শুরুটা সব সময় সহজ হয় না। অর্থহীন, ক্রিপ্টিক ফেইট, আর্টসেল, নেমেসিস, শিরোনামহীন—প্রায় প্রতিটি ব্যান্ডের ঝুলিতেই আছে আনন্দ–বেদনার গল্প। জনপ্রিয় এসব ব্যান্ড যাত্রা শুরু করে নব্বই থেকে শূন্য দশকে। গান দিয়ে এই সময়ে ব্যান্ডগুলোকে যেমন নিজেদের পরিচয় উপস্থাপন করতে হয়েছে, তেমনিভাবে শ্রোতা তৈরির দিকেও মনোনিবেশ করতে হয়েছে। এদিক থেকে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে নব্বইয়ের দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে ‘মিক্সড অ্যালবাম’–এর কথাও উল্লেখ করা জরুরি। ‘মিক্সড অ্যালবাম’ বা ‘মিশ্র অ্যালবাম’ হচ্ছে অনেকগুলো ব্যান্ডের সম্মিলিত অ্যালবাম। ওই সময়ে নিজস্ব অ্যালবাম বের করার আগে ব্যান্ডগুলো এক হয়ে ‘মিক্সড অ্যালবাম’ বের করত। এক অ্যালবামে বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের গান পাওয়ায় শ্রোতারাও আকৃষ্ট হতেন।
আর্টসেলের প্রথম গান ‘অদেখা স্বর্গ’ও তাঁরা করেছিলেন মিক্সড অ্যালবাম ‘ছাড়পত্রে’র (২০০১) জন্য। তারপর তরুণদের মুখে মুখে ফেরা ‘তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা?’ গানটিও ছিল মিক্সড অ্যালবাম ‘অনুশীলন’–এ (২০০২)।
‘দুঃখবিলাস’ শিরোনামের এই গান লেখার পাশাপাশি গেয়েছেন লিংকন নিজেই। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে কথোপকথনে গানটির গল্পও বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা?’ লেখার কারণ। গানটিকে নিজের ‘পারসোনাল একটা গান’ বলেও অভিহীত করেন শিল্পী।
ইউটিউবসহ বিভিন্ন পোগ্রামে তাঁর বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভালোবাসার প্রজাপতি গায়ে বসি বসি করেও বসে না, ভালো লাগা কাজ করলেও বলে উঠতে পারেন না। শেষমেশ প্রজাপতি গায়ে যদিও বসল, কিন্তু প্রেমটা শেষ পর্যন্ত হলো না। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘কী করব, দেখতে মোটাটোটা তো। হইল না, কিছু করার নাই।’
তখন বয়সও কম, ভীষণ মন খারাপ, ভাবলেন, কেউ বুঝি আর ভালোবাসবে না, প্রেম–ভালোবাসা কখনো তাঁকে ছোঁবে না। এই ভাবনা থেকেই চোখে জল নিয়ে লিখলেন, ‘তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা?’ আর্তনাদ করে সুরে সুরে গেয়ে উঠলেন, ‘ও আমায় ভালোবাসেনি/ অসীম এ ভালোবাসা ও বোঝেনি’।
যাঁর ভালোবাসা না পেয়ে গানে ‘এত ভিড়েও আজও আমি একা/ মনে শুধু যে শূন্যতা/ আঁধারে যত ছড়াই আলো/ সবই আঁধারে মেলায়’ লিখেছিলেন, তিনিও কিন্তু গানটা শুনেছেন। কিছু কি বলেছিলেন জবাবে, ফিরে এসেছিলেন? না, কিছু বলেননি, ফিরেও আসেননি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় গানটা লিংকন গাইতেন। পরবর্তী সময়ে গানটা আর্টসেল থেকে করেন।
আচ্ছা, যে কষ্ট থেকে লিখেছিলেন, ‘তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা?’ সেই কষ্ট কি মিটেছে? হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে নতুন মানুষ আসে লিংকনের জীবনে। ভালোবেসেই ঘর বেঁধেছেন দুজনে। জিতে নিয়েছেন, প্রেমিকার ভালোবাসা।