পাঠক হাজির

নূপুর

অবশেষে এক সপ্তাহ পার হলো। প্রতীক্ষার সেই দিন এল। নূপুরজোড়া হাতে পেলাম।

সেদিন জুয়েলারি দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। পাড়ার সামছু ভাই দোকানের ভেতর থেকে ডাক দিলেন। এ জুয়েলারি দোকানির সঙ্গে সামছু ভাইয়ের ভীষণ সখ্য। দোকানে ঢুকে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেল দোকানে কাচের শো-কেসের ভেতরে সাজিয়ে রাখা এক জোড়া রুপার নূপুর। নিজের অজান্তে চাপা নিশ্বাস বেরিয়ে এল। দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, এ নূপুরজোড়া আমাকে দেওয়া যায় কি না?’

‘এই জোড়া দেওয়া যাবে না! তবে হুবহু এনে দেওয়া যাবে।’ দোকানি উত্তর দিলেন। ‘এই জোড়া কেন দেওয়া যাবে না?’ আমি আবারও জানতে চাইলাম।

‘এগুলো অন্য এক কাস্টমারের! রং করতে দিয়েছিল। রং করে সাজিয়ে রেখেছি।’ দোকানি ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলায় বুঝতে পারলাম।

‘তাহলে আমাকে হুবহু এই রকম এক জোড়া রেডি করে দিন।’ আমি দোকানিকে অর্ডার দিলাম। দোকানি এক সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন। আজ সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে।

খুশিমনে পকেটে পুরেই বাড়িতে চলে এলাম। সেদিনের কথা বারবার মনে পড়ছিল—নাহিদা ঘর ছেড়ে এসেছিল, তখন পায়ে এক জোড়া রুপার নূপুর ছিল।  তাকে আমিই বলেছিলাম বাড়ি থেকে যেন কিছু না আনে। সে আমার কথা রেখেছিল। ভালোবাসার টানে সব ছেড়ে এসেছিল। কিন্তু পায়ের প্রিয় নূপুরজোড়া ছেড়ে আসতে পারেনি। কিন্তু এ ভুলের মাশুল আমাদের দিতে হলো অপমানের মাধ্যমে। নাহিদার আত্মীয়স্বজন আমার বাড়িতে কয়েক দিন পরে লোক পাঠাল। তাদের নূপুরজোড়া ফেরত নেওয়ার জন্য। নাহিদা পা থেকে নূপুরজোড়া সঙ্গে সঙ্গে খুলে দিয়েছিল। আজ এসব     ভাবতে ভাবতে আচমকা মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। ভাবতে লাগলাম নাহিদাকে নূপুরজোড়া দেব কি না! নূপুর দেখে হয়তো পুরোনো দিনের ঘটনা মনে পড়বে।

নাহিদা কখন পেছনে এসে দাঁড়াল, খেয়াল করতে পারিনি। আমি সব দ্বিধা ভুলে পকেট থেকে রুপার নূপুরজোড়া বের করে তার সামনে ধরলাম। নাহিদাকে অনেক দিন এমন খুশি হতে দেখিনি।

কাজী সুলতানুল আরেফিন

পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী।