসেবে। তারা লিখেছে, ‘কাজী নজরুল ইসলামের সকল সৃষ্টিই বাঙালি তথা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সেই স্রষ্টার কালোত্তীর্ণ কর্মকে পণ্য করে কোনো ব্যক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠীর হীন বাণিজ্য করার অপপ্রয়াস আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বকালে পাকিস্তানি শাসকেরা কাজী নজরুলকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল, কিন্তু মুক্তবুদ্ধির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি প্রতিবাদে মুখর হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। বিকৃত-সংস্কৃতির আগ্রাসনে আবারও সেই সম্মিলিত প্রতিবাদ-ঝড় তোলার সময় সমাগত।’

Also Read: কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকবাট’ নতুন করে বানিয়ে তোপের মুখে এ আর রহমান

এমন কাজের নিন্দা জানিয়ে ছায়ানট বিবৃতিতে বলে, ‘অমর গানটির প্রকৃত সুর-আবেদন-আবেগে আমূল পরিবর্তন আমাদের সংস্কৃতি ও মননে অপূরণীয় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ধৃষ্টতা ও সাংস্কৃতিক–তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিকৃত গানটির প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করে, প্রয়োজনে অবিকৃত গানের সংযোজন ও প্রকাশের দাবি জানানো হলো। ছায়ানট রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলার সব গীতিকার ও সুরকারের নিজস্ব ও অনুমোদিত বাণী ও সুরের শুদ্ধ চর্চা ও প্রসারে নিয়োজিত এবং সেসব সৃষ্টির যেকোনো ধরনের বিকৃতিকেই অপরাধ বলে মনে করে।’