
বাংলাদেশি সিনেমার গানের ইতিহাসে সুরকার সত্য সাহার নাম প্রথম সারিতেই আসে। চট্টগ্রামের নন্দীরহাটে জন্ম নেওয়া এই সংগীত পরিচালক সংগীতকে দেখেছিলেন জীবনের ভাষা হিসেবে। তাঁর হাতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গান, যেগুলো আজও মানুষের মনে বাজে। ষাটের দশকে ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্র দিয়ে শুরু হয় তাঁর যাত্রা। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কয়েক বছর তিনি ভারতের গীতিকার ও সুরকার সলিল চৌধুরীর সহকারী ছিলেন। সেই সময়ে ভারতের অনেক শিল্পীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, লতা মঙ্গেশকরও ছিলেন তাঁদের একজন।
সত্য সাহা ছিলেন আবেগ ও মেলোডির কারিগর। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী আজও আছেন তাঁর সুরের মধ্য দিয়ে। তাঁর গান শুনলেই বোঝা যায়—তিনি শুধু সুরকার নন, ছিলেন এক গল্পকার, যিনি সুরের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। হাটহাজারীর জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও ভোগবিলাসের জীবন ছেড়ে তিনি সুরের জগতে নিজেকে নিবেদন করেন, সমৃদ্ধ করেন বাংলা গানের ভান্ডার। পড়াশোনায় মেধাবী সত্য সাহা চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ এড়িয়ে সুরের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি ছিলেন বিরল সংগীতশিল্পীদের একজন, যিনি একাধারে গায়ক, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে সফলতা পেয়েছেন।
আজ হঠাৎ সত্য সাহাকে নিয়ে কথা হচ্ছে অন্য কারণে। একটি সাদা–কালো ছবি প্রসঙ্গে সত্য সাহা ফিরলেন যেন। ছবিটা দেখি সত্য সাহার ছেলে ইমন সাহার বাসায়, যিনি নিজে সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ইমন সাহার উত্তরার বাসার দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর বাবা সত্য সাহা ও মা রমলা সাহার একটি স্থিরচিত্র।
গত সোমবার রাতে ছবিটির গল্প জানতে চাইলে ইমন সাহা বলেন, ‘বাবা একসময় বেশ কিছুদিন সলিল চৌধুরীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেই সূত্রেই লতাজির সঙ্গে বাবার পরিচয়। তখন বড় মাপের শিল্পী, যেমন হেমন্ত মুখার্জি, লতা মঙ্গেশকরসহ যাঁরা ছিলেন, সবার সঙ্গে (সলিল চৌধুরীর সহকারী হিসেবে) বাবার কাজ করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে লতাজি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন এফডিসি পরিদর্শনে যান। মা–বাবা দুজনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মার কাছে শুনেছি, দূর থেকে বাবাকে দেখে লতাজি, সত্যদা! সত্যদা! বলে কাছে ডেকে নেন। এরপর আড্ডা। ছবিটি তখনই তোলা।’
সত্য সাহাও সংগীতের পাশাপাশি নির্মাণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ডজনখানেক সিনেমা প্রযোজনা করেছেন তিনি। ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘বিনিময়’, ‘রাম রহিম জন’, ‘পুরস্কার’, ‘তোমার জন্য পাগল’-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমার প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।