চলতি রস

সস্তা আলুর ৪ পদ

>

আলু এখন খুব সস্তা। তাই বেশি বেশি আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান। কিন্তু আলু কি এমনি এমনিই খাবেন?

না, রস‍+আলোর প্রতিনিধি আসফিদুল হক জীবনের মায়া ত্যাগ করে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী আলুরাঁধা চৌধুরীর কাছে। তিনি দিলেন আলুর চারটি পদের রেসিপি।

আলু-পেঁয়াজি

উপকরণ: বুকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহস, কুচি কুচি করে কাটা কাঁচা পেঁপেকুচি, এক গামলা আলু, চোখে জল আনার মতো কাঁচা/পাকা/গুঁড়া মরিচ, আয়োডিনমুক্ত লবণ (আয়োডিনযুক্ত লবণ খেলে মানুষের মাথা খুলে যাবে, তারা ভবিষ্যতে এই রেসিপি আর কখনো পরখ করতে চাইবে না) এবং এক লিটার তরল তেল।

প্রণালি: প্রিয় বন্ধুরা, পেঁয়াজের নাম শুনেই যঁাদের বুক ধড়ফড় করে উঠছে, তঁাদের জন্য এই রেসিপি নয়। এ কারণেই প্রথম উপকরণে লেখা আছে ‘যথেষ্ট পরিমাণে সাহস’ প্রয়োজন এই সুস্বাদু আলু-পেঁয়াজি বানানোর জন্য। তবে এই রেসিপির ক্ষেত্রে আমরা একটু চালাকির আশ্রয় নেব। যেহেতু পেঁয়াজের দাম এখন আকাশছোঁয়া, তাই পেঁয়াজের বদলে আমরা ব্যবহার করব কাঁচা পেঁপে। কিন্তু মানুষকে বলব, আমরা আলু-পেঁয়াজি বানিয়ে খেয়েছি। যাঁরা নিয়মিত বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলেন, তাঁরা এই পদ ভালোভাবেই বানাতে পারবেন।

তো বন্ধুরা, আলু-পেঁয়াজি বানানোর জন্য প্রথমে আলু সেদ্ধ করে নিন। তারপর সেদ্ধ আলুগুলো চটকে ভর্তা বানান। সঙ্গে আপনার ইচ্ছামতো লবণ, মরিচ মেশান (রেসিপিটি যদি অন্য কারও ওপর পরীক্ষা করতে চান)। তারপর ভর্তার মাঝখানে কাঁচা পেঁপের কুচি ঢুকিয়ে তেলে ছেড়ে দিন। তারপর ভাজা ভাজা করুন। যাঁরা নিয়মিত অত্যাচারের মাধ্যমে আশপাশের মানুষগুলোর জীবন ভাজা ভাজা করে ফেলছেন, তাঁদের দিয়ে ভাজাভাজির কাজটা ভালো হয়। তাই আপনি ঠিকমতো ভাজতে না পারলে এ রকম কাউকে ডেকে এনে আলুগুলো ভেজে নিন। সময়মতো আলুগুলোর কানে ধরে কড়াই থেকে তুলে নিন। এরপর কাউকে জোর করে ধরে এনে তার সামনে গরম গরম পরিবেশন করুন।

আলুর ভাপা পিঠা

উপকরণ: জীবনের ওপর তীব্র বিতৃষ্ণা, এক গামলা আলু, নারকেলকুচি এক প্লেট এবং এক কাপ গুঁড়া গুঁড়া গুড়।

