Thank you for trying Sticky AMP!!

বুকের যত ব্যাথা

হৃদ্‌রোগ ছাড়াও বুকে ব্যথা এবং প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নেন হৃদ্‌রোগের কারণে এমন ব্যথা হচ্ছে কি না। হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বাতিল হলে চিকিৎসক বুকে ব্যথার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন এবং চিকিৎসার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
হৃদ্‌রোগ ছাড়া বুকে ব্যথা সব বয়সের মানুষের হতে পারে। নারী বা পুরুষের বেলায় এ ধরনের ব্যথা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। দেখা গেছে, হৃদ্‌রোগজনিত বুকে ব্যথা নিয়ে যত রোগী আসে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি রোগী আসে বুকের অন্য কোনো ব্যথা নিয়ে। এ ধরনের ব্যথার উপসর্গে মাঝে মাঝে ব্যথা হচ্ছে। বুকের ঠিক কোথায় ব্যথা হচ্ছে তা সঠিকভাবে রোগী বলতে পারছে। এ ছাড়া এই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে না। রোগী সাধারণ কাজকর্ম করতে পারছে। অর্থাৎ, বুকে ব্যথা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের সাধারণ কাজকর্ম করতে কোনোই অসুবিধা হয় না। এ ধরনের রোগীরা ব্যথা নিয়ে সাধারণভাবে প্রথমেই হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যায় বা তাদের এ ধরনের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। 

সাধারণভাবে এমনটি করার কারণ, বুকে যে ব্যথা হচ্ছে, তা হৃদ্‌রোগ নাকি অন্য কিছু, তা রোগীর পক্ষে কখনোই বোঝা সম্ভব নয়। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে রোগীকে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে বা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নানা কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের মাংসপেশির কোনো সংকটের কারণে, হাড়ের কারণে এই ব্যথা হতে পারে। বুকে কোনো আঘাত পাওয়ার কারণেও হতে পারে। এ ছাড়া পুরোনো ব্যথায় নতুন করে আঘাত পাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার জন্য, এমনকি ফুসফুসের সমস্যার জন্য বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে দেখা গেছে, সাধারণভাবে খাদ্যনালির নানা সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার জন্য অ্যাসিড থাকে। কখনো কখনো এই অ্যাসিড খাদ্যনালিতে চলে আসে। ফলে বুক বা গলা জ্বালা করতে পারে। বুকের হাড়ের নিচে এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
বুক জ্বালা থেকে যে ধরনের বুকে ব্যথা দেখা দেয়, তা সাধারণত খাওয়ার পর দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ব্যথা বেশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ভয় বা আতঙ্ক থেকেও অনেকের বুক ব্যথা করতে পারে।
এ ধরনের বুকে ব্যথার সঙ্গে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে, অর্থাৎ হৃদ্‌পিণ্ডের কাজ বেড়ে যেতে পারে।
খাদ্যনালিতে বেশ কয়েক ধরনের সমস্যার কারণে কখনো কখনো খাদ্য গিলতে অসুবিধা হয় এবং একই সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দেয়। আমরা খাদ্য গেলার পর খাদ্যনালির মাংসপেশি খাদ্যকে নিচের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালি এই সমন্বয় হারিয়ে ফেলে। আর এতে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা নাইট্রোগ্লিসারিন নামের একটি ওষুধ মুখে দিলে ভালো হয়ে যায়। হৃদ্‌রোগ-সংক্রান্ত ব্যথা কমাতেও একই ওষুধ ব্যবহার করা হয় বলে এ ধরনের ব্যথা কখনো কখনো মারাত্মক ভ্রান্তির সৃষ্টি করে। হৃদ্‌রোগবহির্ভূত বুকে ব্যথা শিশুদেরও হতে পারে। দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরও এমন ব্যথা হতে পারে, আর তা হতে পারে নানা কারণে। তবে সাধারণভাবে হৃদ্‌যন্ত্রের আশপাশে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে, সেগুলোর কোনোটায় কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তার ফলে এ-জাতীয় বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। জন্মগতভাবে অনেক শিশুর খাদ্যনালি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট থাকে এবং এসব শিশুর বুকে ব্যথা হতে পারে।
বুকের ব্যথাকে হৃদ্‌রোগ থেকে সৃষ্ট ব্যথা বলে ধরে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে ছুটে গেলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু হৃদ্‌রোগ থেকে ব্যথা হচ্ছে অথচ ডাক্তারের কাছে কিংবা হাসপাতালে গেল না, তাতে মহাবিপদ হতে পারে। আর ব্যথাটি হৃদ্‌রোগজনিত বা হৃদ্‌রোগজনিত নয় তা বোঝার অন্যতম উপায় হলো, হৃদ্‌রোগবহির্ভূত ব্যথা বুকের এক জায়গায় থাকে। আঙুল দিয়ে রোগী বলতে পারে ঠিক কোন স্থানে ব্যথা হচ্ছে।
এ ধরনের ব্যথা সমস্ত বুক, ঘাড় বা বাঁ হাত বা দেহের বাঁ পাশে ছড়িয়ে পড়ে না। হৃদ্‌রোগবহির্ভূত ব্যথা সাধারণভাবে কোনো ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেয় না। এ ছাড়া এ ধরনের ব্যথা হলে প্রথমে কারণ কী তা বের করতে হবে এবং সেই কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হলে রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকে।
লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