কথা, গান, নাচ, কবিতা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে নগরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন মে দিবস উদ্যাপন করেছে। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের শপথ উচ্চারিত হয়েছে সংস্কৃতি কর্মীদের কণ্ঠে।
ডিসি হিল: ‘রক্তে ধোয়া মে তোমায় সালাম’ শিরোনামে নগরের ডিসি হিল মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান। মে দিবস উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় উদীচী চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থিয়েটার, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন ও বোধন আবৃত্তি পরিষদ। বিকেলে এ আয়োজনের শুরুতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহসভাপতি চন্দন দাশ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বন্দর কর্মচারী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা ভুঁইয়া। কথামালা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। আয়োজনের শুরুতে গণমানুষের গান নিয়ে মঞ্চে আসে উদীচী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিল্পীরা। ‘অধিকার কে কাকে দেয়’, ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়’ শিরোনামের গানসহ মোট চারটি গান পরিবেশন করে বিদায় নেন তাঁরা। এরপর প্রমা আবৃত্তি সংগঠন আসে তাঁদের বৃন্দ পরিবেশনা ‘আওয়াজ তুলেছে পহেলা মে’ নিয়ে। এ পরিবেশনাটির নির্দেশনায় ছিলেন রাশেদ হাসান। সংগীতভবন চারটি গান গেয়ে সুরের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দর্শককে। নাচের তালে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্সের সদস্যরা। ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’সহ পরপর তিনটি গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে বিদায় নেন তাঁরা। এরপর চট্টগ্রাম থিয়েটার পরিবেশন করে ‘ধর্মঘট’ শিরোনামের পথনাটক। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক চৌধুরী।
‘মে দিনের কবিতা’ শিরোনামের বৃন্দ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে বোধন আবৃত্তি পরিষদ। এটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মাইনুল আজম চৌধুরী। এরপর উদীচী চট্টগ্রাম জেলা শাখার শিল্পীদের একের পর এক গণসংগীত পরিবেশনায় মেতে ওঠে ডিসি হিল প্রাঙ্গণ। তাঁরা ‘বেলা শুরুর গান’, ‘মাঠে মাঠে সোনালি ধান’, ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই’সহ আটটি গান পরিবেশন করেন। সবশেষে সমাবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত।
চেরাগী পাহাড়: ‘জয়ধ্বনি জীবনের মুক্তির শপথের, জনতার শ্রমিকের বিশ্ব পতাকা’ এ স্লোগান নিয়ে নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিকেল পাঁচটায় মে দিবসের আয়োজন শুরু হয়। এখানে যৌথভাবে মে দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমাজ সমীক্ষা সংঘ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ফেইম স্কুল অব ড্রামা ও দৃষ্টি চট্টগ্রাম। জাতীয় সংগীতের পর সাভারের মর্মান্তিক ভবন ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মুবিদুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাজ সমীক্ষা সংঘের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ খসরুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনা করেন বাংলাদেশ তেল-গ্যাস শ্রমিক ফেডারেশানের সভাপতি জানে আলম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সভাপতি জিন্নাহ চৌধুরী, ফেইমের সদস্য সৌমেন রুদ্র ও দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন। আলোচনা শেষে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের শিল্পীদের বৃন্দ পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। আবৃত্তিশিল্পী মো. মুজাহিদুল ইসলামের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ‘আমরা অনার্য আজ এই কথা বলুক সবাই’ শিরোনামের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন তাঁরা। এরপর শিকল ভাঙার গান নিয়ে মঞ্চে আসেন সমাজ সমীক্ষা সংঘের শিল্পীরা। তাঁদের দলীয় সংগীত পরিবেশনা শেষে দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে ছিল জমজমাট পেশাজীবী-শ্রমজীবী বিতর্ক। ‘এ সংসদ মনে করে যে, সভ্যতার বিনির্মাণে উদ্যোক্তার চাইতে শ্রমিকের ভূমিকাই প্রধান’ এ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত বিতর্কে সরকারি দলে তিনজন শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলে তিনজন পেশাজীবী অংশ নেন।
শিল্পকলা একাডেমী: চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আর্ট গ্যালারিতে প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উদ্যোগে ‘মে দিবসের ডাক’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কথা, গান ও কবিতার উচ্চারণে এ আয়োজনে উঠে আসে শোষণহীন সমাজের কথা। বিকেল পাঁচটায় ‘চাষাদের মুঠেদের মজুরের’ শিরোনামে বাপ্পু ভট্টাচার্যের গাওয়া গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। মিনহাজ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন সায়মা আক্তার, শাখেরা শিমু, স্বরূপ কুমার ও শুভংকর দত্ত। কবিতার উচ্চারণে শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন নাসরিন আক্তার ও ফাহিম উদ্দিন।