
প্রথম নাটকে অভিনয়, নিজের ওপর আস্থা কম ছিল। শুরুতে ভেবেছিলেন, সংলাপই হয়তো বলতে পারবেন না। যে কারণে প্রথম দিন যে দৃশ্যের শুটিং হয়; তাতে কোনো সংলাপই ছিল না। পরে বসে বসে ফারহান আহমেদ জোভানের অংশের শুটিং দেখেন। এভাবেই লাভ সেমিস্টার নাটকে ভয়কে জয় করেন নাজনীন নীহা। তিনি ভক্তদের কাছে হয়ে যান ‘মাধবীলতা’। এভাবেই তিন বছর আগে ফারহান আহমেদ জোভানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন নীহা। সেই জোভান-নীহাই এখন নাটকের আলোচিত জুটি।
নীহা জানালেন, জুটি হয়ে শুধু লাভ সেমিস্টার নয়, আশিকি, হৃদয়ে হৃদয়, লাভ লাইনসহ ১১টির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে আটটি নাটকের ভিউ কোটির বেশি। প্রথম নাটকের ভিউ ৩ কোটি পূর্ণ হয়েছে; লাভ লাইন-এর ভিউ ৪ কোটির কাছাকাছি।।
প্রবীর রায় জানান, তিন বছর আগে লাভ সেমিস্টার নাটকের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। এ জন্য বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীর অডিশনও নেন। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে দরকার ছিল মিষ্টি হাসির একজন অভিনেত্রী। কাউকে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজার পর অবশেষে মিষ্টি হাসির একটি মেয়েকে খুঁজে পেলেন। এই মেয়েটিই নীহা। হাসি দিয়েই প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি।
নাটকটি অল্প সময়েই দর্শকদের পছন্দের তালিকায় চলে আসে। এক দিনেই রেকর্ড ভিউ হয়। শুধু দর্শকই নন, জোভান–নীহা জুটি পরবর্তী সময়ে অন্য পরিচালকের কাছেও পছন্দের জুটি হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার এই অভিনেত্রী প্রথম আলোকে জানান, জুটি হয়ে অভিনয় করতে গিয়ে সব সময়ই একটা আতঙ্ক বা ঝুঁকি থাকে। কারণ, কোনো কাজ ভালো না হলে সেটা দর্শক গ্রহণ করবে না।
নীহা বলেন, ‘আমাকে আর জোভান ভাইকে দর্শক পছন্দ করেন, এটা আশীর্বাদ মনে করি। দর্শকদের এই ভালোবাসা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কখনোই যেন দর্শকেরা একঘেয়েমিতে না ভোগেন, সে চেষ্টা করি। গল্প, লুক, পটভূমিতে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে চাই। আর আমি মনে করি, ভালো কাজ করলে দর্শক এমনিতেই জায়গা করে দেবে। জুটিতে সেটাই কাজে লাগাতে চাই। প্রতিটা চরিত্র দিয়েই মন জয় করতে চাই।’
এখন জুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও শুরুর সেই দিনগুলো এখনো নীহার মনে আছে, ‘প্রথম দিন বসে বসে শুটিং দেখেছি। এভাবে ভয় কাটিয়েছি। আমি খুব আস্তে আস্তে কথা বলতাম। এটা নিয়েও অনেক মজা হতো। শুরু থেকে এখনো জোভান ভাইয়া আমাকে অনেক সহায়তা করেন। আমরা একসঙ্গে নিয়মিত কাজ করছি। দর্শক যত দিন আমাদের কাজ পছন্দ করবে, তত দিন আমরা কাজ করে যাব।’
আগেও একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন ফারহান আহমেদ জোভান। কেয়া পায়েল, তানজিম সাইয়ারা তটিনীসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকে দেখা গেছে। তবে চলতি বছর দর্শকদের মধ্যে নীহাকে ঘিরে নাটকগুলোই বেশি আলোচনায়। জুটি হয়ে কাজ করা নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন জোভান। ‘ইন্ডাস্ট্রিতে সব সময়ই জুটি প্রথাকে গুরুত্বও দেওয়া হয়েছে। একসময় দেখেছি, এ ওর সঙ্গে কাজ করবে, ও ওর সঙ্গে কাজ করবে। জুটির বাইরে অন্য কেউ শিডিউলই পাবে না। যে কারণে একসময় অনেক সহশিল্পীর শিডিউল পাইনি। জুটি নিয়ে এমন কিছু হোক, সেটা চাই না; আলাদা করে ভাবিও না।’
জোভান জানিয়ে রাখলেন, দর্শকদের জন্যই কাজ করেন। জুটির এই ভালোবাসা ধরে রাখতে চান। ‘আমার আর নীহার কাজ কম হয়। এটাই আমাদের বিশেষত্ব। একসঙ্গে বেশি কাজ করতে চাই না। আমাদের বিরতি দিয়ে দেখলেই হয়তো দর্শক পছন্দ করেন,’ বলেন জোভান।
জোভান ও নীহা জুটিকে পর্দায় নিয়ে আসা পরিচালক প্রবীর রায় মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এই জুটির সাফল্য নিয়ে শুরু থেকেই আশাবাদী ছিলাম। এই জুটিটা সব সময়ই বিশেষ ছিল। শুরু থেকেই তাদের বলেছি বিশেষত্ব বজায় রাখতে একসঙ্গে কম কাজ করতে। তাহলে দর্শকদের একটা বাড়তি আগ্রহ থাকবে। নীহা কিন্তু সেটাই চেষ্টা করছে। এ কারণে সামনে ওদের সিনেমাতেও জুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো কাজ করলে বড় পর্দাতেও তারা টিকে থাকবে।’