বছর ঘুরল, নওবা তাহিয়ার ক্যারিয়ারও বাঁক নিল। গত বছরের ঈদে রুবেল আনুশের টিভি নাটক ‘মায়াপূরাণ’ দিয়ে একক নাটকে অভিনয় শুরু আর চলতি বছর তাঁর অভিনীত নাটক চুপি চুপি ছয় দিন ধরে ছিল ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে; এই সাফল্য উপভোগ করলেও ‘ধীরে চলো’ নীতিতে অটল থাকতে চান তরুণ এই অভিনয়শিল্পী।
গত শনিবার নওবা তাহিয়ার সঙ্গে যখন কথা হয়, তখনো চুপি চুপির সাফল্য টাটকা, আলাপের শুরুতেই তাই এল এ নাটকের প্রসঙ্গ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ইউটিউবে মুক্তির পর ছয় দিন ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে ছিল ইমরাউল রাফাতের নাটকটি। এতে নওবার বিপরীতে ছিলেন এই সময়ে ছোট পর্দার ব্যস্ত তারকা নিলয় আলমগীর। এই যে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে থাকা, তাঁর অভিনীত নাটকটি নিয়ে আলোচনা; এটাকে নওবা কীভাবে গ্রহণ করেন? ‘নাটকটির এখন ভিউ প্রায় ৮৫ লাখ! এটা আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষ ওঠার পর নির্মাতা রাফাত ভাই যেমন বলেছেন, “মেইন স্ট্রিম দুনিয়ায় তোমাকে স্বাগত।” ইউটিউবে প্রচারিত হলে আমি সব সময় দর্শকের মন্তব্য পড়ি। এ নাটকের ক্ষেত্রে দেখলাম, দর্শক আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করেছে। এটাই আমি সারা জীবন চেয়েছি। কারণ, আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়, আমি কেবল অভিনয় দিয়েই আলোচনায় থাকতে চাই,’ বলেন নওবা।
নওবা মনে করেন, এই নাটকে তাঁর অভিনীত চরিত্রটি তাঁকে বিভিন্ন ধরনের দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নওবা বলেন, ‘এটা কেবল গতানুগতিক কমেডি নাটক নয়, একটা আবেগের যোগও আছে। একজন টিনএজার মেয়ের পরিণত হয়ে ওঠার গল্প এটা। এই যাত্রা খুব মজার। এ জন্যই হয়তো মানুষের এত ভালো লেগেছে। বাস্তবে আমি যেমন, নাটকের চরিত্রটি তার পুরোপুরি বিপরীত। নতুন নতুন এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আমাকে আরও বড়সংখ্যক দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে।’
বাস্তবে আমি যেমন, নাটকের চরিত্রটি তার পুরোপুরি বিপরীত। নতুন নতুন এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্র আমাকে আরও বড়সংখ্যক দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে।নওবা তাহিয়া
মায়ের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত হন নওবা। শুরুটা আবৃত্তি দিয়ে, বিটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতেন। এরপর বিটিভিতেই উপস্থাপনা শুরু করেন।
মায়ের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত হন নওবা। শুরুটা আবৃত্তি দিয়ে, বিটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতেন। এরপর বিটিভিতেই উপস্থাপনা শুরু করেন। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র করতে শুরু করেন। তবে নওবা ব্যাপক পরিচিতি পান চরকিতে প্রচারিত মিজানুর রহমান আরিয়ানের ওয়েব ফিল্ম পুনর্মিলনে দিয়ে। গোলাম ফরিদা ছন্দা, সিয়াম আহমেদ, তাসনিয়া ফারিণ, নূর ইমরান মিঠুর মতো অভিনয়শিল্পী থাকার পরও ‘সিন্থি’ চরিত্রে অভিনয় করে আলাদাভাবে নজর কাড়েন নওবা। এরপরই ছোট পর্দার কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।
অবশ্য এই ব্যস্ততার মধ্যেও অবশ্য ‘তবে’ আছে। কারণ, নওবা এখনো শিক্ষার্থী, ঢাকার একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়েন। ক্লাস, পরীক্ষা সামলে সময়–সুযোগ মিললে সেই কাজই কেবল করেন, যা তাঁকে টানে। নিজের এই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভালো গল্পে, ভালো চিত্রনাট্যে, ভালো পরিচালকের সঙ্গে সব শিল্পীই কাজ করতে চান। আমি জানি, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়েই এত বেছে কাজ করতে পারব না। কিন্তু তারপরও যতটা সম্ভব করতে চাই। কারণ, যেহেতু পড়াশোনার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাকে অভিনয় করতে হয়, ফলে খুব কম কাজ করি। মাসে সাধারণত একটির বেশি কাজ করা হয় না। মাঝেমধ্যে হয়তো সংখ্যাটা দুই থেকে তিন হয়। তাই চেষ্টা করি, যা-ই করি না কেন, সেটা যেন ভালো গল্পের কাজ হয়। এ ক্ষেত্রে কত ভিউ হবে, কোন মাধ্যমের কাজ—এসব মাথায় রাখি না।’
পড়াশোনার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাকে অভিনয় করতে হয়, ফলে খুব কম কাজ করি। মাসে সাধারণত একটির বেশি কাজ করা হয় না। মাঝেমধ্যে হয়তো সংখ্যাটা দুই থেকে তিন হয়।নওবা তাহিয়া
পর্দায় চরিত্র হয়ে উঠতে একেক শিল্পী একেকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন। নওবা জানান, তিনি শুরুতে নির্মাতার সঙ্গে নিজের চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেন। পরিচালকের দর্শন বুঝে নেওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে চিত্রনাট্য পড়েন; এতে চরিত্রটির পুরো জার্নি সম্পর্কে একটা ধারণা হয়। এরপর চরিত্রটি নিয়ে নিজের বোঝাপড়ার সঙ্গে নির্মাতার দর্শন মেলান। আলাপে আলাপে এভাবেই চূড়ান্ত হয় চরিত্রটি। আরেকটি বিষয়ে নওবা জোর দেন, সেটা হলো নিজের অভিনীত চরিত্রটির পোশাক। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি বলেন, ‘নাটকে আমি নিজের কস্টিউম নিজেই ব্যবস্থা করে চেষ্টা করি এক চরিত্রের সঙ্গে যেন অন্য চরিত্রের পোশাক মিলে না যায়। এই বৈচিত্র্য থাকলে দর্শকের একঘেয়েমি লাগে না।
সামনেই ঈদ। ছোট পর্দায় এই উৎসবের সময় প্রচুর নাটক তৈরি হয়। তবে নওবা তাহিয়া ঈদের কাজের সংখ্যা নিয়ে এখনো নিশ্চিত নন। ২৫ মার্চ ঈদের নাটকের শুটিং শুরু করেছেন। এ ছাড়া আগে বেশ কয়েকটি নাটক করা আছে, সেগুলোর মধ্যে কোনোটি হয়তো ঈদে আসতে পারে।
Also Read: ‘দুটো একসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়’