
এটাই শেষবার, ক্ষমা করে দিয়ো
গত বছরের ১৫ মার্চ। ঠিক ওই দিন তুমি আমার জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যাও। কী অদ্ভুত! দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে গেছে! কিন্তু আমার মন থেকে তুমি এক সেকেন্ডের জন্যও কোথাও হারিয়ে যাওনি। তুমি আমার মনে সারাটা সময়, প্রতিটা মুহূর্তে জড়িয়ে ছিলে। এখনো আছ এবং সারা জীবন থাকবে। তোমাকে আমি আমার জীবনে কোনো দিন ফিরে আসতে বলব না। কারণ, তুমি হয়তো কারও জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছ। আমি কিন্তু এখনো কারও জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাইনি। তোমাকে একদিন আমি শপথ করে বলেছিলাম, আমার জীবনে তুমি ছাড়া কেউ নেই।
যদি আজও শপথ করতে বলো, তাহলে বলব, এখনো তোমার মতো আমার জীবনে কেউ নেই, আর কোনো দিন কেউ ছিল না, থাকবেও না।
ফিরে আসতে বলব না আমার জীবনে। তোমার সঙ্গে আমি যে অন্যায় করেছি তা হয়তো ক্ষমার যোগ্য নয়। যে সময়টাতে তোমার পাশে সবচেয়ে বেশি থাকার কথা ছিল। ঠিক ওই সময়টাতে দূরে যেতে হয়েছিল আমাকে। আমি পাশে থাকতে চেয়েছিলাম সারা জীবনের জন্য। কিন্তু এই পৃথিবীর মানুষ আমাকে তোমার পাশে থাকতে দেয়নি। আমাকে তুমি ক্ষমা চাওয়ার জন্য আরেকটি বার সুযোগ দাও। আরেকটি বার তোমার জীবন থেকে দুই মিনিট আমাকে দিয়ো ক্ষমা চাওয়ার জন্য। একটি বার তোমার ওই দুহাত ধরে বলার সুযোগ দিয়ো—অনেক ভুল করেছি, ক্ষমা করে দিয়ো, প্লিজ...!
এস কে শাকিরুল ইসলাম
বগুড়া।
বৃষ্টি বাবাকে কষ্ট দেয়
ফেসবুকের হোমপেজে বৃষ্টিময় স্ট্যাটাসে যানজট। কেউ তৃপ্তির ঘুমে স্বস্তি প্রকাশ করছে। কেউ বই পড়ছে। আবার কেউ কেউ বৃষ্টিতে ভিজছেও। আমার বৃষ্টি একটুও ভালো লাগে না। আর সেটা আমার বাবার জন্যই। মনে পড়ে, গতবার যখন বাড়িতে ছিলাম খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। গ্রামের পিচ্ছিল কাঁচা রাস্তায় বৃদ্ধ বাবা লাঠি ভর দিয়ে হাঁটছিলেন। খুব কষ্ট হচ্ছিল ওনার। তখন তাঁকে সাহায্য করছিলাম। আজ আমি দূরে। বৃষ্টি হলেই বাবার কথা মনে পড়ে। নিষ্পাপ হাসির পরিশ্রমী বাবার চেহারাটা ভেসে ওঠে। এই বৃষ্টিই যে আমার বাবাকে কষ্ট দেয়।
মুহিবুল্লাহ আল মামুন
আমি তোমার জীবনে
আমি তোমার জীবনের একবিন্দু শিশির কণা হতে চাই না। সূর্যের রশ্মি পাওয়ার আগেই আমি বিলীন হতে চাই না। বিশ্বাস করো, আমি যেন অন্ধকারের ভেতর নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। যদি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে থাকো তাহলে আমাকে মুক্তবিহঙ্গের পথ দেখিয়ো। সেদিন আমাকে রক্ষা করতে হাত ধরেছিলে, তুমি এমনিভাবে সারা জীবন আমাকে রক্ষা করতে পারো না। তুমি তো আমার বন্ধু। যদি পারো বন্ধুকে নিজ হাতে হত্যা করো তা না হলে ভালোবেসো। মন থেকে একটু ভালোবেসো—এর বেশি কিছু আমি চাইব না তোমার কাছে। আমি যেখানে, যত দূরে থাকি না কেন তুমি মনে রাখতে পারবে না আমাকে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আব্বা, আপনি আমার বাতিঘর
কয়েকদিন আমার এক প্রিয় বন্ধুর বাবা মারা যান। বন্ধুটির শোক ও সন্তাপ দেখে আপনার কথা মনে পড়ছে। আপনার মুখ আমার মানস চোখে ভেসে উঠছে। শুনেছি, শৈশবে আপনি মাকে হারিয়েছেন। আপনার বাবাও ছিলেন সংসার-উদাসী মানুষ।
সেই যে আপনার একলা হওয়া, জীবনের ঘানি টানা! আহ্, আজও সেই একলা, একাই টেনে যাওয়া। আমার প্রতি আপনার মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ও ভালোবাসা আমাকে বিব্রত করে। আমার অভিমান হয়, ‘এত ভালোবাসতে হয়?’ তবুও আপনার ভালোবাসার জন্যই আমি প্রতীক্ষায় রই। আপনি যেমন আমাকে খুব ভালোবাসেন অথচ প্রকাশের বেলায় খুবই লাজুক, আমিও তেমন। আপনাকে ভালোবাসি, আব্বা, আপনাকে ভালোবাসি।
জীবনবাস্তবতার রূঢ় রূপ দেখে প্রায়ই আমি হতাশ ও বিমূঢ় হই। কিন্তু ঠিকই আপনি ম্যাটাডোরের মতো লড়ে যাওয়ার সাহস দেন, আলো দেখান। আপনি আমার বাতিঘর, আপনি আমার নোঙর করার পোতাশ্রয়। আপনি অনেক দিন বাঁচুন, আব্বা।
আপনার আর আমার সম্পর্ক স্রেফ পিতা-পুত্রের স্নেহ-শ্রদ্ধার গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, আমরা খুব সাবলীলভাবে বন্ধুর মতোই একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে পারি। মিশে যাই। এই যে এত মাখামাখি ও ভালোবাসাবাসি, তবুও আজ অবধি বলতে পারিনি। আব্বা, আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
জমাতুল ইসলাম
ইংরেজি বিভাগ, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।
হয়তো ফিরে যাব...
মনে পড়ে স্কুলজীবনের সেই দিনগুলোর কথা। বিকেলের হলুদ আলো হয়তো ফিরে ফিরে পাব। বসন্তের কোকিলও ডেকে যাবে আরও বহুদিন। স্মৃতির সাগরে হঠাৎ কোনো দিন হয়তো ভেসে উঠবে এক টুকরো সুখ। ফিরে আসবে হয়তো স্বপ্নের ছেঁড়া জাল হয়ে। কিন্তু সেই আদরের তেল আর শাসনের লঙ্কা মাখানো, খাওয়ার বহুক্ষণ পরেও মুখে স্বাদ লেগে থাকা ঝালমুড়ির মতো নিরবচ্ছিন্ন সুখের সেই স্কুলজীবন কখনোই আর ফিরে পাব না। ভাবতে কষ্ট হয়, তবু প্রকৃতির নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া একটু একটু করে আমার জীবনতরী নিয়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রের দিকে। স্কুলজীবনের বন্ধুরা, ফিরে আয় না আর একবার। আবারও মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে খুব। কৈশোর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব, প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্য—জীবনের এই সরলরৈখিক গ্রাফ কখনোই বৃত্তাকার হবে না। হয়তো কোনো দিন একাকী হাঁটা কোনো ফাঁকা রাস্তায় হঠাৎ থমকে দাঁড়াব।
মনে হবে এই সেই পথ, যে পথে হেঁটেছি আমি বহুদিন, আমার প্রিয় স্কুলের পথে, স্কুলজীবনের চিরচেনা পথ আজ বড়ই অচেনা। নাগরিক ব্যস্ততায় হঠাৎ কোনো পাখির ডাকে নস্টালজিক মন চলে যাবে স্কুলের পাশের সেই আমগাছটার পাখির বাসায়। জনসমুদ্রের মাঝে হয়তো কোনো দিন হাতে হ্যাঁচকা টান খেয়ে থেমে যাব। তারপর নাম মনে করার চেষ্টায় একে অপরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা। তারপর দুজনে একসঙ্গে ‘দোস্ত, কেমন আছিস’ বলে মৃদু চিৎকার।
এসবই হয়তো কোনো একদিন হবে। বাতাসে তরুণীর ওড়ানো ওড়না ও চুল দেখে হয়তো ফিরে যাব সেসব স্কুলজীবনের কিশোরী সহপাঠীর কাছে, পড়াশোনায় পেছনে ফেলা কিংবা কীভাবে স্যারের কাছে বকুনি খাওয়ানো যায়। যাদের সঙ্গে ছিল এসব নির্দোষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। হয়তো কোনো দিন বাসের সিটে বসা কোনো বয়োবৃদ্ধকে দেখে মনে হবে সেই প্রিয় শিক্ষক, যাঁর মার খেয়ে শুরু হয়েছিল আমার স্কুলজীবন। স্কুলজীবনের শেষের দিনে যাঁকে আমি লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি, তিনি আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক সালাহ উদ্দিন স্যার। এসব হয়তো ঘটে যাবে কোনো শুভক্ষণে। অতিমাত্রায় সুখপিয়াসী মন আমার অবচেতনেই মস্তিষ্কের নিউরনে সুখের সিকোয়েন্স সাজাবে। কিন্তু বাস্তবে কখনোই ফিরে পাব না আদর আর শাসনের যেই অপূর্ব মিশেল। শুনব না কখনো আর ঘণ্টা বাজার আদুরে শব্দ। পড়া না-পারার ভয়ে আর কাতর হব না। মাথায় প্রিয় শিক্ষকের মমতা মাখানো হাতের স্পর্শে চোখ ছলছল করবে না।
স্বপ্নিল আকাশ
অ্যাডভান্সড রেসিডেনিসয়াল মডেল কলেজ, ময়মনসিংহ।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’