অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

বর্তমান পরিস্থিতি মানসিকভাবে স্থির থাকার জন্য পুরোপুরি প্রতিকূল: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

নানা কারণে এখন আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। টলিউডের ফেডারেশনের সঙ্গে বিরোধের জেরে বর্জনের মুখে পড়েছেন এই অভিনেতা। কার্যত একঘরে হয়ে পড়া অভিনেতা এখন আর অভিনয়ের ডাক পান না। তবে নিজের গানের দল হুলিগানইজম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এবার দুর্গাপূজায় মুক্তি পাওয়া ‘রঘু ডাকাত’ সিনেমাতেও দেখা গেছে তাঁকে। সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য অভিনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর টিম থেকে জানানো হয় ‘বিতর্কিত’ বিষয় নিয়ে আপাতত কথা বলবেন না তিনি, অন্য প্রশ্নের উত্তর দেবেন। হোয়াটসঅ্যাপ ভয়েস মেসেজে পৃথা পারমিতা নাগের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অনির্বাণ।

প্রশ্ন

গানের দল নিয়ে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন, কেমন হলো সফর?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। খুব দারুণ হয়েছে। জার্নিটাই এত দীর্ঘ যে সেটাও একটা রোমাঞ্চ।

প্রশ্ন

আপনি তো ‘বিবাহ অভিযান’-এর মতো পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমা করেছেন আবার ‘মন্দার’-এর মতো ভিন্নধর্মীও করেছেন; বিভিন্ন ঘরানার সিনেমা অভিনেতা হিসেবে আপনাকে কতটা সমৃদ্ধ করে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমি প্রথম থেকেই বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। ‘আরশিনগর’ থেকে শুরু, তারপর ‘ঈগলের চোখ’, ‘ধনঞ্জয়’—এই তিনটি ছবিই যদি ধরা যায়, গোড়া থেকেই আমার পরিচালক-প্রযোজকেরা সব চরিত্রে সুযোগ দিয়েছেন। যেটা পরে সেট হয়ে গেছে যে আমি নানা চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী। ইয়েস, ইট ওয়াজ ফান টু বি এ ভারসেটাইল পারফরমার। তো আমার ভালো লাগে যে আমি থিয়েটারেও সেটা করার চেষ্টা করি, সিনেমাতেও সেটা করার সুযোগ পেয়েছি। এতগুলো ফর্মে আমি যে নানান রকম চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি এর জন্য আমি পরিচালক-প্রযোজকের কাছে কৃতজ্ঞ।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য। আইএমডিবি
প্রশ্ন

অভিনেতা থেকে পরিচালনায় কোন ভাবনা থেকে এসেছিলেন?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : অভিনেতা থেকে পরিচালনায় এসেছিলাম দুটি কারণে। এক, মহামারি আর দুই হচ্ছে, শ্রীকান্ত মোহতা ও মহেন্দ্র সনি স্পেশালি মনিদা (মহেন্দ্র সনি)। কারণ, করোনার সময় আমরা সবাই বাড়িতে বসেছিলাম তখন মনিদা আমাকে ইনসিস্ট করেন। বলেন, ‘এখন তো ফ্রি টাইম বাড়িতে বসে আছ, লেটস ডু সামথিং নিউ। কিছু একটা ডেভেলপ করো, আমরা যেটা করতে পারি।’ প্রথমে পরিচালনা নিয়ে কথা হয়নি। তখন আমি ও প্রতীক ম্যাকবেথের একটা অ্যাডাপ্টেশন করি ‘মন্দার’। পরে এসভিএফে সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করলে সবাই পছন্দ করে। কিন্তু তখনো পরিচালনা নিয়ে প্ল্যান হয়নি। আমরা অন্যান্য পরিচালকের কথা ভাবতে থাকি। কিন্তু যত দিন যায় মনিদা বলতে থাকে, ‘তোমরাই যেহেতু এটা নিয়ে ভেবেছ-লিখেছ তোমরাই এক্সিকিউট করতে পারবে ঠিকঠাক।’ আমার আসলে কোনো প্ল্যান ছিল না পরিচালনা করার। তবে কাজটা করে খুব মজা পেয়েছি। তারপর মনে হয়েছে পরিচালনার কাজটা আরেকটু করাই যায়। সেখান থেকে আরেকটা সিনেমা পরিচালনা করার কথা হয়েছিল শ্রীকান্তদার সঙ্গে সেটা হলো ‘বল্লভপুরের রূপকথা’।

প্রশ্ন

আপনার পরিচালিত কাজে একটা ভূত-যোগ থাকে; সারা দুনিয়ায় এখন হরর সিনেমা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে...

