চলতি রস

বিক্রি না হওয়া গরুর হাম্বাৎকার

প্রতি ঈদে হাটে বিক্রি হয় হাজারো গরু। কিন্তু যেসব গরু হাটে বিক্রি তো পরের কথা, বিক্রির জন্য মনোনীত হয় না, কেমন তাদের অনুভূতি? এবারের হাটে বিক্রি না হওয়া গরু পাতলা খান অত্যন্ত চিন্তিত তার রোগা-পটকা স্বাস্থ্য নিয়ে। গরুজীবনের এই আক্ষেপ নিয়ে তিনি হাম্বা হাম্বা করলেন অর্থাৎ কথা বললেন রস+আলোর সঙ্গে।
রস+আলো: পাতলা খান, আপনাকে ঈদ মোবারক।
পাতলা খান: রাখেন আপনার ঈদ। ঈদ তো আপনাদের। আমার আবার কিসের ঈদ!
র. আ.: কেন! আপনার ঈদ নাই কেন? আপনারই তো ঈদ। এই যে আপনার ভাই-ব্রাদাররা কোরবানি হয়ে গেল, আপনি তো আরও এক ঈদ টিকে গেলেন। এটা খুশির ব্যাপার না?
পা. খা.: অবশ্যই না। কোরবানিতেই তো গরুর প্রকৃত সাফল্য। গরুসমাজ সব সময়ই ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা যেসব জিনিস ত্যাগ করি, সেসবই তো আপনারা ভোগ করেন। গরুর ত্যাগ করা দুধ, এমনকি গরুর বাথরুম পর্যন্ত!
র. আ.: তাহলে হাটে বিক্রি না হওয়ায় আপনি এমন হতাশ?
পা. খা.: অবশ্যই। এই নিয়া কয়বার আমি আমার এই ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য বিক্রি হইলাম না, জানেন?
র. আ.: কয়বার হলো?
পা. খা.: এই নিয়া তিন বছর আমি স্বাস্থ্য মোটাতাজা কইরা জাতে ওঠা, মানে হাটে ওঠার চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছি। সারা বছর কোরবানির হাটে বিক্রি হওয়ার জন্য কত কিছু করলাম, সারা দিন জিমে সময় কাটাই, স্বাস্থ্য ঠিক করার জন্য সারা দিন খড় খাই, ভুসি খাই! আরও কী কী আছে, চার্ট দেখে বলা লাগব।
র. আ.: আচ্ছা, তা বুঝলাম। কিন্তু বাজারে তো অনেক দিন ধরেই অনেক গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন বা ওষুধ পাওয়া যায়। হাটে তো আপনার মতোই স্লিম গরুগুলোকে মোটাতাজা করে বিক্রি করা হয়। আপনি সেগুলা ট্রাই করলেন না কেন?
পা. খা.: শোনেন, আমি হারবাল পদ্ধতি ছাড়া আর কিছুতে বিশ্বাস করি না। মোটা হইলে আমি প্রাকৃতিক উপায়েই হমু। এসব কৃত্রিম জিনিস নিয়া আমাদের গরুসমাজে একটা পপুলার গান আছে, ‘ভুসি খই খই, ওষুধ খাওয়াইলা...।’
র. আ.: ভালো হচ্ছিল তো, গান না, পুরাটা গান...
পা. খা.: ইয়ে, হাম্বা, ইউটিউবে আছে, শুইনা নিয়েন। জাবর কাটতে কাটতে গান গাইতে ভাল্লাগে না।
র. আ.: আচ্ছা, সামাজিক প্রসঙ্গে আসি। এই যে আপনি এবারও চান্স পেলেন না, এতে কি গরুসমাজে আপনাকে ছোট করা হচ্ছে?
পা. খা.: তা না তো কী? মনে করেন, তিনবার ম্যাট্রিক ফেল করলে আপনাদের যে রকম মান-ইজ্জত থাকে না, ব্যাপারটা তো সেই রকম। আমি কাউরে মুখ দেখাইতে পারতেছি না, হাম্বা ডাকতেও শরম লাগে! পারলে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করতাম। কারও সামনে জাবর কাটতে পারতেছি না, কারও মাঠে গিয়া ঘাস খাইতে পারতেছি না। আমার বাপে এইবার বলছিল, ‘এইবারও হাটে চান্স না পাইলে তুই আর আমাদের মাঠের ঘাস খাবি না!’ কী বিপদ বলেন!
র. আ.: আপনার বন্ধুরা? তারাও কি আপনার পাশে দাঁড়ায়নি, বসেনি অথবা পাশে আছে কি না...
পা. খা.: ওরা তো আমার চেয়েও বড় গরু! আমার এই স্বাস্থ্য নিয়া বন্ধুরা আমারে পচায়া গরু না ডাইকা ‘সরু’ বইলা ডাকা শুরু করছে। কত দিন ধইরা একটা কাউফি তোলার শখ আমার! কত ইচ্ছা ছিল, সুন্দরী মেয়েরা এবার আমারে নিয়ে কাউফি তুলবে, ফেসবুকে পোস্ট দেবে, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেবে, ক্যাপশন দেবে, ‘আমাদের গরু, বাঁ থেকে দ্বিতীয়’! সব স্বপ্ন শেষ! আমি তো দুঃখে ফেসবুকই ডিঅ্যাক্টিভ কইরা রাখছি...
র. আ.: এখন কী করবেন বলে ঠিক করেছেন? এভাবে তো আর ভেঙে পড়লে হবে না। গরুজীবনে তো এমন সাফল্য-ব্যর্থতা থাকবেই, এসব নিয়ে জাবর কাটলে তো চলবে না। নেক্সট কোরবানি নিয়ে আপনার প্ল্যান কী?
পা. খা.: আমি এখনো হারবাল উপায়ে বিশ্বাস রাখছি। চায়নিজদের কিছু স্লিমিং খড়, স্লিমিং ভুসি দেখলাম, কিন্তু মোটা হওয়ার কিছু দেখলাম না। তবু আমি আশাবাদী। আগামী বছর গাবতলীতে দেখা হবে।
র. আ.: শোনেন, আরেকটা প্রশ্ন...
পা. খা.: ভাই, যান তো, আমি একটু শান্তিমতো জাবর কাটি। আজকে থেকেই নতুন ডায়েট চার্ট ফলো করা শুরু করছি। অনেক খড়-ভুসি খাইতে হইব...
হাম্বাৎকার (সাক্ষাৎকার) নিয়েছেন: সামিউল আজিজ