
২০০৬ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নেন অপর্ণা ঘোষ। এরপর অভিনয়ে নাম লেখান। ২০১২ সালে ইমরাউল রাফাতের ‘মেড ইন চিটাগাং’ নাটকে নূরজাহান চরিত্রে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সংলাপ বলে নজর কাড়েন চট্টগ্রামের মেয়ে অপর্ণা। কয়েকটি সংলাপ তো মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর টানা অভিনয় করেছেন ২০২০ সাল পর্যন্ত। ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও ‘গণ্ডি’ সিনেমায় অভিনয় করে দুবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তারপর গত কয়েক বছর হয় অভিনয়ে নেই অপর্ণা, বিনোদন অঙ্গনের কোনো আড্ডায়ও তাঁকে দেখা যায় না। এখন কোথায় এই অভিনেত্রী?
আসলে ২০২০ সালে বিয়ের পর থেকেই অভিনয়ে অনিয়মিত অপর্ণা ঘোষ। বিয়ের কয়েক মাস পর স্বামীর কাছে বেড়াতে যান। অপর্ণার স্বামী সত্রাজিৎ দত্ত পেশায় আইটি ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করেন জাপানে। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার আগেই অবশ্য যেসব পরিচালকের কাজ বাকি ছিল, সেগুলোর শুটিং শেষ করে যান অপর্ণা। জাপানে যাওয়ার পর দেশটি তাঁর ভালো লেগে যায়। প্রথম দিকে ওসাকাতে থাকতেন অপর্ণা। সেখানে হিয়োশি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গত সেপ্টেম্বরে তাঁরা ওসাকা থেকে টোকিওতে চলে গেছেন। অপর্ণা এখন টোকিওর নেরিমা এলাকার সেতাগায়া হাটটো নার্সারি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক।
সেখান থেকে গত রোববার সকালে প্রথম আলোকে অপর্ণা বলেন, ‘নাটক-সিনেমার জগৎ থেকে দূরে থাকতে তো খারাপ লাগছেই। শুটিংয়ের দিনগুলো মিস করি। আমরা একটা পরিবারের মতো ছিলাম। সবার কথা মনে পড়ে।’
শিক্ষকতা প্রসঙ্গে অপর্ণা বলেন, ‘প্রথম দিকে যে স্কুলে শিক্ষকতা করেছি, সেখানকার প্রিন্সিপাল জানতেন, আমি অভিনয়শিল্পী। সে কারণে আমাকে খুব সম্মান করতেন। আমার শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি জানত। ওরাও খুব পছন্দ করত। তাই শিক্ষকতা পেশাটা আমার বেশ ভালো লাগে। আমার স্বামী টোকিওতে নতুন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে বদলি হয়ে এসেছে। তাই আমিও চলে এসেছি। আমার আগের স্কুলের প্রিন্সিপাল আমার নাম সুপারিশ করেছেন। এখানকার পরিবেশও আমার বেশ ভালো লাগছে। টোকিওতেও শিক্ষকতা উপভোগ করছি।’
জাপানের কোন বিষয়টি বেশি ভালো লাগে, জানতে চাইলে অপর্ণা বলেন, ‘এখানে মানুষ খুব নিয়ম মেনে চলে। আর এখানকার সবাই খুব শান্তিপ্রিয়।’ শিক্ষকতার পাশাপাশি সময় পেলে ঘুরেও বেড়ান। বলেন, ‘ছুটির দিনে স্বামীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াই। আমার স্বামী ছবি তুলতে ও বেড়াতে ভালোবাসে। আমিও বেড়াতে পছন্দ করি। এ দেশের অনেক কিছু দেখেছি। অনেক ঘুরেছি। শুরুতে এখানকার খাবার বেশি ভালো না লাগলেও এখন লাগে। এ দেশের খাবার এখন বেশ পছন্দ। তবে যত দূরেই থাকি, নিজের দেশকে মনে পড়ে। চেনা সবকিছু মনে পড়ে।’
অপর্ণার বাবা অলোক ঘোষ মঞ্চের মানুষ, সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই মঞ্চের সঙ্গে পরিচয়। মায়ের চাকরির কারণে ছোটবেলায় রাঙামাটিতে থাকতেন অপর্ণা। বাবার চাকরি ছিল চট্টগ্রাম শহরে, তিনি রাঙামাটি যেতেন প্রতি বৃহস্পতিবার। শুক্র ও শনিবার থাকতেন। এ দুই দিন সবকিছু বাদ, শুধু বাবার সঙ্গে ঘোরাঘুরি। এর মধ্যে বাবার হাত ধরে মঞ্চে আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের নাট্যদল নান্দিকারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
অপর্ণা বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে নিয়মিত বাবার সঙ্গে নাটকের শো দেখতে চলে আসতাম। চট্টগ্রাম শহরে তো বটেই, ঢাকার বেইলি রোডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও গেছি। আমিও কাজ করতাম টুকটাক। যেমন মঞ্চে ঢোকার আগে শিল্পীর পোশাকটা এগিয়ে দেওয়া, তাঁদের পানি খাওয়ানো। বেশ মজা পেতাম এসব করে। এরপর কলেজে ভর্তি হলাম চট্টগ্রামে। তখনই বাবার সঙ্গে থাকা শুরু। এবার আমি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হলাম। প্রথম অভিনয় করি ‘কোর্ট মার্শাল’ নাটকে। বাবা-মেয়ে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। প্রথমবার মঞ্চে উঠে তো আমার কাঁপাকাঁপি অবস্থা! সংলাপ বলার সময় ভীষণ ভয় লাগছিল। তখন বাবাও মঞ্চে ছিলেন। ঠিকই তিনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন। বাবার সাহায্যে সেই যাত্রায় বেঁচে যাই। অবশ্য পরে পাপ–পুণ্য নাটকে সেই জড়তা কেটে যায়।’
লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা চারে জায়গা করে নেওয়ার পর নাটকে অভিনয়ের জন্য ডাক পেতে শুরু করেন অপর্ণা। তখনো চট্টগ্রামে থাকতেন। অভিনয়ের ডাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া চলল বছরখানেক। এরপর ২০০৮ থেকে পাকাপাকিভাবে ঢাকায় থাকা শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ঢাকা হয়ে এখন ওসাকায় ‘নোঙর’ ফেলেছেন অপর্ণা।