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : আমি একটা ওয়েব সিরিজ ও একটা সিনেমা পরিচালনা করেছি। ‘মন্দার’-এ কোনো ভূতের ব্যাপার নেই। যদিও সেখানে উইচ (ডাইনি) আছে, সেটা শেক্‌সপিয়ার লিখে গেছেন। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-তে হরর ঠিক বলব না ভৌতিক একটা ব্যাপার আছে, বাংলার মতো করে। আর এ ছাড়া আমি যেসব কাজে সৃজনশীল পরিচালক হিসেবে ছিলাম ‘অথৈ’, ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’, ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’, ‘ভূত্তেরিকি’ উল্লেখযোগ্য। শেষের কনটেন্টটাতে আবার ওই হরর নয়, মজা করে ভৌতিক একটা যোগ আছে। এখন ভারতবর্ষেও বিশেষ করে ‘স্ত্রী’ ফ্র্যাঞ্চাইজি হিট হওয়ার পর হরর ইউনিভার্সগুলো তৈরি হচ্ছে। সেখানে ওয়ার উলফ, ভ্যাম্পায়ার, ভূত—সবই আছে। আমি নিজে হলিউড হররের খুব ফ্যান নই। ‘কনজুরিং’ বা মাইক ফ্ল্যানাগান; সাম্প্রতিক সময়ে হররের মাধ্যমে যে ধরনের দারুণ দারুণ গল্প বলা হচ্ছে, সেগুলো খুব ভালো লাগে। এ ছাড়া কোরিয়ান হরর, জাপানিজ হরর, দর্শক হিসেবে আমার হররের ওপর একটা ঝোঁক আছে। তবে আমাদের এখানে যেটা হয়, আমি সেটার খুব একটা পক্ষপাতী নই। সব রকম কনটেন্ট থাকাই ভালো আর কী। প্রেমের গল্পও হবে, থ্রিলারও হবে, একদম ট্র্যাজেডিও হবে, ভূতও হবে। ভয়ের ভূত হবে, মজার ভূতও হবে। বৈচিত্র্য থাকলে মানুষের সেটার প্রতি আগ্রহটা থাকে।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রশ্ন

বাংলায় ভূত নিয়ে আরও কাজের সুযোগ আছে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : ভূত নিয়ে কাজের সুযোগ অবশ্যই আছে, কোনো সন্দেহ নেই। এমন অনেক ধরনের ভূতের গল্পই আছে, যেগুলো আমি বলব একদম বাংলার নিজস্ব যে ভূত, যেগুলো হাসির ভূত নয়, যেগুলো ভয়ের ভূত, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক চরিত্র আছে, যেগুলো চলচ্চিত্রায়িত হয়নি। আমি বলব, ভয়ের ভূত ব্যাপারটা এখনো বাংলা চলচ্চিত্রে খুব ভালোভাবে এক্সপ্লোরড নয়। সেটা করা যেতে পারে, সেই সুযোগ আছে।

প্রশ্ন

অভিনেতা হিসেবে সেটে গেলে কি পরিচালক সত্তাকে প্রশ্রয় দেন? নাকি বাধ্য অভিনেতা হয়ে থাকেন?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : না, আমি অভিনেতা হিসেবে সেটে গেলে পরিচালক সত্তা প্রশ্রয় পায় না। সেটে যিনি পরিচালক, আমার কাছে তার কথাই শিরোধার্য। একদম একটা অভিনেতার মন থেকেই সেটে কাজটা করি।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রশ্ন

