
অভিনয়ে নাম লেখানোর তেমন কোনো ইচ্ছাই ছিল না, কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে প্রথম অডিশন দেন। তখনো জানেন না, ভাগ্য কোন দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে পড়াশোনায় তেমন মনোযোগ ছিল না। একসময় ড্রপআউট হন। পড়াশোনার এ ব্যর্থতাই তাঁকে নিয়ে আসে অভিনয়ে। পরবর্তী সময় তিনিই অভিনেত্রী হিসেবে কোরিয়ায় ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। জিতেছিলেন অস্কার।
অস্কারজয়ী প্রথম এই কোরীয় অভিনেত্রী হলেন ইউন ইউ-জং। তিনি ‘মিনারি’ ডকু ড্রামায় অভিনয়ের জন্য ২০২১ সালে সেরা পার্শ্ব বিভাগে অস্কার জিতেছিলেন। সিনেমার মতোই ছিল এই অভিনেত্রী ব্যক্তিগত জীবন।
তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। শহরে বেড়ে উঠলেও তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর শৈশবের শহর ছাড়তে হয়। সে সময় কোরিয়ায় যুদ্ধ চলছিল। তাঁরা চলে যান অন্য শহরে। পরবর্তী সময় স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের গণ্ডি পেরোলেও কলেজে ভালো ফলাফল করতে পারেননি। ক্যারিয়ার ও সংসারের দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। কোরিয়ান ভাষা ও সাহিত্যের ওপর পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকায় চিন্তা করেন, পড়াশোনা বাদ দেবেন। যথারীতি পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েন, কলেজ থেকে ড্রপআউট হন।
কলেজ থেকে ঝরে পড়ার পর নাটকে অভিনয়ের দিকে ঝোঁকেন। ১৯৬৭ সালে নাম লেখান ‘মিস্টার গম’ নাটকে। কিছু কাজ করলেও চার বছর পর সুযোগ হয় সিনেমায় নাম লেখানোর। ‘ওম্যান অব ফায়ার’ সিনেমা দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন।
সিনেমাটি ব্যবসায়িক ভাবেও সফলতা পায়। সেই প্রথম সিনেমার জন্য একটি চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। পরবর্তী সময় তিনি ‘দ্য ইনসেক্ট ওম্যান’, ‘বি আ উইকেড ওম্যান’ দিয়ে কোরিয়ার শীর্ষ তারকাদের একজনে পরিণত হন।
ক্যারিয়ার যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তখন তিনি গায়ক জো ইয়াং-নামকে বিয়ে করেন।
বাধ্য হয়ে পরবর্তী সময় প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার ছেড়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে চলে যেতে হয়। অভিনয় থেকে অবসর নেন। কিন্তু সময়, সংসার ভালো যাচ্ছিল না। ভাগ্যক্রমে ১০ বছর পর তিনি আবার কোরিয়ায় এসে নিয়মিত অভিনয় করার চেষ্টা করতে থাকেন। এদিকে গায়ক স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিলেও তখন ভালো করতে পারছিলেন না। ডিভোর্সি মধ্যবয়স্ক অভিনেত্রীকে কেউ ফেরার সুযোগ দিচ্ছিলেন না। ভেবেছিলেন, ভাগ্যের কাছে হেরে গেছেন। পরবর্তী সময় প্রায় এক দশকের চেষ্টায় তিনি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। ভালো চরিত্রের দেখা পান।
সেই সময়ে ইউন ইউ-জংকে বেশির ভাগ নারীপ্রধান চরিত্রের গল্পে দেখা যায়। কখনো যৌনকর্মী, কখনো লোভী, কখনো বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর গল্পে তিনি আলোচনায় আসেন। চরিত্রগুলোয় তাঁকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনা করা হয়, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবু তিনি অভিনয় করে যান।
একসময় তিনি মন খারাপ করে বলেছিলেন, ‘ক্যারিয়ারে হয়তো যা পাওয়ার পেয়ে গেছি, এখন আমি বয়স্ক অভিনেত্রী হয়েই হয়তো থাকব। আমার পরিচয় হবে প্রবীণ অভিনেত্রী।’
২০০০ সালের পর তাঁর ভাগ্য সহায় হয়। তিনি সেই সময়ে বেশ কিছু ভালো গল্পের অভিনয়ের সুযোগ পান। একই সঙ্গে টেলিভিশনের রিয়ালিটি শোতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। এ ছাড়া ট্রাভেল শোতে অংশ নিয়ে ক্রোয়েশিয়ায় যান। সেই অনুষ্ঠান প্রচারের পর দেশ-বিদেশ থেকে সাড়া পান ইউন ইউ-জং।
এ সুযোগ তাঁর সিনেমার ক্যারিয়ার বদলে দেয়। তিনি কোরীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযোজিত সিনেমা ‘মিনারী’তে অভিনয়ের সুযোগ পান। দাদির পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। সেই সিনেমা দিয়েই তিনি ভক্তদের মন জয় করেন। প্রথম নারী অভিনেত্রী হিসেবে কোরিয়ার হয়ে অস্কার পান। এখন তিনি কোরিয়ার আলোচিত অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। আজ তিনি ৭৭ বছরে পা দিলেন। ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে, ১৯ জুন তাঁর জন্ম।