
ভোকালিস্ট খুঁজতে দেশে একাধিক রিয়েলিটি শো হলেও ভোকালিস্টের সঙ্গে ড্রামার, কি-বোর্ডিস্ট, গিটারিস্ট খোঁজার রিয়েলিটি শো হাতে গোনা। রক ব্যান্ডের জন্য তরুণ মিউজিশিয়ান খুঁজছে ‘দ্য কেইজ’। আলোচিত রিয়েলিটি শোটি নিয়ে লিখেছেন মকফুল হোসেন
হাতে সময় এক ঘণ্টা, এর মধ্যে আস্ত একটা ব্যান্ড গড়তে হবে। প্রতিযোগীদের কেউ ভোকালিস্ট, কেউ ড্রামার, কেউবা কি-বোর্ডিস্ট। তবে কেউ কাউকে চেনেন না। আড্ডার মধ্য দিয়ে ব্যান্ডের সদস্য খুঁজে নেন প্রতিযোগীরা। এক ঘণ্টায় গড়া সেই ব্যান্ড নিয়েই ‘দ্য কেইজ’-এর মঞ্চে প্রতিযোগিতা করছেন তরুণেরা।
শতাধিক প্রতিযোগী এতে অডিশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেখান থেকে ৮০ প্রতিযোগীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। ১৭টি ব্যান্ড গড়েছেন তাঁরা। প্রথম গানটি করার জন্য দু-তিন দিন সময় পেয়েছিলেন তাঁরা।
তরুণ রক মিউজিশিয়ানদের খোঁজে রিয়েলিটি শোটি প্রযোজনা করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনথিলা।
বিচারক হিসেবে আছেন অ্যাভয়েড রাফা ব্যান্ডের ভোকালিস্ট রাফা, ওয়ারফেজের ভোকালিস্ট পলাশ নূর, আরবোভাইরাসের গিটারিস্ট রঞ্জন এবং সংগীতশিল্পী তাসফি। গিটারিস্ট রঞ্জন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর চেষ্টা করেও আমরা ব্যান্ড করতে পারি না। সেখানে প্রতিযোগীরা এক ঘণ্টায় ব্যান্ডের সদস্যদের খুঁজে নিয়েছেন। এখান থেকে কোনো ব্যান্ড টিকে গেলেই আমরা সার্থক।’
ভোকালিস্ট রাফা বলেন, ‘এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতার একটি। শোটি যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার চেয়েও ভালো হয়েছে।’
‘দ্য কেইজ’ আলাদা কেন
রিয়েলিটি শোটির আয়োজক চিশতি ইকবাল জানান, খাঁচার রূপক অর্থে শোর নাম রাখা হয়েছে ‘কেইজ’। একজন সংগীতশিল্পী বেড়ে ওঠার সময় পরিবার, সমাজের খুব একটা সহযোগিতা পান না। ফলে সংগীতশিল্পীর প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ সব সময় সীমিত থাকে। তাঁর ভাষ্যে, ‘এই শোর মাধ্যমে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মেধাবী শিল্পীদের তুলে ধরতে চাই। তাঁরা নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবেন। ব্যান্ডের তালে মেটাফোরিক্যাল (রূপক) খাঁচা ভাঙতে পারবেন, বাংলাদেশি রক ব্যান্ডকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পারবেন।’
দেশে প্রচলিত সংগীতের রিয়েলিটি শোগুলো মূলত কণ্ঠশিল্পী খোঁজে। ক্লোজআপ ওয়ান-তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, পাওয়ার ভয়েস, বাংলাদেশি আইডল, ম্যাজিক বাউলিয়ানা থেকে বাংলার গায়েন—সবখানেই কণ্ঠশিল্পী নিয়ে কারবার। গিটারিস্ট রঞ্জন বলেন, ‘বেশির ভাগ সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ভোকালিস্টনির্ভর ছিল। “দ্য কেইজ” ভোকালিস্ট, ড্রামার, গিটারিস্টসহ সব ধরনের মিউজিশিয়ান নিয়ে রিয়েলিটি শো করছে।’
এর মধ্যে ব্যান্ড সংগীত নিয়ে রিয়েলিটি শো খুব একটা দেখা যায়নি। ২০০৭ সালে আয়োজিত রিয়েলিটি শো ‘ডি-রকস্টার’ নতুন ব্যান্ড নিয়ে আলোচিত হয়েছিল।