নানা সময়ে আপনি মানসিক অবসাদ নিয়ে কথা বলেছেন। শিল্পীদের সঙ্গে মানসিক অবসাদের যোগ পুরোনো, এটাকে কীভাবে মোকাবিলা করেন?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, মানসিক অবসাদের স্বীকার আমি মাঝেমধ্যেই হই। সেটা আবার নানাভাবে দূরও হয়। তবে আমি খেয়াল করে দেখেছি, কাজের মধ্যে থাকা, নিজে যেটা চাই সেটা করতে পারাই সবচেয়ে বেশি হিল করে আমার ক্ষেত্রে। আমি আসলে আমার মানসিক অবসাদ থেকে বারবার বেরিয়ে আসতে পারি আমার কাজের জোরেই। মানে কাজ করতে পারলেই। আর আমি মানসিক অবসাদ ব্যাপারটাকে একদম নেতিবাচকভাবে দেখি না। অবশ্যই এটা শরীরের ওপর, মাথার ওপর একটা চাপ হয়, একটা কষ্ট হয়, শারীরিক কিছু সমস্যাও হয়। তবে আমি মনে করি, একজন আর্টিস্ট হিসেবে এটা নিজেদের কাজে ব্যবহার করাটাও আমাদের একটা পথ। আমি সেটা করে দেখেছি। এটার মধ্যে যেহেতু একটা সত্য আছে, এটা যদি আমরা কাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিই, তাহলে কাজটা থেকেও একটা সত্যের গন্ধ পাওয়া যায়। আমি সেটা করে দেখেছি, ফল পেয়েছি।

প্রশ্ন

বর্তমান পরিস্থিতি আসলে মানসিকভাবে স্থির থাকার জন্য কতটা অনুকূল?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : বর্তমান পরিস্থিতি আসলে মানসিকভাবে স্থির থাকার জন্য পুরোপুরি প্রতিকূল। একদমই অনুকূল নয়। আর এটাই নতুন পৃথিবীর নিয়ম। পুরো পৃথিবীটাই তো এখন একটা বাঁধনে বাঁধা হয়ে গেছে। তো মোটামুটি বলা যেতে পারে, পরিবেশগত বাস্তবতাটা একই। মানে সামাজিক বা রাজনৈতিক বাস্তবতা। সেটা অনুকূল নয়।

গানের দল খুলেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রশ্ন

আপনার গানের দল খোলার গল্প জানতে চাই?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : আমরা বন্ধুবান্ধব কজন মিলে অর্থাৎ আমি, শুভদ্বীপ, দেবরাজ, মাধব, কৃষাণু, নীলাংশু অনেক দিন ধরে থিয়েটার করা সূত্রে একসঙ্গে গানবাজনা করি। পরে সিনেমার ক্ষেত্রেও ‘মন্দার’-এর মিউজিক ডিরেক্টর শুভদ্বীপ। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’য় শুভদ্বীপ ও দেবরাজ একসঙ্গে মিলে গানের অ্যালবামটা তৈরি করেছিল। সেখান থেকেই নিজেদের মতো করে গান গাইবার জন্য দলটার জন্ম।

প্রশ্ন

গান তৈরির ক্ষেত্রে সময়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা কতটা প্রভাব ফেলে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : শুধু গান তৈরির ক্ষেত্রে নয়, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, নাটক, গান, কোনো লেখা—সবকিছুর ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বিক একটা প্রভাব ফেলে। কারণ, আমি যা বলতে চাইছি, আমি যা করতে চাইছি, সেটা তো পরিপার্শ্ব থেকেই আমার মধ্যে জড়িত হচ্ছে, তো আমি হচ্ছি এই সময়টা এই চারপাশটার ফসল। আমি বা আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে যেটা বলার চেষ্টা করব সেটাতে সব সময় এই চারপাশটা লেগে থাকে বা থাকবে।

‘রঘু ডাকাত’–এ অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রশ্ন

গত কয়েক বছরে ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ থেকে শুরু করে ‘রঘু ডাকাত’-এ নিজের লুক নিয়ে নিরীক্ষা করেছেন? সামনে অনির্বাণকে আর কীভাবে দেখা যাবে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ থেকে শুরু করে ‘রঘু ডাকাত’ এইগুলোতে আমার লুক নিয়ে বেশ নিরীক্ষা করা হয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে সেই কৃতিত্বটা দেব পরিচালকদের। কারণ, ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’-এ যে চরিত্র ছিল মোস্তাক, তার লুক কী হবে, তার পুরোটাই পরিচালক অর্পণ গড়াইয়ের ভাবনা। ‘রঘু ডাকাত’-এ আমার যে লুক, সেটা পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জির চিন্তা ছিল। আমার খুব ভালো লাগে এ রকম বিভিন্ন রকমের চরিত্রে লুকে উপস্থিত হতে পেরে। দর্শকের কাছেও একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে না। এটা খুব উপভোগ করি। ভবিষ্যতে দেখা যাক নতুন কোনো লুকে হাজির হতে পারি কি না। সেটা অবশ্যই নির্ভর করছে পরিচালকের ওপর।

