
তাস বা কার্ড খেলায় মানুষকে প্রথমবার হারিয়ে দিয়ে যন্ত্র এবার ইতিহাস গড়ল। একমাত্র এই খেলায় এত দিন যন্ত্রের ওপর মানুষের আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি এবার সেটাও কেড়ে নিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির (সিএমইউ) প্রযুক্তিবিদেরা লিব্রাটাস নামের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন। এটি এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তাস খেলতে পারে। বিশ্বের বাঘা বাঘা পেশাদার খেলোয়াড়ের সঙ্গে লিব্রাটাস ২০ দিনের টানা (ম্যারাথন) টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। ফিলাডেলফিয়ায় গত মঙ্গলবার ওই প্রতিযোগিতা শেষ হয়। এতে সমসাময়িক শীর্ষস্থানীয় চার খেলোয়াড়কে হারিয়ে লিব্রাটাস ১৭ লাখ ডলারের বেশি জিতে নিয়েছে।
যন্ত্র বা প্রযুক্তি গত দুই দশকে দাবা, ছক-কাটা বোর্ডের খেলা এবং সর্বশেষ প্রাচীন গো খেলায় মানুষকে হারিয়ে দিতে পেরেছে। লিব্রাটাসের এবারের বিজয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তাস বা পোকার খেলাটা অপূর্ণ তথ্যে ভরপুর। এটা বাস্তব জগতের মতোই, যেখানে সব সমস্যা চট করে ধরা যায় না। মানুষের আচরণও অনেকটা এ রকম অধরা থাকে। এ কারণে এত দিন প্রযুক্তিবিদেরা মনে করতেন, তাস খেলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবে।
সিএমইউর কম্পিউটারবিজ্ঞানের অধ্যাপক টুওমাস স্যান্ডহোম ও তাঁর ছাত্র নোয়াম ব্রাউন সম্মিলিত চেষ্টায় লিব্রাটাস তৈরি করেছেন। স্যান্ডহোম গত বুধবার বলেন, অপূর্ণ তথ্য নিয়েও যুক্তির সাহায্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর দৌড়ে সেরা এআই প্রযুক্তির সামর্থ্য এখন মানুষের সামর্থ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এখন বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে লিব্রাটাসের সমাধানপদ্ধতি কাজে লাগাতে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান উঠেপড়ে লাগবে। স্যান্ডহোম বলেন, ব্যবসায়িক সমঝোতা, সামরিক কৌশল নির্ধারণ, সাইবার নিরাপত্তা, চিকিৎসাসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে তথ্যের ঘাটতি থাকা অবস্থায় সমাধানে পৌঁছানোর জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
লিব্রাটাসের এমন জয় কীভাবে সম্ভব হলো? সিএমইউর কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফ্র্যাংক ফেনিং বলেন, কম্পিউটার যদি ধাপ্পাবাজি করতে না পারে, তাস খেলায় জিততে পারবে না।
শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় ডং কিম বলেন, খেলার মাঝামাঝি পর্যায়ে তিনি টের পান যে ফেরার পথ নেই। অতীতে যন্ত্রের সঙ্গে খেলতে গিয়ে তাঁরা ধাপ্পাবাজি করে উতরে গেছেন। কিন্তু এবার বুঝলেন, উল্টোটা ঘটে গেছে।