প্রণালি: জীবনের প্রতি যাঁদের তীব্র বিতৃষ্ণা এসে গেছে, তাঁদের জন্য এই রেসিপি বিশেষভাবে উদ্ভাবিত। প্রথমে আলুগুলো সেদ্ধ করে নিন। তারপর সেদ্ধ আলুগুলো একটি চালনিতে করে চেলে নিতে হবে। যদিও আলু চেলে কোনো লাভ নেই, তবু ভাপা পিঠা বানানোর নিয়মগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এখন হাঁড়িতে কলকলিয়ে পানি ঢালুন। ঢালতেই থাকুন, ঢালতেই থাকুন। যখন হাঁড়ি উপচে পানি গড়িয়ে পড়বে, তখন পানি ঢালা বন্ধ করুন। হাঁড়ির ওপর ছিদ্রযুক্ত ঢাকনাটি রেখে চুলায় বসিয়ে দিন, চুলাটি খুব অল্প আঁচে রাখুন। ঢাকনার পাশে ছিদ্র থাকলে তা সুপার গ্লু দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দিন। ছোট বাটিতে গোল করে আলু ঠেসে ভরুন। আলুর মাঝখানে পরিমাণমতো গুড় দিন। তারপর পাতলা কাপড় দিয়ে বাটির মুখ ঢেকে ছিদ্রযুক্ত ঢাকনার ওপর বাটি উল্টে তা সরিয়ে নিন। এরপর ফেসবুকে নিজের সেলফিসহ আপনার রান্নাঘরের ছবি আপলোড করুন, সঙ্গে রোমহর্ষক বর্ণনা দিন কীভাবে আপনি আলুর ভাপা পিঠা বানাচ্ছেন। একটু পরেই দেখবেন, অনেকেই আপনার বানানো ভাপা পিঠা খেতে চাইছেন। কারণ, অনেক মানুষ অভুক্ত অবস্থায় ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকেন। তঁাদের মধ্য থেকে তাগড়া দেখে দু-তিনজনকে বাসায় আমন্ত্রণ জানান। এগুলো করতে করতেই দেখবেন আপনার আলুর ভাপা পিঠা বানানো হয়ে গেছে।

আলুর নুডলস

উপকরণ: অ্যাম্বুলেন্স, আপনার পেটের চাহিদানুযায়ী আলু, টমেটো সস ছয় চেয়ার চামচ এবং এক বোতল তেলতেলে তেল।

প্রণালি: প্রথমে আলু সেদ্ধ করে নিন। চুলায় গ্যাস না থাকলে আলু পানিতে চুবিয়ে অফিস টাইমে লোকাল বাসে চড়ুন। দেখবেন, এই শীতের দিনেও আপনিসহ আলু সেদ্ধ হয়ে গেছে। এরপর সেদ্ধ আলুগুলো দুই হাতের তালু দিয়ে নুডলসের মতো করার চেষ্টা করুন। তার আগে হাতের তালুতে তেল মেখে নিন। কাজটা কঠিন, কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না। সুমন কবীর আপনার এই কঠিন কাজের কথা ভেবেই আগাম গেয়ে রেখেছেন, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’। তাই নুডলস বানাতে বানাতে এই গানটা শুনতে পারেন। গান শুনতে শুনতেই কখন যে নুডলস বানিয়ে ফেলেছেন, তা টেরই পাবেন না। যখন টের পাবেন, তখন নুডলসগুলো ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখুন। তারপর অনেক দিন ধরেই কঠিন শাস্তি দিতে চাইছেন এমন কাউকে নুডলস খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিন। পাশাপাশি উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অ্যাম্বুলেন্স রেডি রাখুন।

আলু-চা

উপকরণ: চাক চাক করে কাটা আলু, চা-পাতা, পানি, দুধ ও চিনি।

প্রণালি: আপনি যেভাবে চা বানান সেভাবেই বানিয়ে তার মাঝে আলু ছেড়ে দিন। এরপর চা নিয়ে লেখা মাইকেল হার্নের বইটি (দ্য হার্নে অ্যান্ড সন্স গাইড টু টি) পড়তে শুরু করুন। প্রথম ২০ পাতা পড়ার পর চুলা থেকে আপনার চায়ের কেটলি নামিয়ে ফেলুন। সুন্দর একটি কাপে চা ঢেলে ছবি তুলুন। তারপর ফেসবুকে চা এবং বইয়ের ছবি আপলোড করুন। সঙ্গে বই থেকে কপি-পেস্ট করে কিছু লাইন তুলে দিয়ে মানুষকে বোঝান যে অন্য সব বিষয়ের মতো চায়ের ব্যাপারেও আপনার জ্ঞান অসীম। আপলোড হয়ে গেলে আপনার বানানো আলু-চা রান্নাঘরের বেসিনে ফেলে আসুন। কারণ, এই চা শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য, পান করার জন্য নয়।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ

ওপরের রেসিপিগুলো কপিরাইট আইনে কেবল রস+আলোর সম্পত্তি নয়, সম্পদও। তাই এই রেসিপিগুলো ঘরে-বাইরে কোথাও অনুসরণ করবেন না।

তবু কেউ করে ফেললে এবং হাসপাতালে ভর্তি হলে তার চিকিৎসা-সংক্রান্ত খরচ কোনোভাবেই রস+আলো বহন করবে না।