কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, মনির খান ও উজ্জ্বল
কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, মনির খান ও উজ্জ্বল

নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন আলোচনায় যেসব তারকা

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত হবে—এমনটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাই নির্বাচনমুখী। অন্তর্বর্তী সরকার বারবার জানিয়েছে, যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন তারা সম্পন্ন করবে। এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় পরিচিত ও গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি দলীয় জরিপে যাঁরা এগিয়ে আছেন, তাঁরাই আলোচনায় আছেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে তাঁদের নামও শোনা যাচ্ছে।

বেবী নাজনীন

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় অভিনয় অঙ্গনের মানুষের চেয়ে সংগীতাঙ্গনের মানুষের নামই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে এখন পর্যন্ত যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে এগিয়ে আছে সংগীতশিল্পী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীনের নাম। ২০১৮ সালে নীলফামারী-৪ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এই সংগীতশিল্পীকে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে সরকারি বাধায় পেশাগত সংগীতচর্চা চালিয়ে যেতে পারেননি এই শিল্পী। স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে না পারায় বেদনা নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন, সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিয়েছিলেন। এবারও বেবী নাজনীনের নীলফামারী–৪ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত—এমনটাই বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

কনকচাঁপা

সংগীতের পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় সংগীতশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। সিরাজগঞ্জ–১ আসনে দ্বিতীয়বার বিএনপির পক্ষে নির্বাচনের লড়াইয়ের টিকিট পেতে পারেন তিনি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব হন তিনি। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধায় কনকচাঁপা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত এলাকায় যেতে না পেরে তিনি পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কনকচাঁপা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে তিন বছরের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছে।

মনির খান

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খানও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। জাসাসের সাবেক এই নেতা পেশাগত ব্যস্ততা ছাড়া এখন বেশির ভাগ সময় নির্বাচনী এলাকা ঝিনাইদহ–৩ আসনের মানুষের সঙ্গে কাটান। শোনা যাচ্ছে, ঝিনাইদহ–৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল

বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর নামটিও মনোনয়ন তালিকায় শোনা যাচ্ছে। তবে সোমবার দুপুরে কথা প্রসঙ্গে উজ্জ্বল বললেন,‘চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কলাকুশলীসহ এ দেশের আপামর মানুষের ভালোবাসায় নায়ক হয়েছি। আমি রাজনীতিও করেছি। তবে রাজনীতির মাধ্যমে এমপি হব, মন্ত্রী হব—এমন লক্ষ্য কখনোই আমার ছিল না। এখন আমার দল যদি মনে করে, আগামী নির্বাচনে আমার কনটেস্ট করা দরকার, তাহলে আমি করব। দল যদি মনে করে, দলে উজ্জ্বল তার যে দায়িত্ব, তা ঠিকঠাক পালন করছি, ভবিষ্যতে নায়ক উজ্জ্বলকে পার্লামেন্টে নেওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকার দরকার, তা যথাযথ আছে, তাহলে আমি সেই দায়িত্বও ঠিকঠাকভাবে পালন করতে সব সময় প্রস্তুত।’

এর আগে সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর, নাজমুন মুনিরা ন্যান্‌সি, চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী হেলাল খান ও শিবা সানু বিএনপির হয়ে নির্বাচনে লড়তে পারেন—এমনটা শোনা গিয়েছিল। তবে এ নিয়ে তাঁরা কেউই কিছু পরিষ্কার করে বলেননি। এটাও ঠিক, শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে নির্বাচনী হিসাব–নিকাশ এদিক-সেদিক হতেও পারে।

বিনোদন অঙ্গনের মানুষের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আওয়ামী লীগ আমলেও ছিল। অনেক তারকা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কেউ কেউ সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন। এবার বিএনপি মতাদর্শের রাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্য থেকেও কেউ এমপি বা মন্ত্রী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।