Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীর আম সোনাগাজীতে!

নিজের বাগানে আমের ফলন দেখাচ্ছেন মেজর (অব.) মো. সোলায়মান

ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, হিমসাগর কিংবা হাঁড়িভাঙা—এসব তো রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার আম। তবে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সোলায়মান প্রমাণ করেছেন, যত্ন নিলে ফেনীতেও এসব আম ফলানো সম্ভব। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৪০ জাতের আম আছে তাঁর বাগানে। বাগানে নানা জাতের আম লাগিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, জাত উন্নয়নে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা–নিরীক্ষাও করে চলেছেন।
১৯৯২ সালে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরি প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৭০ একর জমিতে সোনাগাজী এগ্রো কমপ্লেক্স নামের সমন্বিত খামার প্রতিষ্ঠা করেন মো. সোলায়মান। খামারে মাছ চাষ ও গবাদিপশু পালনের পাশাপাশি কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত উপায়ে ফলের বাগান করছেন তিনি। বাগানের দুই হাজার আমগাছে এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া বাগানে আমের পাশাপাশি কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারকেল, ড্রাগন ফল ও জামরুলের চাষও করেছেন তিনি।
সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুহুরি প্রকল্পের পাশে মো. সোলায়মানের খামারের অবস্থান। প্রকল্পের পাঁচ একর জায়গায় তিনি গড়ে তুলেছেন আমের বাগান। সম্প্রতি তাঁর খামার প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ চাষের জন্য খনন করা বিশাল পুকুরের দুই ধারে আমগাছের সারি। গাছে গাছে ঝুলছে নানা প্রজাতির আম। একেক জাতের আমের গড়ন একেক রকম। কোনোটি গোল আবার কোনোটি লম্বা।
সোলায়মান জানান, খামারে প্রায় দুই হাজার আমের গাছ আছে। এ বছর আরও ৫০০ চারা লাগাবেন তিিন। এ পর্যন্ত আম বাগানের পেছনে তাঁর খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা তাঁর বাগান থেকে আম কিনে নিয়ে যান। তিন বছর ধরে আম বিক্রি করছেন তিনি। গত বছর আমের ফলন ভালো হয়নি। বিক্রি হয়েছে এক টনের মতো। তার আগের বছর দুই টন আম বিক্রি হয়েছিল। আর এ বছর এর মধ্যেই তাঁর বাগানের দুই টন আম বিক্রি হয়েছে। এ মৌসুমে সব মিলিয়ে ১০ টনের মতো আম বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বাগানে দেশি জাতের আম এর মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন থাই জাতের আম পাকতে শুরু করেছে। এসব আম খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু। প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া আলফানসো, রুবি, দোসারি ও রাঙ্গুয়াই নামের বিদেশি জাতের আমও ধরেছে বাগানে।
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সোলায়মান বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের চাষ করেন না। অথচ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এসব জাতের আম এখানে ভালো ফলবে। তার প্রমাণ আমার এই বাগান।’
তিনি আরও বলেন, তাঁর বাগানের আমে কোনো ধরনের কীটনাশক নেই। মুকুল আসার দুই মাস আগে একবার মাত্র কীটনাশক ছিটান তিনি। এ ছাড়া গাছে ইউরিয়া সার দেওয়ার পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করেন বলে জানান।
সোলায়মানের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেনী হর্টিকালচার বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সোলায়মানের বাগান পরিদর্শন করেছি। বাগানটি বেশ পরিচ্ছন্ন। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আমের জাত বাগানে লাগিয়েছেন। চেষ্টা করছেন জৈব সার দিয়ে ও কীটনাশক ব্যবহার না করে আম ফলাতে। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অনেকে এখন উন্নত জাতের আমের বাগান করছেন।’