Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন ভোরের অপেক্ষা

সারা মাস টানাটানির মধ্যে চলি। বরং বলা যায়, চলতে হয়। মাসের শুরুতে বেতনের পুরোটা এনে তাঁর হাতে দিই। এরপর আবার তাঁর কাছ থেকেই ধার নিই। দিনে দিনে দেনার পরিমাণ বাড়তেই থাকে। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, আমি কখনো দেউলিয়া হই না!

সংসারের এক দশক হলো। বাজারসদাই, রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া, টয়লেটসহ বাসা পরিষ্কার, স্কুলগামী ছেলেকে তৈরি করা, সামলানো, পড়ানো—সব দায়িত্ব এই অধ্যাপক-পত্নীর।

এর মানে এই নয়, সংসারধর্মে আমার মন নেই, কোনো অবদান নেই। আছে। মশারি খাটানো আর কাপড় গোছানো—মূলত এই ‘কঠিন’ কাজ দুটি করি। কাজ সহজ। কিন্তু একটি কাজ এত দিন ধরে একটানা করে চলা দুরূহ ব্যাপার!

হঠাৎ ছন্দপতন। কেউ কখনো কল্পনাতেও আনেনি এমনটি হতে পারে। ঘরবন্দী থমকে যাওয়া নাগরিক জীবনে পর্যাপ্ত সময় এখন হাতে। তাই চ্যালেঞ্জ নিই, দেখি তো কীই-বা এমন কঠিন কাজ আছে এই সংসারে।

আমার কাজের ফর্দ এক মাসে বেশ দীর্ঘ। বউয়ের প্রায় সব কাজ এখন কাঁধে। শিখছি সন্তানের দুরন্তপনা, উচ্ছলতা, জেদ, দুষ্টুমি সামলানো। চলছে ক্রিকেট, লুডু, ক্যারম খেলা। ঘোর লাগা সন্ধ্যায় তিনজন মানুষ বারান্দায় মুখোমুখি। থাকছে ঝাল ঝাল মুড়িমাখা, গরম কফি, হারানো দিনের গান, বই, সিনেমা আরও কত কী!

ক্ষণিক অবসরে ভাবনা ক্রমশ বড় হচ্ছে। সবটুকু নিংড়ে দিয়েও কাজ শেষ হয় না। হাঁপিয়ে উঠছি। এত কিছু তিনি সামলাতেন কেমন করে? একজন স্ত্রী কত কষ্ট করেন! প্রশ্নের পর প্রশ্ন। এত দিন তবে খণ্ডকালীন সংসার করেছি? তাই তো!

করোনা আমাকে শিখিয়েছে সংসার বা পরিবারের গূঢ় অর্থ। স্ত্রী বা সন্তানের বন্ধু হতে, সহমর্মী ও সহযোদ্ধা হতে।

ব্যক্তিত্বের মুখোশের কারণে ছেলে ও বউকে নিয়ে বসিনি, জানতে চাইনি, তাঁদেরও কোনো চাহিদা থাকতে পারে আমার কাছে। এখন হৃদয়ঙ্গম করছি, তাঁদের জীবনে আমার প্রাণবন্ত উপস্থিতি, অফুরন্ত প্রয়োজনীয়তা।

করোনো ক্রমেই মেরে ফেলছে আমার মতো পুরুষদের চিরচেনা অহংবোধ। মহাপ্রাচীরের চেয়েও শক্তিশালী পৌরুষকে করছে পরিশুদ্ধ। বুঝিয়ে দিচ্ছে, পুরুষ, তুমি মানুষ হও, মানবিক হও। এই সংসার শুধুই নারীর একার নয়, তোমারও। দুজনের। বলা ভালো, দুজন মানুষের।
রতন রহমান
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা