‘মায়া’ অ্যালবামে হেলাল মিয়ার কণ্ঠে ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’, ‘কুহু সুরে মনের আগুন’ শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছিল
‘মায়া’ অ্যালবামে হেলাল মিয়ার কণ্ঠে ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’, ‘কুহু সুরে মনের আগুন’ শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছিল

‘মায়া’ অ্যালবামের গায়ক হেলাল মিয়া কোথায়

২০০৪ সালে বাজারে আসে মায়া অ্যালবাম। অ্যালবামে লোকগানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংগীতের মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন হাবিব ওয়াহিদ। অ্যালবামের গানগুলোয় কণ্ঠ দিয়েছিলেন হেলাল মিয়া। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই সংগীতশিল্পীর কণ্ঠে ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’, ‘কুহু সুরে মনের আগুন’ শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছিল। কীভাবে গায়ক হয়ে উঠলেন হেলাল আর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর কেনই–বা হারিয়ে গেলেন?

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিককার কথা। লন্ডনে ভগ্নিপতির রেস্তোরাঁয় গানের আসর বসাতেন হেলাল। তখন ইংলিশ র‌্যাপ করতেন তিনি। সেসব দিনের কথা এখনো হেলাল মিয়ার মনে আছে, ‘একদিন শুনলাম, দেশ থেকে নতুন একটা ছেলে এসেছে, ভালো গান করে। ইংলিশ গান করে। প্রথম দেখাতেই মনে হলো, ছেলেটার মিউজিক সেন্স ভালো। একদম ডাউন টু আর্থ, এত ভদ্র একটা ছেলে। দু–তিন সপ্তাহেই আমাদের ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়।’ এই ছেলেটাই হাবিব ওয়াহিদ, পড়াশোনার সুবাদে তখন লন্ডনে থাকেন। ছুটির দিনে রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারেন; ইংরেজি কভার গান করেন। তবে হাবিব যে আর্ক ব্যান্ডে বাজান আর তাঁর বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদ—এসবের কিছুই তখন জানতেন না হেলাল।

হাবিবের সঙ্গে হেলাল

ইংরেজি গান করলেও হেলালের মনে সব সময় বাংলা গান করার একটা ক্ষুধা ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন বাউল। সত্তর-আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলা লোকগান। যাঁর হাত ধরে যুক্তরাজ্যে পারফর্ম করেছেন বাউল শাহ আবদুল করিম থেকে দুর্বিন শাহ, কারি আমির উদ্দিন থেকে রুহি ঠাকুর। সে সময় হেলালদের বাসায় তাঁরা থেকেছেন দিনের পর দিন। তাঁদের মুখ থেকে শোনা গানগুলো সব সময় অন্তরে লালন করতেন হেলাল। আড্ডায় প্রায়ই গানগুলো করতেন। এক আড্ডায় গানগুলো শোনার পর হাবিবের মনে নাড়া দেয়। গানের কথা ও সুরে তিনি এতটাই বিমোহিত হন যে হেলালকে বলেন, ‘এসব গান নিয়ে কিছু করা যায় না?’

দুজন মিলে একটা স্টুডিও শুরু করেন। প্রথম রেকর্ড করেন কারি আমির উদ্দিনের লেখা ‘কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইয়ো না’। এরপর আরও দু–তিনটি গান। সে সময়কার স্মৃতি রোমন্থন করে হেলাল বলেন, ‘কয়েকজনকে গানগুলো দিলাম, বললাম, কেমন হয়েছে জানাও। গানগুলো যে আমাদের করা, কেউ বুঝতে পারেনি। এমন হলো যে যার সঙ্গেই দেখা হয় বলে, এ গান তোমরা কোথায় পেয়েছ! অত সুন্দর ফোক গান! এভাবেই প্রেরণা পেলাম। নিশ্চয়তা পেলাম, শুরু করা যায়।’

২০০৩ সালে শেষ হয় মায়া অ্যালবামের কাজ। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে দেশে আসেন তাঁরা। তবে কোনো অডিও কোম্পানিই তাঁদের অ্যালবাম নিতে আগ্রহ দেখায়নি।

দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ‘আমার মন মজাইয়া’ থেকে ‘মায়া লাগাইছে’। ইংরেজি গানের বদলে বাংলাদেশি পরিবারগুলোয় বাজতে থাকে লোকগান। গানগুলো দিয়ে একটা অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করেন হেলালরা। ২০০৩ সালে শেষ হয় মায়া অ্যালবামের কাজ। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে দেশে আসেন তাঁরা। তবে কোনো অডিও কোম্পানিই তাঁদের অ্যালবাম নিতে আগ্রহ দেখায়নি। সে সময়ের কথা মনে করে আপ্লুত হয়ে পড়েন হেলাল, ‘কত মানুষের কাছে গিয়েছি, সাউন্ডটেক থেকে সংগীতা—সবাই বলেছে এ অ্যালবাম কে শুনবে, চলবে না। আবার অনেকেই মার্কেটিং খরচ চেয়েছেন। সে সময় এই অ্যামাউন্ট আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। এভাবে কেটে যায় এক বছর। এমন সময় ফয়সাল সিদ্দিকী বগি ভাইয়ের একতার মিউজিক অ্যালবামটি নিতে রাজি হয়।’ বাকিটা ইতিহাস। সারা দেশে জনপ্রিয়তা পায় মায়া।

অ্যালবাম সাফল্য পেলেও হেলালকে আর গানে পাওয়া যায়নি। হাবিব দেশে ফিরে আসার পর পারিবারিক ব্যস্ততা ও চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। মাঝের সময়ে ফেরার অনেক পরিকল্পনা হলেও শেষ পর্যন্ত গান করা আর হয়ে ওঠেনি।
হেলালের সঙ্গে হাবিব ও হৃদয় খান

অ্যালবাম সাফল্য পেলেও হেলালকে আর গানে পাওয়া যায়নি। হাবিব দেশে ফিরে আসার পর পারিবারিক ব্যস্ততা ও চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। মাঝের সময়ে ফেরার অনেক পরিকল্পনা হলেও শেষ পর্যন্ত গান করা আর হয়ে ওঠেনি। সর্বশেষ ১৫ বছরের বিরতি ভেঙে ২০১৯ সালে হাবিবের সঙ্গে গানে ফেরেন হেলাল। বাউল সালামের কথা ও সুরে ‘কেন তারে ভালোবাসিলাম’ গানটির নতুন সংগীতায়োজন করেন হাবিব। গানটি শ্রোতৃপ্রিয়তা পায়।
গানে আবার বিরতি নেন হেলাল। বর্তমানে যুক্তরাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। বছর দুয়েক পরপর বাংলাদেশে আসা হয়। ডিসেম্বরে দেশে আসার ইচ্ছা আছে। গান নিয়েও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘লোকগানের একটি অ্যালবামের কাজ চলছে। কয়েকটি গান তৈরি হয়েছে। বছর শেষে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।’