>

মোবাইল ফোন এখন হাতে হাতে। স্মার্টফোনের ব্যবহারও বাড়ছে দিন দিন। শুধু ফোন করা, সেলফি তোলা বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাই মূল নয়—স্মার্টফোনটা দেখতে কেমন, হাল ফ্যাশনের সঙ্গে যাচ্ছে কি না, এটাও দেখেন ক্রেতারা। স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের এক অনুষঙ্গ।
তরুণেরা বেশি টাকা খরচ করেন কোন খাতে? এ নিয়ে ২০১৪ সালে জরিপ চালিয়েছিল মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পাইপার জ্যাফ্রে। এতে উঠে আসে তরুণদের খরচের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রযুক্তিপণ্য। ৩৫ শতাংশের এই মত। আবার এই প্রযুক্তিপণ্যের সিংহভাগজুড়েই আছে স্মার্টফোন। মূলত মোবাইল ফোনের মডেল পরিবর্তনের প্রতিই তাঁদের বিশেষ ঝোঁক রয়েছে বলে উঠে এসেছে এই জরিপে।
শুধু স্মার্টফোন হলেই চলে না, একে এখন মেলাতে হয় ফ্যাশনের সঙ্গেও। ফ্যাশনের অনিবার্য এক অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে এই সময়ের স্মার্টফোনগুলো। ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক বলছিলেন, যেকোনো নতুন পণ্য তরুণদের কাছে আগ্রহ সৃষ্টি করে। ‘স্মার্টফোনের বেলায় আগ্রহের পরিমাণটা আরও বেড়েছে। এতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজে কাজ সেরে নিতে পারছে সবাই। পড়াশোনা, বিনোদন, কেনাকাটা—সবই করা যাচ্ছে। যেন মুহূর্তের মধ্যেই জীবনকে করে তুলছে স্মার্ট। আর তাই ফ্যাশনের ক্ষেত্রে এটি হয়ে উঠেছে যুগোপযোগী বিষয়।’
প্রায় প্রতি মাসেই বিভিন্ন নির্মাতা নতুন নতুন সুবিধা যোগ করে বাজারে আনছে স্মার্টফোন। ক্রেতারাও ঝুঁকছেন এসব ফোনের দিকে। আবার ফোনের নকশাটা কেমন, সেটা এখন বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখেন ক্রেতারা। স্যামসাংয়ের মতো বিশ্বখ্যাত নির্মাতারা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করে ফোনের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের নিক্কন টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, কোন স্মার্টফোনে বেশি সুবিধা বা ফিচার আছে সেটি দেখে ক্রেতারা চাহিদা জানাচ্ছেন। বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে তরুণেরা গুরুত্ব দিচ্ছেন ফোনের র্যাম, প্রসেসর ও ক্যামেরায়। এসব বিষয়ের ওপরই নাকি নির্ভর করছে স্মার্টফোনের স্মার্টনেস।
মূলত ক্যামেরা ঘিরেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের। কেনার সময় দেখে নিচ্ছেন কোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বেশি। তার মধ্যে আবার সামনের ক্যামেরায় বেশি মেগাপিক্সেল চাচ্ছেন ক্রেতারা। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন সেলফি তোলার প্রবণতা। এরপর স্মার্টফোনের ফটো এডিটর দিয়ে সেটা ইচ্ছেমতো সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছেন। দেশে থ্রিজি সেবা চালু হওয়ার পর থেকে মুঠোফোন শুধু কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ নেই। আজকাল কথা বলার পাশাপাশি একজন আরেকজনকে সরাসরি ভিডিও কলে দেখতেও পাচ্ছেন। দূরে থাকলেও তাই আপনি চলে আসতে পারছেন প্রিয়জনের কাছাকাছি। এ জন্য শুধু তরুণদের নয় সবারই চাওয়া, সামনের ক্যামেরা ভালো হোক। আর স্মার্টফোন ব্যবহারে পর্দা কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ হয় এটিও গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সবার অভিযোগ, স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ বেিশক্ষণ থাকে না। তাই এই বিষয়টিতেও নজর দেন অনেক ক্রেতা। চান বেশি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির স্মার্টফোন। এ ছাড়া ফোনে যাঁরা নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশি সচেতন তাঁরা নিচ্ছেন আঙুলের চাপসংবলিত প্রযুক্তির ফোন।
স্মার্টনেস প্রকাশের জন্য এসব দেখে ফোন নেন আর কারিগরি দিকটি দেখেন না কেনার সময়, ব্যাপারটি তেমন নয়। ক্যামেরার পাশাপাশি আজকালকার তরুণেরা র্যাম, প্রসেসর নিয়েও ভাবেন ফোন কেনার সময়।
দেশে স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়ছে প্রতিদিনই। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সেল ওয়ানের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাজারে থাকা স্মার্টফোনের মধ্যে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস ৭ এজ, জে ৫ ও জে ৭ (২০১৬) স্মার্টফোনের চাহিদা আছে। এগুলোর পর্দায় আঁচড়ের দাগও পড়ে না। ক্রেতারা কাচ ও ধাতবের মিশেলে তৈরি এই সময়ের স্মার্টফোন পছন্দ করছেন। এর বাইরে শাওমি, ওয়ান প্লাস, আসুসের জেনফোন ইত্যাদির চাহিদা বেশি।
কয়েকজন বিক্রেতা জানালেন, কেনার সময় ক্রেতারা প্রাধান্য দিচ্ছেন সোনালি রংকে। ফোনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিশ ফোন কভার, স্ক্রিন প্রটেক্টর, হেডফোন, পাওয়ার ব্যাংক বা বহনযোগ্য চার্জার ইত্যাদি আনুষঙ্গিক জিনিসও বিক্রি হচ্ছে।
যদি মুঠোফোন নির্মাতার নকশার ভরসায় না থেকে আপনার সাধের হ্যান্ডসেটটি পুরোপুরি নিজের মতো বানিয়ে নিতে চান, তাহলে নানা ধরনের ডিজিটাল ডিজাইন, অ্যানিমেশন, কার্টুন, ফুল ইত্যাদি স্টিকারও লাগিয়ে নিতে পারেন। সব মিলিয়ে স্টাইলিশ হয়ে উঠবে আপনার স্মার্টফোন। এরপর নিজেকে স্মার্ট রাখার জন্য নামিয়ে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় অ্যাপ। তাহলেই একই সঙ্গে স্মার্টফোন ও ব্যবহারকারী হয়ে উঠবেন স্মার্ট।
এ স্মার্টনেস প্রকাশ করার জন্য নানা ধরনের স্মার্টফোন আছে দেশের বাজারে। তার মধ্যে নামী ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ছাড়াও চায়নাতে তৈরি করা কম দামের ননব্র্যান্ডের স্মার্টফোনও আছে দেশের বাজারে। ২৯০০ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে ব্র্যান্ড, ননব্র্যান্ডের এসব স্মার্টফোন।
স্মার্ট, ফ্যাশন সবই তো হলো। একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি—স্মার্টফোনের স্মার্ট, ফ্যাশন জীবনে কতটুকু অনুষঙ্গ হতে পেরেছে জানেন? জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্যমতে, দিনে তিন ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়৷ আরও লক্ষণীয় হচ্ছে ফোনের সঙ্গে ব্যবহারকারীর গড় ‘ইন্টারঅ্যাকশন’ হয় ১৩০ বার৷ অর্থাৎ প্রতি সাড়ে সাত মিনিটে একবার ফোনের পর্দায় হাত রাখেন একজন ব্যবহারকারী৷