‘ঠিক এই কারণে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়’

টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ে দেখা না গেলেও মঞ্চে হঠাৎ হঠাৎ অভিনয়ে দেখা যায় তনিমা হামিদকে। আজ শনিবার ২৭ আগষ্ট এই অভিনয়শিল্পীর জন্মদিন। এই অভিনয়শিল্পী এখন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতাও করছেন। জন্মদিন উপলক্ষে কথা হলো তাঁর সঙ্গে

প্রশ্ন

শুভ জন্মদিন

ধন্যবাদ।

তনিমা হামিদ
প্রশ্ন

অভিনয়ে একেবারে নিয়মিত নন, তারপরও দেখা যাচ্ছে এই দিনে ফেসবুকে বিনোদন অঙ্গনের অনেকে আপনাকে নিয়ে অভিনয় সময়ের নানা স্মৃতিকথা লিখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

ঠিক এই কারণে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। এত দিন ধরে মিডিয়াতে নেই, তারপরও সবাই যেভাবে মনে করছে, যেভাবে কথা বলছে, এসব দেখে সত্যিই নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। গতকাল রাতে তো এমন হয়েছে, ডালিম (তনিমা হামিদের স্বামী শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম) বলছিল, ফোন সাইলেন্ট করো। কারণ, সমানে মেসেজ ও ফোনকল আসছিল। ঘুমাতে পারছিলাম না। পরে ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমাতে হয়েছে। এগুলো একটা সময় ঝামেলার মনে হয়, কিন্তু এটা তো মানুষের ভালোবাসা, তাই না। মানুষ তো একজীবনে এত ভালোবাসা পায় না। এই যে এত ভালোবাসা পাচ্ছি, অভিনয় ছাড়া এটা শোধ করারও কোনো উপায় নেই। তবে আমি চেষ্টা করি, যারা আমাকে উইশ করে প্রত্যেককে পার্সোনালি উত্তর দিতে। কিন্তু ফেসবুক আমাকে হেল্প করে না, একটা সময় হ্যাং হয়ে থাকে, সবার উত্তর দিতে পারি না।

তনিমা হামিদ
প্রশ্ন

এসবই তো অভিনয়ের কারণে, একটা সময় নিয়মিত অভিনয়ে থাকা মানুষটি অভিনয় অঙ্গনকে এখন কতটা মিস করে?

ফেসবুকে পুরোনো নাটকের কোনো ক্লিপ বা স্থিরচিত্র দেখলে সত্যি বলতে অনেক মিস করি। আসলে লাইফটা এখন এমনও হয়ে গেছে, আমি যে এভরিডে মিস করার সুযোগ পাই, তা–ও কিন্তু না। কারণ, আমার কাজের ধরনটা এমন যে প্রতিদিনই ব্যাস্ত থাকতে হয়। ছেলেটা বড় হচ্ছে, ওকে সময় দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আছে। কিন্তু বিশেষ দিনে যখন দেখি নাটকের ছবিগুলো, এমন কারও দেখা হয়, যাদের সঙ্গে অভিনয় করেছি, তারাও যখন একটা ছবি দিয়ে উইশ করে কিছু বলে, নানান কিছু লেখে—তখন না কিছুক্ষণের চুপ হয়ে যাই। মেমোরিগুলো খুঁজে বেড়াই। তখন ভাবতে থাকি, আমি তো অমুক জায়গা শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। কাজ করেছিলাম। তবে অভিনয়টা খুব একটা মিস করি না।

প্রশ্ন

কী কারণে?

অভিনয়টা মিস করি না, কারণ মঞ্চে তো টুকটাক কাজ করছি। অভিনয়ের সময় টেলিভিশনে কলিগদের সঙ্গে কাটানো সময়টা মিস করি তখন, যখন রিলেটেড কিছু চোখের সামনে আসে। অনেকে আবার স্মৃতিচারণা করে মেসেঞ্জারে লেখে, অমুক সময় আপনি আমার অমুক কাজটা করেছিলেন, তখন খুব মনে হয়।

স্বামী শামসুদ্দীন হায়দার ডালিমের সঙ্গে তনিমা হামিদ
প্রশ্ন

একটা সময় দেখা গেছে, সাহিত্যধর্মী কাজেও আপনার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি...

(হাসি)। একদম তাই। মজার একটা ঘটনা শেয়ারও করতে চাই, কাজী নজরুল ইসলামের ‘শিল্পী’ নাটকে আমি দুইবার অভিনয় করেছি। প্রথমটাতে ছিলাম আমি, জাহিদ হাসান ও অপি করিম। সেই নাটকে আমি ছিলাম জাহিদ হাসানের স্ত্রী, অপি আপা করেছিল প্রেমিকার চরিত্র। এরপর আবার যখন বাংলাভিশনে ‘শিল্পী’ নাটকটি নাহিদ আহমেদ পিয়াল বানাচ্ছিলেন, তখন ফোন করে বললেন, ‘তনিমা আমরা তো নজরুলের শিল্পী নাটকটা করছি, আপনাকে কাজ করতে হবে।’ আমি বললাম, শিল্পী নাটকে তো আমি অভিনয় করেছি। জানতে চাইলেন, কোন চরিত্র? বললাম, শিল্পীর স্ত্রীর চরিত্র। তখন বললেন, এবার তাহলে প্রেমিকার চরিত্র করেন। (হাসি)। পরেরবার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন তানভীন সুইটি আপা আর স্বামী আরমান পারভেজ মুরাদ।

প্রশ্ন

সময়ের অভাবে কি টেলিভিশনে নাটকে অভিনয় করছেন না?

কাজের হয়তো সুযোগ আছে, কিন্তু আমাকে তো সে রকম স্ক্রিপ্টও পেতে হবে। মাছরাঙা টেলিভিশনে যখন অনেক দিন পর রান্নার একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি, ওটার পর অনেক নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই। বেশির ভাগ ছিল সিরিয়াল। আমাদের এখানে এখন তো সিরিয়াল কেউ দেখে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখছি, গল্পের ঠিক নেই, নির্মাণ ঠিক নেই। তাই সময়ও দিতে ইচ্ছা করে না। না হয় প্রেম করো, অমুক করো, তমুক করো—এই সব চরিত্র তো আমার করতে ইচ্ছা করে না।

তনিমা হামিদ
প্রশ্ন

আপনি কেমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?

এমন চরিত্রে কাজ করতে চাই, যেটার প্রস্তাব পেলে মনে হবে, আমি ওই চরিত্রটা হতে চাই।

প্রশ্ন

শিক্ষকতায় ব্যস্ত হওয়ার কারণেই কি অভিনয়ে সময় কম দিচ্ছেন?

শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাকে একটা এনজিওতেও সময় দিতে হয়, তাই খুব ভালো কিছু না হলে অভিনয় করতে ইচ্ছা করে না।

প্রশ্ন

আপনি কোন বিষয় পড়ান?

আমি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় পড়াই।

তনিমা হামিদ
প্রশ্ন

আপনার শিক্ষার্থীরা তো জানেন, অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।

(হাসি), জানে। ছাত্রছাত্রীরা আমাকে একটু ভয় পায়। শিক্ষক হিসেবে আমি একটু স্ট্রিক্ট। ক্লাস শেষে যখন আমার রুমে থাকি, তখন পুরোনো শিক্ষার্থীদের অনেকে আমার কাছে আসে, তখন ওরা বলে, ম্যাম আপনার অভিনয় দেখেছি। ইউটিউবে আপনার ওই নাটক দেখেছি। তারা খুবই এক্সাইটেড আমার অভিনয়ের খবরে। মাছরাঙা টেলিভিশনে যে অনুষ্ঠানটা করেছি, এই খবরটাও শিক্ষার্থীরা জেনেছিল। তারা আমার চেয়েও বেশি এক্সাইটেড ছিল, বলছিল, ম্যাম আপনাকে আবার স্ক্রিনে দেখতে পাব।

প্রশ্ন

তার মানে শিক্ষক হিসেবে আপনি ভালোই কঠোর?

তবে আরেক অর্থে বেশি কঠোর বলাও যাবে না। আমি দেখেছি, আজকালকার ছেলেমেয়েরা নিয়ম মানতে চায় না। আমি তাদের বোঝাতে চাই, নিয়মগুলো মানা খুব দরকার। তারা সেটা বুঝতেও পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার সেকশনে ক্লাসের সময় কোনো সিট খালি থাকে না। শিক্ষার্থীরা তো এ–ও বলে, ম্যাম এক বছর অপেক্ষা করেছি, কবে আপনার ক্লাস করব। আমি কঠোর কিন্তু আমার ছাত্রছাত্রীরা আমাকে পছন্দ করে।