সংস্কৃতি সংবাদ

ডিসি হিলে বাঙালি সংস্কৃতি মেলা

ডিসি হিলে বাঙালি সংস্কৃতি মেলায় নাচ প্রদর্শন করেন শিল্পীরা
ডিসি হিলে বাঙালি সংস্কৃতি মেলায় নাচ প্রদর্শন করেন শিল্পীরা

সারা দিন ধরে টানা দাবদাহ। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি। তবু চৈত্রের গরম আর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দর্শকেরা এসেছিলেন ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে। দর্শকদের এই আগ্রহ বিফলেও যায়নি। আবৃত্তি, নাচ, গান আর কথামালায় জমজমাট হয়ে উঠেছিল তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বাঙালি সংস্কৃতি মেলা।
নবমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করে ৩৩ বছরে পদার্পণ করা সাংস্কৃতিক সংগঠন অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। মেলায় এবারের স্লোগান ছিল ‘চলো বাঙালির শেকড় সন্ধানে’।
মেলার প্রথম দিনকে চট্টগ্রাম উৎসব, দ্বিতীয় দিনকে রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব ও শেষদিনকে লোক উৎসব হিসেবে ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। এই ঘোষণার সঙ্গে সংগতি রেখে নানা অনুষ্ঠানমালারও আয়োজন করা হয়।
গত ৩১ মার্চ বিকেল চারটায় নয়টি প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, শিল্পী নাজমুল আবেদিন চৌধুরী, কবি ফরিদা আক্তার, শিল্পী আবদুর রশিদ খান, নাট্যকার সমীরণ চৌধুরী, সাহিত্যিক রফিকুর রশীদ।
উদ্বোধনের পরপরই জাতীয় সংগীত ও লোকজ সংগীত পরিবেশন করেন অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীরা। ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি’ গানের সঙ্গে সমবেত নাচ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এর পরে কথামালায় অংশ নেন অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মো. সঞ্জিত আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদ হাসান, অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক নিশাত হাসিনা শিরিন।
কথামালার পর সম্মাননা প্রদান করা হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। এবারের মেলায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হয় যৌথভাবে শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ চৌধুরী ও কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের পরিচালক প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহকে, মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতিপদক প্রদান করা হয় রানা দাশগুপ্তকে এবং বাঙালি সংস্কৃতি মেলা পদক প্রদান করা হয় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়াকে।
সম্মাননা অনুষ্ঠানের পর প্রিয়া চৌধুরীর পরিচালনায় সমবেত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন সুন্দরম শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। গানের পর আবৃত্তিশিল্পী মুজাহীদ ইসলামের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ‘মশালের লাল ওই জ্বলছে’ শিরোনামের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের আবৃত্তিশিল্পীরা।
মেলার দ্বিতীয় দিন ১ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হয় রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক এস এম আবুল হোসেন। উদ্বোধনের পর আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের নির্দেশনায় ‘প্রতিবাদী কবিতা কোলাজ’ শিরোনামে বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন প্রমার সদস্যরা।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আলোচনা পর্ব, স্মৃতিপদক বিতরণ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। আসরে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কাবেরী সেনগুপ্তা ও নজরুল গবেষক আলী হোসেন চৌধুরীকে ওস্তাদ অমিতাভ বড়ুয়া স্মৃতিপদক সম্মাননা প্রদান করা হয়। নাট্যব্যক্তিত্ব চৌধুরী মুজিবর রহমান স্মৃতিপদক প্রদান করা হয় শিপ্রা চৌধুরীকে। অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী শিল্পী সম্মাননা পদক প্রদান করা হয় শিশু সংগঠক স্বপন চৌধুরীকে।
মেলার শেষদিন ২ এপ্রিল লোক উৎসব উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবদুল জলিল মণ্ডল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অবসর সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় কবি বিমল গুহ ও কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদকে। এরপরে কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লার ‘হাড়েরও ঘরখানি’ কবিতাটি সমবেত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা।