আইয়ুব বাচ্চু ও ফেরদৌস আক্তার
আইয়ুব বাচ্চু ও ফেরদৌস আক্তার

আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্ত্রীর আবেগঘন স্ট্যাটাস এবং...

আইয়ুব বাচ্চুর গিটারবাদন আর গায়কিতে মুগ্ধ হননি, এমন শ্রোতা পাওয়া মুশকিল। বেঁচে থাকলে আজও তিনি দাপিয়ে বেড়াতেন দেশ–বিদেশের মঞ্চ। সাত বছর আগের আজকের দিনে উড়ে আসা একটি খবর, আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের মন বিষণ্ন করে দেয়। এদিন তাঁরা জানতে পারেন, আজীবনের জন্য তাঁর পথচলা থেমে গেছে। ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ এসে হাসপাতালে ভিড় করেন, কেউ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ছুটে যান চট্টগ্রামেও, যেখানে চিরঘুমে আইয়ুব বাচ্চু। আজ দেশের এই জনপ্রিয় গিটার–জাদুকরের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিতে তাঁকে মনে করেছেন সংগীতাঙ্গনে তাঁর বন্ধু–স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
দেশের শ্রোতাপ্রিয় গায়ক তপন চৌধুরীর সংগীতজীবনে অবদান ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। প্রথম অডিও অ্যালবাম ‘তপন চৌধুরী’র সুরকার ও সংগীতায়োজক ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এমন কথা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে তপন চৌধুরী বলেন, ‘আমার জীবনের প্রথম গান থেকে আমাদের একসঙ্গে পথচলা। সে আমার ক্যাসেট করেছে, ভিডিও করেছে। প্রথম ক্যাসেটের সংগীত পরিচালক ছিল সে। সে অনেক বড় একজন মিউজিশিয়ান, একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান। অনেকে বলে, বাচ্চু শুধু রক গান করে। কিন্তু সব ধরনের কম্পোজিশন করতে পারত সে। সে ছিল ভার্সেটাইল একজন শিল্পী। সব ধরনের গান করতে পারত।’ নিজেদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ও স্মৃতি স্মরণ করে তপন চৌধুরী বলেন, ‘বাচ্চুর মা আমাকে বড় ছেলে মনে করত। প্রথম যখন গান শুরু করি, আশির দশকের শুরুর দিকে, ওর মা আমাকে বলছিল, “ও তপন, রবিন (আইয়ুব বাচ্চু) তো ঢাকা যাচ্ছে। ওর দিকে খেয়াল রাখিস। তুই ওকে দেখবি যে তুই ওর বড় ভাই। আমি চাই না, রবিন অন্য কিছু করুক। ও গান–বাজনাই করুক।” বাচ্চু কোনো ব্যবসা করেনি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শুধু গানই করছে। সে আপাদমস্তক একজন শিল্পী। এই শিল্পীজীবনের মধ্য দিয়েই সে সবকিছু করছে। সন্তানদের বড় করছে, দেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছে। এর বেশি আর কীই–বা চাওয়ার আছে। সে সার্থক, সে সফল।’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণের আজ ৭ বছর। এদিন আইয়ুব বাচ্চু ও কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে একটি স্থিরচিত্র পোস্ট তপন চৌধুরী লিখেছেন , ‘তাঁর আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক। প্রিয় ভাই আইয়ুব বাচ্চু, তোমাকে আমরা গভীরভাবে মিস করি।’
মাইলস ব্যান্ডের হামিন আহমেদের সঙ্গেও চমৎকার সম্পর্ক ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। ‘যেখানেই থাকো, জ্বলে ওঠো।  তুমি অনন্য হীরা। সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ভালোবাসা ও স্মৃতির গল্প মনে পড়ছে।’
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে এই স্থিরচিত্র পোস্ট করে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের দললেতা শেখ মনিরুল আলম টিপু লিখেছেন, ‘একজন মানুষ, এক কিংবদন্তি, এক অনন্ত সুরের স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু ভাই। আপনি চলে গিয়েও রয়ে গেছেন আমাদের সবার হৃদয়ে। ভালো থাকবেন ওপারে, আপনি অমর। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন।’
আইয়ুব বাচ্চুর অনুজপ্রতিম সোলস ব্যান্ডের জনপ্রিয় গায়ক পার্থ বড়ুয়া জানান, তাঁকে হাতে ধরে গিটার শিখিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। তারপর অনেকদিন তাঁর সঙ্গে কি–বোর্ড বাজিয়েছেন। ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। পার্থ বড়ুয়ার পেশাদার গানের জীবনের শুরুটাও আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে। পাঁচ দশক গানের জগতে আছে ব্যান্ড সোলস। এর মধ্যে ২০০০ সালের পর চার বছরের মতো গানের জগৎ থেকে দূরে সরে ছিল দলটি। আইয়ুব বাচ্চুই নাকি আবার বলে–কয়ে সোলসকে গানের জগতে ফেরান। পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘সোলসের কার্যক্রম ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ ছিল। এরপর বাচ্চু ভাইয়ের কারণে আবার শুরু করছি। তিনি সাহস দিয়েছিলেন। বলছিলেন, পারবি। চেষ্টা কর। আমরা একপর্যায়ে পাঁচ-ছয় মাস মহড়া করলাম। আবার গানের মঞ্চে ফিরলাম। বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গেই মেডিকেল কলেজের একটা শো করেছিলাম। যদিও আমরা কোনো ধরনের সম্মানী ছাড়াই অনুষ্ঠানটি করি, তারপরও বাচ্চু ভাই আমাদের তখন ৩০ হাজার টাকা সম্মানী দেন। বলছিলেন, এটা রাখ তোরা। জোর করেই দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁর আগেই আমাদের মঞ্চে তোলেন। আমরা সেদিন ৩০ মিনিট পারফর্ম করি।’ আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে শোটি করার পর থেকে সোলসের ব্যস্ততা আবার বাড়তে থাকে। একের পর এক শো করতে থাকেন দেশে ও দেশের বাইরে। পার্থ বড়ুয়ার মতে, ‘মঞ্চে সেদিনের শোর পর থেকেই সোলস আবার ঘুরতে শুরু করল। এরপর আর থামেনি, এখনো চলছে। তিনি আমাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও জোর করে ফেরান।’
মৃত্যুর আগে কিছু স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর সেসব স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন। আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয় চলতি বছরের ৯ জুলাই। রয়েছে আইয়ুব বাচ্চু ডট ফাউন্ডেশন নামে এই প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইটও। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘বাচ্চুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কবে তা পূরণ হবে, এখনো বুঝতে পারছি না। কারণ, যে স্বপ্নটা আইয়ুব বাচ্চু দেখেছে, তা পূরণে পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি।’ এদিকে আজ ফেসবুক পোস্টে আইয়ুব বাচ্চুর এই স্থিরচিত্র পোস্ট করে ফেরদৌস আক্তার লিখেছেন, ‘জীবন বড়ই বিচিত্র, সন্ধ্যা কাটে না, অথচ দিব্যি বছর ঘুরে বছর আসে।’ দেখতে দেখতে সাত বছর ...।’