Thank you for trying Sticky AMP!!

জীবন বদলে গেল, যখন বললাম - আর না : রবার্ট ডাউনি জুনিয়র

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র
অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম ছবির মধ্য দিয়ে শেষ হলো মার্ভেলের জনপ্রিয় চরিত্র ‘আয়রন ম্যান’–এর যাত্রা। রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে আর দেখা যাবে না সেই চেনা রূপে, তাই গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় চলছে আলোচনা। যে অভিনেতা নিজের শতভাগ ঢেলে দিয়ে অভিনয় করেছেন, মেধার প্রমাণ দিয়েছেন, সেই তিনিই কিন্তু একসময় মাদকাসক্ত ছিলেন। কীভাবে সেই অবস্থা থেকে ফিরে হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা হলেন?

মাত্র আট বছর বয়সে আমি মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। পরিবার থেকে সেই আসক্তি আমাকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু এ জন্য আমি আমার মা-বাবাকে কখনোই দায়ী করি না। মাদক সেবন আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতির অংশ ছিল। আমার মা-বাবা ছিলেন উদার। তাঁরা সেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আর সামাজিক রীতির অংশ হয়েই আমার হাতে মাদক ধরিয়ে দেন। কিন্তু আমি সব সময়ই বলি, আমার মা-বাবার সঙ্গে পৃথিবীর কারও তুলনা হয় না। তাঁরা আমার জন্য অনেক করেছেন। তাঁরা আমার আদর্শ। তবে আমি আমার সন্তানদের বড় করছি সব সামাজিক রীতিনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে। আমার সামনে আমার সন্তান ধূমপান করবে, এটা আমি মেনেই নিতে পারি না।

অবশ্য এই মেনে না নেওয়ার পেছনে কারণও আছে। আমি আট বছর বয়সে ধূমপান শুরু করি, এরপর গাঁজা। আমাদের বাড়িতে গাজার সেবন ছিল অনেকটা দৈনন্দিন খাবার খাওয়ার মতোই। এরপর ১৯৯৫ সালে আমি ক্র্যাক কোকেন আর ব্ল্যাক টার হেরোইনেও আসক্ত হয়ে যাই। কোকেন আর হেরোইনের আসক্তি ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। এটা সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। একবার এটার স্বাদ নেওয়ার পর এর থেকে দূরে থাকা কঠিন। আমি একসময় দেখলাম নিজের ওপর থেকে আমার সব নিয়ন্ত্রণ আমি হারিয়ে ফেলছি। মাদক সেবনের পর আমি অনেক অঘটন ঘটিয়েছে। প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে তাঁর বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম একবার। আরেকবার নগ্ন হয়ে পোরশে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম রাস্তায়। আমার প্রতিটি বিব্রতকর কাণ্ড জনসমক্ষে আমাকে প্রতিবার হেয় করেছে। আদালতে যেতে হয়েছে বারবার। আমাকে অনেকবার আদালত থেকে সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবার আমি পালিয়ে আসতাম।

আমার সহকর্মীরা চরম বিপদের সময় আমার পাশে ছিল। যখন আমি বাজেভাবে মাদকে আসক্ত ছিলাম, ২৪ ঘণ্টা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতাম, সেই সময় আমি জোডি ফস্টার পরিচালিত একটা ছবিতে অভিনয় করছিলাম। একদিন জোডি আমার কাছে বললেন, ‘এভাবে চলবে না রবার্ট।’ আমার বিবেচনা বোধ বলে কিছুই ছিল না তখন। কিন্তু জোডি খুব বিচক্ষণভাবে ধৈর্য নিয়ে আমাকে সে সময় বোঝান। তিনি বলেন, ‘তুমি ভেবো না যে আমি আমার ছবি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি। এই ছবি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, এর কাজ এখন শেষের দিকে। ছবিতে তোমার না হলেও চলবে। আমি চিন্তিত তোমাকে নিয়ে। এভাবে চললে তুমি বেশি দিন টিকতে পারবে না।’

সেদিন খুব শান্তভাবেই আমি জোডির কথা শুনেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। আমি নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। বরং আরও বেশি জড়িয়ে গেছি। আমার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল, অভিনেতা শন পেন রীতিমতো সিনেমাটিক কায়দায় দরজা ভেঙে নেশাগ্রস্ত আমাকে উদ্ধার করেছিলেন। আমি নেশাগ্রস্ত হয়ে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করেছিলাম। জিততে পারিনি। এরপর নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে শন আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। বেচারা শনের সেই চেষ্টাও বৃথা হয়। আমি নিরাময় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাই।

১৯৯৮ সালের দিকে আমাকে আদালতে হাতকড়া পরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সেবার তিন বছরের সাজা শোনানো হয় আমাকে। রায়ে বলা হয়েছিল, আমি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও স্থানীয় জেলহাজতে কাটাব তিন বছর। সেটা ছিল আমার জন্য খুব কঠিন একটি দিন। বিচারক জানতে চেয়েছিলেন, কেন আমি বারবার এমন করছি? কিসের ক্ষুধা আমার? আমি বলেছিলাম, আমার মনে হয় আমার মুখে একটা বন্দুকের নল ঢোকানো, আর বন্দুকের ট্রিগারে আমার আঙুল। আমি নলের তামাটে স্বাদটা নিচ্ছি, এখন আমার বুলেটের বারুদের স্বাদটাও চাই। তাই আমি নিজেকে বারবার বিধ্বংসী পর্যায়ে নিতেও দ্বিধা বোধ করি না। মোট কথা নিয়ন্ত্রণ বলতে আমার মধ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

তবে জেলহাজতের দিনগুলো আমাকে পুরোপুরি বদলে দেয়। সেখানে আমি কোনো নায়ক ছিলাম না। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন ছিল সেগুলো। জেলে যাওয়ার পর প্রথম দিন আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। পুরো আলাদা একটি জগৎ সেটি। একটা সময় মনে হবে যে এটাই বুঝি শেষ, এরপর আর জীবন নেই। কিন্তু এখন বর্তমানে দাঁড়িয়ে মনে হয়, আমি যেহেতু সেই কঠিন সময় পেরিয়ে আসতে পেরেছি। এখন আমি সব অসম্ভবকেই উতরে যেতে পারব।

জেলহাজতে আমাকে দিনে ৯ ঘণ্টা করে জেলখানার হেঁশেলে কাজ করতে হয়েছে। রাতদিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেই সময়টায় আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আর না। আর সেই ছোট্ট ‘আর না’ আমার জীবনকে পাল্টে দেয়। আমি এখনো সবাইকে বলি, অসহায়ত্বকে স্বীকার করে নেওয়া, ব্যর্থতার কাছে আত্মসমর্পণ করে দেওয়া সহজ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগের মুহূর্তেও দৃঢ় থাকলে একটা সময় ঠিকই এর ফল পাওয়া যায়। জীবনের কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও হার না মানা একটা বিরাট ব্যাপার। আমিও তাই হার মানিনি কখনো। দৃঢ় মনোবল নিয়ে আমি আমার ৩০ বছরের মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আর এত প্রতিকূল পথ পেরিয়ে এসে এখন আমার মনে হয়, কঠিন বলে কিছু নেই। কঠিন হলো সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর একবার যদি মন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সবকিছু সম্ভব।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আদর রহমান

সূত্র: অপরাহ্ উইনফ্রে শো