Thank you for trying Sticky AMP!!

খালিদ সাইফুল্লাহ (১ আগস্ট ১৯৬৫—১৮ মার্চ ২০২৪)

শেষ জীবনে যে আফসোস ছিল খালিদের

১৮ মার্চ সন্ধ্যায় চাইম ব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ না–ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর ভক্তদের অনেকেই এখনো প্রিয় গায়কের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে না থেকে যেন ফিরছেন খালিদ, তিনি ফিরছেন নতুন গান নিয়ে।
অনেক বছর খালিদের নতুন গান নেই। কিন্তু সেই আশি ও নব্বইয়ের দশকের ‘কালো মেয়ে’, ‘কীর্তন খোলা’, ‘নাতিখাতি বেলা গেল’, ‘মনে করো’, ‘আমায় যদি মনে পড়ে’, ‘কোনো কারণেই’, ‘আবার দেখা হবে’, ‘সরলতার প্রতিমা, ‘আকাশনীলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’সহ তাঁর গাওয়া অনেক শ্রোতৃপ্রিয় গানের আবেদন একটুও কি কমেছে?
অনেক দিন ধরেই পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন খালিদ। বছর দেড়েক হলো একা দেশে ফিরেছিলেন। গান নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। একক গানের পাশাপাশি চাইম ব্যান্ড পূর্ণগঠনও করতে চেয়েছিলেন। মাস ছয়েক ধরে সেই চেষ্টা করছিলেন। খালিদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি তাঁর জন্য সহজ হচ্ছিল না।

Also Read: 'সরলতার প্রতিমা' গানের খালিদ আর নেই

নতুন গান তৈরির প্রস্তুতি হাতে নিয়ে দুঃখ করে তাঁর এক ঘনিষ্ঠকে বলেছিলেন, ‘চাইমের অ্যালবাম তখন হিট। আমার পেছনে গানের জন্য লাইন দিতেন অনেকেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতাম। মানুষ এসে ভরদুপুরে অনুরোধ করে করে ঘুম ভাঙিয়ে গান করতে নিয়ে যেতেন আমাকে। আর এখন আমার নতুন গান করার কোনো ডাক আসে না। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এখন গান তৈরি করতে হচ্ছে!’
জানা যায়, এরই মধ্যে খালিদ নিজ খরচেই ‘ব্ল্যাকহোল’ ও ‘আমার চোখে তো অনন্ত মেঘ’ নামের দুটি গান করেছেন। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গান দুটির লেখা, সুরও খালিদের। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে গান দুটির মিক্স মাস্টারিং করেছেন তিনি। এরপর গান দুটির মিউজিক ভিডিও করে কীভাবে মুক্তি দেওয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছিলেন। মুক্তির জন্য দু-একটি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তাও চলছিল।

খালিদ। ছবি: ফেসবুক

চাইম ব্যান্ড নতুন করে গঠন, স্টেজ শো শুরু করা, নতুন একক গান করা—এসব কাজ দেখাশোনা করার জন্য প্রায় তিন মাস ধরে খালিদের ব্যবস্থাপকের কাজ করছিলেন সংগীতশিল্পী রোম্মান আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘গান নিয়ে খালিদ ভাই ইদানীং দুঃখ করতেন। এ সময় এসে নতুন গান করতে কোনো অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডাকেনি তাকে। নব্বই, আশির দশকে তাঁকে নিয়ে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের কথা এ সময়ের সঙ্গে তুলনা করে খুব আফসোস করতেন তিনি।’

একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে

Also Read: ‘নওরীন নাতিখাতি’র স্মৃতিতে খালিদ মামা

রোম্মান আরও বললেন, ‘কোথাও থেকে ডাক না পেয়ে মাস তিনেক ধরে নিজের খরচে দুটি গান প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে শুনেছি, এটি তাঁর নিজের খরচে করা প্রথম গান। তিনি একদিন অভিমানের সুরে বলছিলেন, “জীবনে প্রথম নিজ খরচে গান করলাম। বাজারটা এখন এমন হয়ে গেছে, আমাদের মতো শিল্পীদের পেছনে কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা লগ্নি করে না। আবার আমেরিকায় যাব। প্রচুর টাকা ইনকাম করে এনে এখানে নতুন নতুন গান করব।”’
জানা গেছে, একক গানের পাশাপাশি চাইম ব্যান্ড গঠন নিয়েও জোরেশোরে কাজ করছিলেন। চলতি বছরেই ১০টা গান নিয়ে চাইমের নতুন অ্যালবাম বের করার কথা ছিল। অ্যালবামের নাম রেখেছিলেন ‘ব্ল্যাকহোল’।

রোম্মান আরও বলেন, ‘এই দুটি গান বাদেও আরও দুটি গানে ভয়েস দিয়েছেন সে। গান দুটির আপাতত খবর জানি না আমি। খালিদ ভাই চাইমের জন্য আমাকে দিয়েও একটি গান লিখিয়েছেন।’
এদিকে প্রস্তুত হওয়া গান দুটি কবে, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে, তা এখনো জানাতে পারেননি রোম্মান। তিনি বলেন, ‘এখন খালিদ ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের কাউকে দায়িত্ব নিয়ে গান দুটি বের করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান গান দুটি নিলেও তো চুক্তির ব্যাপার আছে। সেটি এখন কে বা কারা করবেন, তা–ও তো বলা যাচ্ছে না। খালিদ ভাইয়ের বউ, ছেলে আমেরিকায় থাকেন। তাঁরা এখন কী করবেন, তা–ও জানি। তবে জি সিরিজ গান দুটি নিতে পারে। কারণ, মারা যাওয়ার আগে খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁদের কথাবার্তা হতো।’