Thank you for trying Sticky AMP!!

গারো খ্রিষ্টানদের ডিভোর্সের আইন

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি গারো সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী বাংলাদেশি নাগরিক। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আমাদের ডিভোর্স ও দ্বিতীয় বিয়েতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গারো খ্রিষ্টানদের জন্য ডিভোর্স এবং দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে বাংলাদেশের আইনে কী বলা আছে তা জানতে চাই।

ইমু চিসাম

উত্তর: বাংলাদেশের খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ নিজস্ব ধর্মীয় আইনে পরিচালিত হয়। যেসব আইনে খ্রিষ্টান ডিভোর্স পরিচালিত সেগুলো হলো দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯, দ্য ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৭২, দ্য কোড অব ক্যানন ল’ (ক্যাথলিকদের জন্য)।

ক্যানন আইনের ১০৫৬ ধারামতে, খ্রিষ্টান বিয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঐক্য ও অবিচ্ছেদ্যতা। প্রটেস্ট্যান্টদের মতে, বিয়ে একটি ধর্মীয় সংস্কার। বিয়ে এবং বিয়ের বিচ্ছেদ নিয়ে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯ সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

এ অ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিষ্টান দম্পতির সম্পর্ক তিনটি উপায়ে ছিন্ন করা যায়—

প্রথমত, দ্য ডিভোর্স অ্যাক্টের ধারা ১০ অনুযায়ী স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ এনে আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। কিন্তু স্ত্রীর ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ এনে আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে স্বামী যদি ব্যভিচারসহ ধর্মত্যাগ, অন্য ধর্ম গ্রহণ, অপর কোনো নারীকে বিয়ে করেন, কোনো নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন, বহুকামিতা, পাশবিকতা বা নৃশংসতা করেন, অথবা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া দুই বছর স্ত্রীর খোঁজখবর না রাখেন, তাহলেই শুধু স্ত্রী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর পক্ষে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার কোনো সুযোগও এ আইনে দেওয়া হয়নি।

দ্বিতীয়ত, নিচে উল্লেখ করা কারণে বিয়ে বাতিল করার জন্য যেকোনো পক্ষ আদালতে আবেদন করতে পারেন—১. স্বামী বিয়ের সময় এবং মামলা দায়ের করার সময় পর্যন্ত পুরুষত্বহীন ছিল;

২. বিয়ের পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক বিদ্যমান, যার কারণে বিয়ে করা আইনত নিষিদ্ধ;

৩. বর বা কনে কেউ বিয়ের সময় মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল;

৪. স্বামী বা স্ত্রী যে কারও পূর্ববর্তী স্ত্রী বা স্বামী বিয়ের সময় জীবিত ছিল।

সর্বশেষ জুডিশিয়াল স্যাপারেশনের মাধ্যমেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাবে। ব্যভিচার, নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা বা কোনো কারণ ছাড়া দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে পরিত্যাগ করলে স্বামী বা স্ত্রী আদালতে জুডিশিয়াল স্যাপারেশনের মামলা করতে পারে।

দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯-এর ধারা ১৭ ও ২০-এর অধীনে বিবাহবিচ্ছেদ ও বাতিল–সম্পর্কিত রায় হাইকোর্ট ডিভিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়, যা অনেক বিচারপ্রার্থীর জন্য ঝামেলাদায়ক। আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া জটিল বলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকে অ্যাফিডেভিট করে বিবাহবিচ্ছেদ ও আবার বিয়ে করে থাকেন। তবে তা আইনসিদ্ধ নয়। আগের বিয়ের বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ না হলে আবার বিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মমতে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

আইন, ডায়েট এবং মন–সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্ন পাঠক পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।
(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA