সুরকার ও সংগীত পরিচালক স্বামী মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা
সুরকার ও সংগীত পরিচালক স্বামী মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা

‘ফুল, শুভেচ্ছা কিছুই লাগবে না’—বিবাহবার্ষিকীতে স্বামীর উদ্দেশে কনকচাঁপার খোলা চিঠি

বিবাহবার্ষিকী শুধু একটি দিন নয়, এটি সম্পর্কের পথচলার নতুন অধ্যায়। এমনই অধ্যায়ে ৪১তম বিবাহবার্ষিকীতে স্বামী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খানের উদ্দেশে আবেগঘন চিঠি লিখেছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সেই চিঠিতে কনকচাঁপা শুধু স্মৃতি ও ভালোবাসার কথাই বলেননি; বরং নিজেদের সম্পর্কের অন্তর্নিহিত শক্তি, সন্তুষ্টি ও আত্মতৃপ্তির বিষয়ও তুলে ধরেছেন।

১৯৯৩ সালে কলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্ডেনের ভেতরে তোলা ছবিতে মইনুল ইসলাম খান ও কনকচাঁপা।

ফেসবুকে পোস্ট করা চিঠির শুরুতে সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা উল্লেখ করেছেন দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের নানা স্মৃতি ও সম্পর্কের মধুর দিক। তিনি স্বামীকে প্রশ্ন করেছেন, ‘তোমার আমার কত দিনের পরিচয়? কত দিনের বন্ধুত্ব? কে কাকে প্রথম চিঠি দিয়েছিলাম?’ এসব প্রশ্নে বোঝানো হয়েছে যে জীবনের ছোটখাটো মুহূর্ত ও তাঁদের স্মৃতি কতটা মূল্যবান। চিঠিতে এমনও লিখেছেন, ‘আমি জানি, একটা প্রশ্নের উত্তরও তুমি দিতে পারবে না। আমি কিন্তু অনেকগুলোরই দিতে পারব।’

কনকচাঁপা

কিন্তু কনকচাঁপা স্পষ্ট করেছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর জানা বা না–জানা আসলে কোনো ব্যাপার নয়; বরং সম্পর্কের মূল শক্তি হলো আন্তরিক ভালোবাসা, প্রার্থনা ও সন্তুষ্টি। তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে হ্যাপি বার্থডে অথবা শুভ বিবাহবার্ষিকী কিছুই বলা লাগবে না অথবা একগুচ্ছ ফুল এনে চমকে দিতে হবে না। এগুলো আশা করে করে পন্থের পানে চেয়ে আমি বুঝে গেছি, এগুলো তুমি পারো না। আর আমার করা প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে আসলে কিছু আসে যায় না। আমার জন্য একবুক ভালোবাসা আর দোয়া থাকলেই হলো।’

কনকচাঁপা

চিঠিতে কনকচাঁপা দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটানো অভিজ্ঞতা ও খুনসুটি তুলে ধরেছেন। এতে একে অপরের প্রতি খোলা মনোভাব ও পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়েও লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আমার প্রতি তোমার সন্তুষ্টি নিয়েই মরতে চাই। মৃত্যুর পর তুমি শুধু জনসমক্ষে অথবা আল্লাহর কাছে বলবে—আমার স্ত্রী খুব ভালো মানুষ ছিল, আমি তাঁর ওপর সন্তুষ্ট। এটাই হবে আমার ওপারে যাওয়ার পাথেয়।’

কনকচাঁপা

চিঠির শেষ ভাগে কনকচাঁপা স্বামীর প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভালোবাসি প্রিয়। শুভ ৪১তম বিবাহবার্ষিকী বন্ধু।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিঠিটি প্রকাশের পর ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী ও সংগীতপ্রেমীরা তাঁদের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেছেন, কনকচাঁপার চিঠি যে শুধু স্বামীকে নয়, এমনকি নতুন প্রজন্মের দাম্পত্য সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

১৯৯৫ সালে তোলা ছবিতে কনকচাঁপা ও তাঁর সুরকার সংগীত পরিচালক স্বামী মইনুল ইসলাম খান

কনকচাঁপা নিজের চিঠিতে বারবার জানিয়েছেন যে সম্পর্কের আসল মূল্য হলো বাহ্যিক প্রত্যাশা নয়; বরং একে অপরের প্রতি সন্তুষ্টি ও আন্তরিক ভালোবাসা। ৪১ বছর ধরে একসঙ্গে থাকার এই যাত্রা প্রমাণ করে সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো অনুষ্ঠান বা উপহার নয়, এটি হলো একে অপরের প্রতি আন্তরিক মনোভাব, বোঝাপড়া ও দোয়া।