ম্যারি কুরির সঙ্গে অনেক ‘প্রথম’ জড়িয়ে আছে। প্রথম নারী নোবেলজয়ী। প্রথম দুটি নোবেল পেয়েছেন। দুটি ভিন্ন বিষয়েও প্রথম নোবেল জেতেন তিনি। পোল্যান্ডের ওয়ারশতে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর এই ফরাসি-পোলিশ উদ্ভাবকের জন্ম। আজ ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চলুন জেনে নিই তাঁর সম্পর্কে ছয়টি তথ্য।
তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য স্বামী পিয়েরে এবং পদার্থবিদ হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান ম্যারি কুরি। সে সময় নোবেলজয়ী প্রথম নারী ছিলেন তিনি। ১৯১১ সালে রসায়নে পেলেন দ্বিতীয় নোবেল। দুবার নোবেল জয় করা প্রথম মানুষও তিনি। তা ছাড়া বিজ্ঞানের দুটি ভিন্ন বিষয়ে তিনি ছাড়া আজ পর্যন্ত আর কেউ নোবেল জেতেনি।
ম্যারি কুরি দ্বিতীয় নোবেল পেয়েছিলেন দুটি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কারের জন্য—রেডিয়াম ও পোলনিয়াম। প্রথমটি নামকরণ করা হয় ‘রশ্মি’র লাতিন পরিভাষা থেকে। আর দ্বিতীয়টি তাঁর দেশ পোল্যান্ডের প্রতি সম্মানসূচক।
ম্যারি ও পিয়েরে কুরি ১৯০৩ সালে যখন নোবেল পেলেন, তাঁদের কন্যা ইরেনের বয়স তখন ছয়। ইরেন বড় হয়ে মা-বাবার পথেই হেঁটেছেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য স্বামী ফ্রেডরিক জোলিও কুরির সঙ্গে ১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পান ইরেন। ম্যারি ও পিয়েরের আরেক জামাতা হেনরি ল্যাবুজ ইউনিসেফের পক্ষে ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন। সে সময় ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন তিনি। অর্থাৎ তাঁদের পরিবারে নোবেলজয়ী সদস্য মোট পাঁচজন।
ম্যারি কুরি যখন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তিনি সম্ভবত এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তেমন ভাবেননি। পকেটে বোতলভর্তি পোলনিয়াম কিংবা রেডিয়াম নিয়ে নির্দ্বিধায় নিজের গবেষণাগারে ঘুরে বেড়াতেন। দীর্ঘদিন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে থাকার কারণেই ১৯৩৪ সালে মারা যান ম্যারি কুরি। প্রায় শত বছর পর তাঁর নোটবুক আজও তেজস্ক্রিয়। সেটি আরও দেড় হাজার বছর তেজস্ক্রিয় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাইস্কুল ডিপ্লোমা শেষে ম্যারি কুরি চেয়েছিলেন বড় বোন ব্রোনিয়ার সঙ্গে পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। তবে সেখানে নারী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ না থাকায় তাঁরা ভর্তি হন ফ্লায়িং ইউনিভার্সিটিতে। সে সময় নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সরকারি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ার ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়েছিল। ১৮৯১ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে বোনের সঙ্গে থাকা শুরু করলে সেখানে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান ম্যারি কুরি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর যুদ্ধের ময়দানে আহত সৈনিকদের দ্রুত অস্ত্রোপচারে সাহায্য করার উদ্যোগ নেন ম্যারি কুরি। সে সময় এক্স-রের মতো রোগনির্ণয়ের বেশির ভাগ যন্ত্র এত বড় ছিল যে শহুরে হাসপাতালের বাইরে নেওয়া যেত না। গাড়িতে এক্স-রে এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যুক্ত করে সহজে বহনযোগ্য রেডিওগ্রাফি ইউনিট তৈরি করেন ম্যারি কুরি। তাঁর ১৭ বছর বয়সী কন্যাসহ একদল নারীকে ঠিক করে দিলেন সে যন্ত্রগুলো পরিচালনার জন্য। যন্ত্রগুলো পরিচিতি পায় ‘খুদে কুরি’ হিসেবে। এমন ২০টি রেডিওলজিক্যাল গাড়ি প্রস্তুত করেন ম্যারি। যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ২০০টি যন্ত্র বসান। ১০ লাখের বেশি আহত সৈনিক সে এক্স-রে যন্ত্রগুলো থেকে উপকৃত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।