পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে। ক্যারিয়ারের শুরুটা গান দিয়ে। হওয়ার কথা ছিল গায়ক। কিন্তু গায়ক না হয়ে তিনি হয়েছেন ভক্তদের কাছে নায়ক। যদিও তিনি সব সময় বলেন, ‘আমি নায়ক হতে চাই না।’ বলছি সময়ের জনপ্রিয় মুখ খায়রুল বাসারের কথা। আজ এই অভিনেতার জন্মদিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর থেকেই চেয়েছিলেন অভিনয়ে নাম লেখাবেন। সেই প্রস্তুতি শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। পরে তিনি প্রথম নাটকে নাম লেখান ২০১৭ সালে। এর কারণ, তিনি পছন্দমতো চরিত্র পেতেন না। আবার প্রধান চরিত্রেও তাঁকে ডাকা হতো না। অভিমান করে তিনি এর আগে বলছিলেন, ‘আমাদের নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্র ছাড়া বাকি চরিত্রের প্রতি মনোযোগ ও গুরুত্ব কম থাকে। এসব চরিত্র কখনো গল্পে প্রয়োজন নেই বললেও চলে। কিন্তু আমি মনে করি নাটকে প্রতিটা চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ।’
দীর্ঘ সময় এই অভিনেতাকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। এভাবেই খায়রুল বাসার একটু একটু করে ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়েছেন। একসময় তিনি ব্যস্ত হয়ে যান নাটকে। তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং ‘পুনরাবৃত্তি’। এটি পরিচালনা করেন সালেহ সোবহান অনীম। এর পর আর পেছনে তাকিয়ে থাকতে হয়নি। একে একে তিনি কাজ করে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।
‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ প্রকল্পে ‘কথা হবে তো’, ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পান। এ ছাড়া ‘ইতি তোমারই ঢাকা’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘মাকড়সা’, ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’, ‘বিলাপ’, ‘মহানগর’, কাজলরেখাসহ অনেক কাজ খায়রুল বাসারকে স্থায়ীভাবে জায়গা করে দিয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন দর্শক–পছন্দের অভিনয়শিল্পী।
তবে নায়ক নন, খায়রুল বাসার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অভিনয় শব্দে। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নায়ক হওয়ার চিন্তা করিনি। আমি কখনোই নায়ক হতে চাইনি। এখনো চাই না। অভিনেতা হতে চেয়েছি সব সময়। সেভাবেই আমি পথ চলছি। যে কারণে গল্পনির্ভর কাজ করার চেষ্টা করি।’
যে কারণে পার্শ্বচরিত্র হলেও কাজে কখনোই বাধা তৈরি করে না। সিনেমার পার্শ্বচরিত্র অভিনয় নিয়ে খায়রুল বাসার এর আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে আমি সিনেমায় অভিনয় করতে ভালোবাসি। গল্প, চরিত্র, প্রেক্ষাপট আমার কাছে প্রাধান্য পায়। চরিত্র পছন্দ হলে ছাড়তে চাই না।’
বাসার মনে করেন, এই সময়ের অনেক মেধাবীকে প্রশংসা করা হচ্ছে, কিন্তু মেধাকে মূল্যায়ন সেই অর্থে করা হয় না। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এই প্রশংসা দিয়ে জীবন চলে না। তাঁদের নিয়ে যথাযথ কোনো প্ল্যান, কোনো প্ল্যাটফর্মেই হয়নি, হচ্ছেও না। এভাবে মেধাবীরা ছিটকে পড়েন। সবাই স্বপ্ন নিয়ে এসে বঞ্চিত হন।’
এই বঞ্চিত হওয়া নিয়ে প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে বাসার বলেছিলেন, ‘খুব কম শিল্পীই রয়েছেন, শুধু নাটক করার জন্য এখানে আসেন। বেশির ভাগ চান বড় পরিসরে কাজ করতে। যখন পারেন না, তখন জীবিকার প্রয়োজনে দিনের পর দিন একই রকম গল্প, চরিত্রে, ভাঁড়ামির কাজ করতে থাকেন। এটা কি তাঁর দোষ? এটা না হলে অনেক অভিনয়শিল্পীকে বেকার বসে থাকতে হবে। ভালো কাজের অপেক্ষায় থেকে থেকে আমাদের মতো শিল্পীদের ছিটকে পড়তে হবে। আর যখন কেউ ছিটকে পড়বেন, দুই দিন পরে তাঁকেও সমালোচনা করবেন। বলে বসবেন, সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেল। তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলবেন। শিল্পীদের তৈরি করতে হয়।’
এই সময় বাসার আরও বলেছিলেন, ‘এখন যৌবনে ডাকছেন না, তাহলে কি বয়স্ক হলে ডাকবেন? ১৮ বছর বয়সে কেন তরুণেরা ডাক পাবেন না, নিয়মিত ভালো কাজ করতে পারবেন না। ১৮ বছর বয়স থেকে শাকিব খান অভিনয় করে যাচ্ছেন কিন্তু, ভালো ভালো সুযোগ তিনি কখন পেয়েছেন? তাঁকে আরও আগেই ভালো কাজের সুযোগ দিলে অনেক বেশি উজ্জ্বল করতে পারত। এরপরও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। তিনি সব সময়ই এগিয়েছেন। এমন সুযোগ আরও অনেকেরই পাওয়ার কথা নয়? একটা ইন্ডাস্ট্রির কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ব আছে। শিল্পীদের হতাশ নয়, মেক করতে হয়। এ ব্যাপারে সচেতন হলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগতই এগিয়ে যাবে।’
অভিনেতা খায়রুল বাসারের ব্যক্তিগত জীবনও সাধারণ। তিনি নিজেও কোনো জটিলতা পছন্দ করেন না। সিন্ডিকেট নিয়েও কোনো কিছু ভাবেন না। নিজের মতো করেই চলেন। ‘যে গল্প পড়ে মনে হয় এই কাজ করা দরকার সেটাই আমি করি। যে মন টানে না সেটা করি না। সিন্ডিকেট বলতে কিছুতে ধার-ধারতে চাই না, শুধু কাজটা বুঝতে চাই। আমি অভিনয় বুঝতে চাই, বিশ্লেষণ করতে চাই।’
খায়রুল বাসারের জীবনযাপন অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। তিনি সাধারণভাবেই চলতে, বলতে ও জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। এই নিয়ে পরিচালক মিজানুর রহমান একবার এই অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘দুধ-কলা-ভাত খায়রুলের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম ভালো, কোন ব্র্যান্ডের ঘড়ি সুন্দর—কিছুই সে তেমন জানে না। এই ব্র্যান্ড না চেনা সাদামাটা ছেলেটা বাংলা কনটেন্টের ব্র্যান্ড হয়ে উঠুক।’