পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

প্রায় ৩০ বছর আগে কেনা হয়েছিল জমিটি। ১২ বছর আগে হুট করে স্থানীয় বস্তির কিছু ব্যক্তি জমিটি দখল করে নেয় এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু বসতি স্থাপন করে সেখানেই অবস্থান করছে। সে সময় আমরা ভাইবোনেরা বয়সে ছোট হওয়ায় এবং আমার বাবা পাশের জেলায় চাকরি করার কারণে আমাদের পক্ষে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে জমিটা উদ্ধারের জন্য আইন অনুযায়ী আমরা কী করতে পারি?
সাঈদ, রাজশাহী।
সম্পত্তি বেদখল বলতে বোঝায় প্রকৃত মালিককে তার মালিকানা থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে সেখানে তার স্বত্ব ও দখল প্রতিষ্ঠিত করা। জমি বেদখল হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি দুই আদালতে মামলা করা যায়।
কোনো ব্যক্তি তাঁর সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার দুই মাসের মধ্যে তিনি ওই ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা থেকে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ওই দখলকারী ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। মামলা দায়ের হলে ম্যাজিস্ট্রেট অপর পক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার নির্ণয় করবেন। পুলিশের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করা হতে পারে। এরপর আইনানুগভাবে উচ্ছেদের আদেশ দেওয়া হয়। ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।
আপনাদের যেহেতু অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, তাই আপনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন। আইনটির ৮ ধারা অনুযায়ী, আপনাকে ওই জমিতে স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হবে। এই ধারায় প্রতিকার চাইতে হলে আপনাকে জমির স্বত্বসহ দখল ফিরে পাওয়ার দাবি করতে হবে। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। কাজেই আপনাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সেই অনুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে।
আমি একজন ছাত্রী। আমার মা এক বছর আগে মারা গেছেন। আমার এক বোন আছে। ওর বয়স ১০ বছর। আমরা আমাদের বাবার সঙ্গে থাকি। তিনি একজন ব্যাংকার। আমাদের নানা–নানি বেঁচে নেই। আমার তিনজন মামা আছেন। কোনো খালা নেই। আমরা কি আমাদের মায়ের সম্পত্তি থেকে কোনো ভাগ পাব? পেলে কী পরিমাণে পাব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিলেট।
মুসলিম আইন অনুযায়ী মায়ের সম্পত্তি বণ্টন আর বাবার সম্পত্তি বণ্টনের মধ্যে কোনো তফাত নেই। মুসলিম সম্পত্তি আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি পুরুষ বা নারী যিনিই হোন না কেন, তাঁর সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ে একইভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে, তবে স্বামী পাবেন এক–চতুর্থাংশ। সুতরাং আপনার বাবা এক–চতুর্থাংশ সম্পত্তি পাবেন। এই সম্পত্তি তাঁকে দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলেমেয়ের মধ্যে বাঁটোয়ারা হওয়ার নিয়ম। মুসলিম আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির যদি একাধিক মেয়ে থাকে এবং ছেলে না থাকে, মেয়েরা মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব মেয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। যেহেতু আপনাদের কোনো ভাই নেই, তাই আপনারা দুই বোন তিন ভাগের দুই ভাগ (দুই–তৃতীয়াংশ) পাবেন। এরপর বাকি সম্পত্তি আপনাদের অন্য উত্তরাধিকারদের কাছে যাবে।