প্রশ্ন

‘মহানগর ২’-এ আপনি ছিলেন। তৃতীয় কিস্তির শুটিং শুরু হবে। মোশাররফ আর অনির্বাণকে কি একসঙ্গে দেখা যাবে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : আমিও খুব উদ্‌গ্রীব হয়ে আছি মোশাররফ করিমের মতো দুর্দান্ত অভিনেতার সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়ার জন্য। দেখা যাক সেটা কবে হয়।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রশ্ন

বাংলাদেশের কোনো সাম্প্রতিক কাজ দেখেছেন কি না? দেখে থাকলে কোনটা ভালো লেগেছে?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : আমি নুহাশ হুমায়ূনের বিশাল বড় ভক্ত। আমি সম্প্রতি শেষ যেটা দেখেছি, সেটা হলো ‘পেট কাটা ষ’ ও ‘দুই ষ’। দুইটাই আমার খুব ভালো লেগেছে! আমি মনে করি, নুহাশের কাজ ইটস আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। একটা সাধারণ লোককথা, একটা সাধারণ গল্প বলতে বলতে নুহাশ যেখানে চলে যায় সেখানে গোটা পৃথিবীর শুরু, ব্রহ্মাণ্ডের শুরু, সভ্যতার শুরু। রসগোল্লার রস দিয়ে দেয়ালে যে বিগ ব্যাং তৈরি করা যায়, এটা তো নুহাশ আমাদের দেখিয়েছে। আমি বিরাট বড় ভক্ত নুহাশের। অপেক্ষা করে আছি ওর পরবর্তী কাজ দেখার জন্য। আরও অনেকের কাজ দেখি। খুব ভালো লাগে বাংলাদেশের কাজ।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

ক্যারিয়ারে অভিনয়, গান আর বক্তব্যের কারণে প্রশংসা, সমালোচনা দুই-ই পেয়েছেন—সব মিলিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য : প্রশংসা, সমালোচনা দুটোই পেয়েছি। আর উপলব্ধি হচ্ছে, যে সময়ের যেটা নিয়ম। আমাদের এখন সোশ্যাল মিডিয়া এসে গেছে, সাড়ে ৩ হাজার পোর্টাল এসে গেছে, এতগুলো খবরের কাগজ এসে গেছে; কিছু সময় একটা জিনিস নিয়ে যতটা আলোচনা দরকার, নেই সেটাও তো করতে হয়। কারণ, পাতা ভরাতে হয়, ওয়াল ভরাতে হয়। এটা একটা সময়ের উপাদান আর কী। যেমন প্রশংসা অনেক হয়, সমালোচনাও অনেক হয়। তো এইভাবে একটা অ্যালগরিদম সেট হয়ে গেছে। দর্শকও বুঝেছেন যে আচ্ছা এটার শুধু প্রশংসা করলেই হবে না, ভালো লাগলেই হবে না; এটাকে একটু রিভিউ করতে হবে। ক্রিটিসিজম করতে হবে। খুব অদ্ভুতভাবে ক্রিটিক্যাল সোসাইটি তৈরি হয়েছে। এটা একটা নতুন সময়ের দান। আগে যে মানুষের সিনেমা শুধুই ভালো লাগত, তা তো না। খারাপও লাগত। কিন্তু এই যে নতুনভাবে অদ্ভুত সব শব্দ এসে ঢুকেছে নেগেটিভ, পজিটিভ, ভালো দিক, খারাপ দিক—এইটা তো সিনেমা– নাটক-গানবাজনার সঙ্গে জড়িত ছিল না অনেকটা দিন পর্যন্ত। এটা একটা নতুন সময়ের দান, নতুন প্রযুক্তির দান। মানুষ যেহেতু সব সময় প্রযুক্তিকে ধরতে চায়; মানুষ এই জিনিসটাও গ্রহণ করেছে। আমার উপলব্ধি—যে সময়ে আমরা কাজ করছি, যে সময়ে আমরা বাঁচছি, আমাদের সেই সময়ের উপাদানগুলো নিয়ে চলতে হবে। সেগুলো পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক। এরই মধ্যে ভালো আছে এরই মধ্যে খারাপ আছে। কখনো আনন্দ বেশি হবে, কখনো বেদনা বেশি হবে; এই নিয়েই চলতে হবে।