
একটা সময় ছিল যখন ‘ঢাকা পদাতিক’-এর অধিকাংশ নাটকেই মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতেন মৌসুমি মার্টিন ও জন মার্টিন। আশির দশকে মঞ্চের পাশাপাশি টিভি নাটকেও তাঁদের সরব উপস্থিতি ছিল। ২০০১ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী হয়েছেন এই শিল্পী দম্পতি। বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তাঁরা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় অভিনয়শিল্পী মৌসুমী মার্টিনের একক অভিনয়ে ‘সুধীজন, আমার বাবাকে ক্ষমা করবেন’ শিরোনামের একটি ভিডিওচিত্র নির্মিত হয়েছে। এই ভিডিওচিত্রটির চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি নির্দেশনার দায়িত্বটিও পালন করেছেন জন মার্টিন। ভিডিওচিত্রটির শিরোনামে লেখা রয়েছে— মৌসুমী মার্টিনের কবিতা অভিভাষণ। টেলিফোনে এই শিল্পী দম্পতির সঙ্গে কথা হয়।
ভিডিওচিত্রটিকে কোন নাম দেবেন? কবিতা অভিভাষণ? এমন প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়া থেকে জন মার্টিন বলেন, মৌসুমী মার্টিনের কবিতা অভিভাষণ, একটি ভিডিওচিত্র: ‘সুধীজন, আমার বাবাকে ক্ষমা করবেন’।
কোন ভাবনা থেকে এই কবিতা অভিভাষণ? এই প্রশ্নে মৌসুমী মার্টিন বলেন, একজন মেয়ে তাঁর বাবাকে হারিয়েছে। বাবা ছাড়া কীভাবে বড় হয়েছে, বাবা চলে গেছেন— কিন্তু মেয়ে বেড়ে উঠেছে তাঁর প্রিয়তম মানুষটিকে ছাড়াই। এই মেয়েটির কথা আমরা জানতেও চাই না। জানতে ইচ্ছে হয়— মেয়ের এই সাহস আর প্রত্যয় কোন সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, এই মেয়েটি কেবল একজন বিশেষ মেয়ে নয়। যারা দেশ আর মাটির স্পর্শের কাছে আজীবন ঋণী, যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রশ্নে দ্বিধাহীন, অনড়— এটা তাঁদের কথা। ক্ষমা চেয়েও যে কত কথা বলা যায়, কোনো কিছু না বলে।
চিত্রনাট্যটি লেখার পেছনে কী ভাবনা কাজ করেছিল? এমন প্রশ্নে জন মার্টিন জানান, যে বিষয় নিয়ে চিত্রনাট্যটি লেখা— তা এত ভারী, এত বিষাদময় যে শুধু আবৃত্তিতে পুরো বিষয়টি ধারণ করা সম্ভব নয় বলেই তাঁর মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে এখানে আবেগ প্রকাশের একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে হবে। তাই কবিতার সঙ্গে অভিনয় যোগ করেছি। কিন্তু সমস্যা হলো, এ দুই মাত্রার সম্মিলন ঘটাব কেমন করে?
এ প্রসঙ্গে জন মার্টিন আরও বলেন, মৌসুমীর মতো অভিনেত্রীকে হাতের কাছে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি জানি, মৌসুমীর মনে দেশ-মাটির প্রতি ভালোবাসা অনেক গভীর। তাই অনেক মমতা দিয়েই সে এক পিতৃহীন মেয়ের কথা ফুটিয়ে তুলতে পারবে। কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, হয়েছেও তাই।
জন মার্টিন আরও বলেন, এ ভিডিওচিত্রে মৌসুমী তাঁর বাবার অসমাপ্ত কাজের কথা বলেছে। যদিও পুরো চিত্রনাট্যে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সবাই বুঝবেন এ কেবল মৌসুমীর পিতার কথা নয়। এ আমাদেরও সবার পিতারই কথা। যার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রত্যয়ে আমরা অনড় ছিলাম, এখনো আছি আর জেগে থাকব।
প্রবাসী হলেও অভিনয়শিল্পী মৌসুমী মার্টিন ও জন মার্টিন নাটককে কখনোই ছেড়ে থাকেননি। অস্ট্রেলিয়াতেও গড়ে তুলেছেন বাংলা নাটকের দল ‘আলাপন’। আলাপন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন বর্ণ মোস্তফা, এ দম্পতির বড় ছেলে ঋভু মার্টিন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া কয়েকজন বাঙালি ছাত্রও তাঁদের এই নাট্যচর্চার প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রবাসের অচেনা বাতাস, মাটিতে তাঁরা সবাই মিলে নাটকের বীজ বোনার চেষ্টায় ব্রতী।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ‘আলাপন’ পাঁচটি নাটক মঞ্চস্থ করেছে। মৌসুমি মার্টিন নব্বই মিনিটের ‘একটি সাধারণ গল্প’ নাটকে একক অভিনয় করেছেন।
প্রসঙ্গত, কবিতা অভিভাষণ ‘সুধীজন, আমার বাবাকে ক্ষমা করবেন’ ভিডিওচিত্রটিতেও একক অভিনয় করেছেন অভিনয়শিল্পী মৌসুমী মার্টিন। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন জন মার্টিন। ভিডিওগ্রাফি,আবহসংগীত, শব্দ সংযোজনা এবং সম্পাদনা করেছেন জিয়া আহমেদ। গ্রাফিক ডিজাইনে রনি ডি রোজারিও এবং সামগ্রিক তত্ত্বাবধান এবং ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মলি আহমেদ।