
কবিতা: ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি
কবি: অজানা
চরিত্র: ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি
আগে বাচ্চাকাচ্চাদের ঘুম না এলে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির ডাক পড়ত। তারাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসতেন। কিন্তু সেই দিন কি আর আছে? সেই দিন নাই, সেই রাতও নাই। ফলে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির এখন আর কারও বাড়ি যাওয়ার সময় নাই। কারণ, সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় টিভি সিরিয়াল, একটা শেষ না হতেই আরেকটা। এত জমজমাট সিরিয়াল রেখে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসিরা এখন আর কারও বাসায় যাওয়ার সময় পান না। সিরিয়াল দেখতে দেখতে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির ঘুমই এখন উল্টো হারাম হয়ে গেছে। পরের পর্বে কী হবে—এই টেনশনে দুজনই রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। মাঝে মাঝে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাতে হয়। মূলত ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির এহেন দুরবস্থার কারণেই তাদের নিয়ে মানুষেরা এখন ডাকাডাকি করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা এখন সিরিয়ালবন্দী জীবন যাপন করছেন।
কবিতা: তুলনা
কবি: শেখ ফজলুল করিম
চরিত্র: জ্ঞানী
‘তুলনা’ কবিতায় একজন জ্ঞানী ব্যক্তির উল্লেখ আছে। যাকে নাকি মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে এসে প্রশ্ন করত। কালের পরিক্রমায় সেই জ্ঞানীর চাহিদা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কারণ, এখন আর কেউ প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য জ্ঞানীর কাছে যায় না, গুগল সার্চ করে। মানুষের এই মূর্খতা জ্ঞানীকে কষ্ট দেয় খুব। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনেও এসব গুগল-ফুগল ব্যবহার করবেন না। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি যখন নাতির বাসায় যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেললেন, তখন তাঁকে বাধ্য হয়ে গুগল স্ট্রিট ভিউয়ে পথ চিনে নিতে হলো। মূলত তারপরই জ্ঞানী মলিন বদনে স্বীকার করেছেন, ‘জ্ঞানীর অপর নাম গুগল।’ এখন তাই জ্ঞানীকে সারাক্ষণ গুগলে সার্চ করতে দেখা যায়।
কবিতা: প্রভাতী
কবি: কাজী নজরুল ইসলাম
চরিত্র: খুকি
সেই খুকি এখন আর কচি খুকি নেই। পিএসসি, জেএসসি পার হয়ে সে এখন এসএসসি দেবে সামনে। ফলে সকালবেলা তার দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলতে হয়, ‘ভোর হলো/কোচিংয়ে চলো/খুকুমণি ওঠো রে।’ ফুল তোলা বাদ দিয়ে তাই খুকিকে সকালবেলায় কোচিংয়ে ‘সহায়ক বই’ নিয়ে দৌড়াতে হয়। অথচ খুকি ভেবেছিল, সরকার কোচিং অবৈধ ঘোষণা করলেই সে আবার ফুল তুলতে শুরু করবে। কিন্তু সরকার চায় না খুকি সকালবেলা কোচিং বাদ দিয়ে ফুল তুলুক, তাই তারা কোচিংকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে। সে জন্য অদূর ভবিষ্যতে খুকিকে আর ফুলতলায় দেখার বদলে কোচিংয়ে দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
কবিতা: স্বাধীনতার সুখ
কবি: রজনীকান্ত সেন
চরিত্র: চড়ুই ও বাবুই পাখি
কবিতায় আমরা পড়েছিলাম, বাবুই পাখি চড়ুই পাখির মুখের ওপর ভাব নিয়ে বলছে, ‘নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা’। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবুই পাখির ভাব এখন ডাবে পরিণত হয়েছে। কারণ, বাসা বাঁধার জন্য গাছ খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর। ফলে বাবুই পাখিকে এখন বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য চড়ুই পাখিদের কাছে ধরনা দিতে হয়। এই সুযোগে চড়ুই পাখিরাও তাদের বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে ইচ্ছামতো। আর ধানমন্ডি-গুলশানের দিকে বাসাগুলোর তো আকাশছোঁয়া ভাড়া, যা কিনা মধ্যবিত্ত বাবুই পাখিদের নাগালের বাইরে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে তাই বাবুই পাখিরা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেখা গেছে, নতুন বছরে যাতে বাড়ি ভাড়া খুব বেশি বাড়ানো না হয়, সে জন্য বাবুই পাখিরা চড়ুই পাখিদের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত।
কবিতা: আদর্শ ছেলে
কবি: কুসুমকুমারী দাশ
চরিত্র: আদর্শ ছেলে
কবি যে ছেলেটিকে দেখে হতাশ হয়ে এই কবিতাটি লিখেছিলেন, সেই ছেলেটি কবিতা পড়ে আদর্শ ছেলে হওয়ার কঠিন শপথ নিয়েছিল। আর তাই সে নাম লিখিয়েছিল রাজনীতিতে। ছেলেটি চেয়েছিল, কথায় না বড় হয়ে সে কাজে বড় হবে। কিন্তু কয়েক দিন রাজনীতি করার পরই সে বুঝে গেল, কাজে না বড় হয়ে আসলে কথায় বড় হতে হবে। এই উপলব্ধি হওয়ার পর ছেলেটি এখন তুখোড় রাজনীতিবিদ। একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের মতোই সে এখন কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আদর্শ ছেলে বিশ্বাস করে, সব রাজনীতিবিদের কল্যাণ হলেই জনগণের কল্যাণ হবে। সেই বিশ্বাসের ধারাবাহিকতায় কল্যাণপুরে আদর্শ ছেলের বিলাসবহুল ১৬তলা বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। সেই বিল্ডিংয়ের যাবতীয় কাজ নিয়েই আদর্শ ছেলে এখন নিদারুণ ব্যস্ত।
কবিতা: রাখাল ছেলে
কবি: জসীমউদ্দীন
চরিত্র: রাখাল ছেলে
কবিতায় উল্লেখিত রাখালের দিনকাল এখন আর আগের মতো নেই। মাঠে গরু চরানোর সময় এখন সে কানে ইয়ারফোন গুঁজে ইন্টারন্যাশনাল হিট লিস্ট শোনে। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় ডিজে সং। রাখাল ছেলের আশা, সামনের বছর গরু চরানোর মাঠে সে বড়সড় ডিজে পার্টির আয়োজন করবে। আর সেই পার্টির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিখ্যাত ডিজে ব্রাভো। এই স্বপ্নকে সামনে রেখে এখন রাখাল ছেলে তার গরুগুলোকে নিয়মিত ট্রেনিং দিচ্ছে, ডিজেতে কীভাবে সভ্যতা বজায় রেখে ড্যান্স করতে হবে। কিন্তু গরু তো গরুই, সহজে কথা শুনতে চায় না। তবে আমাদের রাখাল ছেলেও কিন্তু কম জেদি নয়। রবার্ট ব্রুসকে গুরু মেনে নিয়ে সে প্রতিদিন গরুদের পেছনে বিস্তর সময় দিচ্ছে। আমরা আশা করি, এই পরিশ্রমের ফসল হিসেবে রাখাল ছেলে সামনে ‘বেস্ট ডিজে অব দ্য ইউনিভার্স’ পদকটি পাবে। তখন তার নতুন নাম হবে ‘ডিজে রাখাল’।