‘পাওয়ারসার্জ’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘ডি-রকস্টার’-এর সঙ্গে ‘দ্য কেইজ’-এর পার্থক্য রয়েছে। ‘ডি-রকস্টার’-এ অংশ নিয়েছে ব্যান্ড আর ‘দ্য কেইজ’-এ প্রতিযোগীরা একক শিল্পী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় থেকেই ব্যান্ড গড়েছেন। রাফা বলেন, ‘দুই শোর ডিজাইন (নকশা) আলাদা। “দ্য কেইজ”-এ নির্বাচিত ৮০ জনকে একটি রুমে নেওয়া হয়। এর মধ্য থেকে একজন একজনকে খুঁজে বের করে ব্যান্ড গড়েছেন প্রতিযোগীরা।’
শোটি নিয়ে ফেসবুকে অনেকে রিভিউ লিখেছেন। জাকারিয়া হাসান নামের এক দর্শক লিখেছেন, ‘উপস্থাপনা থেকে বিচারকদের ইতিবাচক ব্যবহার—সব মিলিয়ে শোটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ এই দর্শকের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশে ট্যালেন্ট শোর অভাব নেই। পরিচিত মুখদের জাজ (বিচারক) হিসেবে দেখেছি বহুবার, আর তাদের টক্সিক বিহেভিয়ারও (বিষাক্ত আচরণ) কম দেখিনি। প্রতিযোগীদের তাচ্ছিল্য করা, এমনভাবে সমালোচনা করা যেন প্রতিভার চেয়ে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাই মাপকাঠি। এসবই যেন নরমালাইজড হয়ে গিয়েছিল। এই জায়গাতে দ্য কেইজ একদমই আলাদা। আলিফ আপুর প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) থেকে শুরু করে জাজদের (বিচারক) অ্যাপ্রোচ—সবকিছুই একটা নতুন স্ট্যান্ডার্ড (আদর্শ) তৈরি করছে। প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স (পরিবেশনা) যেমনই হোক না কেন, জাজরা (বিচারক) পজিটিভলি (ইতিবাচক) নিচ্ছেন, আবার গঠনমূলক সমালোচনাও করছেন। প্রতিযোগীদের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার ধরনটাও অনেক বেশি রেসপেক্টফুল (শ্রদ্ধাশীল) আর প্রোডাক্টিভ মনে হয়েছে।’
আয়োজনটি উপস্থাপনা করছেন সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দিন এবং ব্যাকস্টেজ হোস্ট হিসেবে আছেন পাওয়ারসার্জ ব্যান্ডের জামশেদ চৌধুরী। বিভিন্ন পর্বে ‘লেজেন্ড জাজ’ হিসেবে উপস্থিত থাকছেন ফোয়াদ নাসের বাবু, মানাম আহমেদ, এহসান এলাহী ফান্টি, শেখ মনিরুল আলম টিপু, বাপ্পা মজুমদার ও রোমেল আলী। মেন্টর হিসেবে আছেন আফতাবুজ্জামান ত্রিদিব, বখতিয়ার, সেজান, রিয়াসাত, তাশউইন, মাসুদ, এলিটা, মিলা ও এ কে রাহুল।
বিজয়ীরা কী পাবেন
তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে গান করেছে ১৭টি ব্যান্ড। কাভার গানের পাশাপাশি অরিজিনাল গানও পরিবেশন করছে ব্যান্ডগুলো। বর্তমানে ৮টি ব্যান্ড টিকে আছে। এসব ব্যান্ড হলো ডোপামিন, সিরিয়াস জোকারস, ব্লু কন্ডিশন, ইডেনস গার্ডেন, নাইন, কারনেশন, রক সল্ট ও ডাস্ট অ্যান্ড ডাউন।
এখন পর্যন্ত ছয়টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হবে কে, তা জানতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে। আয়োজকেরা জানান, দেশের শীর্ষ রক ব্যান্ডের সঙ্গে পারফর্মের সুযোগ পাবে বিজয়ী ব্যান্ড। নতুন গান ও মিউজিক ভিডিও প্রকাশের সুযোগ পাবে।
বিচারক রাফা বলেন, ‘শোর মাধ্যমে ব্যান্ডগুলোকে চিনছে। শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। এখন ওদের কাজ হবে ব্যান্ডটাকে প্রতিষ্ঠিত করা।’
দীপ্ত টেলিভিশনের পাশাপাশি শোর ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে ‘দ্য কেইজ’।