সুরেও যাদের মন টলে না!

সংগীতের মূর্ছনা মানুষকে আবেগ-অনুভূতির যে স্তরে আবিষ্ট করতে পারে তার তুলনা মেলা নাকি ভার।
সংগীতের মূর্ছনা মানুষকে আবেগ-অনুভূতির যে স্তরে আবিষ্ট করতে পারে তার তুলনা মেলা নাকি ভার।

অনেকেই মনে করেন সংগীতের সুরই শিল্পকলার সবচেয়ে বিমূর্ত মাধ্যম। নিজের মনের মতো করে এর রস আস্বাদনে শ্রোতারা অনেক বেশি স্বাধীন। সংগীতের মূর্ছনা মানুষকে আবেগ-অনুভূতির যে স্তরে আবিষ্ট করতে পারে তার তুলনা মেলা নাকি ভার। আর কেবল মানুষই বা কেন, একবার উত্তর মেরুতে বরফে আটকা পড়া একটা নীল তিমিকেও তো বেটোফেনের সুরের মোহে বেঁধেই বের করে আনা হয়েছিল নিরাপদ সমুদ্রে। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন কোনো সুরই নাকি তাঁদের মন টলাতে পারে না।

‘সুর-কানা’ এই মানুষদের কোনো প্রিয় ‘প্লে-লিস্ট’ থাকে না, তাঁরা হঠাত্ করে কখনোই রেডিও খুলে বসেন না, কোনো গানের আসর দেখে মনের ভুলে থমকে দাঁড়িয়ে কান পাতেন না, কিংবা কোনো তুখোড় ‘ডিজে’র সঙ্গে তালে তালে নাচেনও না। এত সব প্রশ্ন যাঁদের নিয়ে করা হচ্ছে তাঁরা কিন্তু আসলে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনই নন!

গবেষকেরা আবিষ্কার করেছেন, বাস্তবিক অর্থে একটা বিশেষ মানসিক অবস্থার কারণেই সুর বা সংগীতের বিষয়ে এমন নিস্পৃহ থাকতে পারেন তাঁরা, বা এমনটা হয় তাঁদের। বিজ্ঞানীরা একে নাম দিয়েছেন ‘মিউজিক্যাল অ্যানহেডোনিয়া’। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘কারেন্ট বায়োলজি’-তে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে ‘হাফিংটন পোস্ট’ এ খবর জানিয়েছে।


গবেষণাপত্রটির সহ-রচয়িতা বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জোসেফ মার্কো-পালারেস এই গবেষণা সম্পর্কে এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এমন মানুষদের চিহ্নিত করতে পারা সংগীতের স্নায়বিক ভিত্তি বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে বুঝতে পারা যাবে, কীভাবে সংগীতের একটা ‘নোট’ বা ‘স্বর’ আবেগে পরিণত হয়।’


এর আগে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়ে এসেছে যে, বেশির ভাগ মানুষই সংগীতে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে জিনগত প্রবণতা বহন করে এবং বিশ্বের সব সংস্কৃতিতেই সংগীত আছে। গান শুনতে থাকলেই মস্তিষ্কে ‘এনডোরফিন’ নামক একটি রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করে। কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে, এটা সম্ভবত সব মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে না।


গবেষকেরা একটি বিশেষায়িত প্রশ্নপত্র তৈরি করে কিছু নারী ও পুরুষের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাঁরা অন্য অনেক কাজের মতো গান শোনার বিষয়টি মোটেই উপভোগ করেন না। এই মানুষেরা ‘অ্যামিউজা’ নামক একটি বিশেষ অবস্থায় রয়েছেন, যার ফলে তাঁদের সংগীতের বিভিন্ন তানগুলোকে মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত করতে পারেন না।


বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সংগীতে সাড়া দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে তাঁদের এই গবেষণা থেকে মস্তিষ্কের কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার নতুন পথ তৈরি হতে পারে। আর এ থেকে ‘আসক্তি’ এবং মন-মেজাজ ‘বিগড়ে’ যাওয়া বা ‘চাঙা’ বোধ করার বিষয়টাও স্পষ্ট হতে পারে।