বাড়তি খরচ কমানোর ১৪ উপায়

টাকা নাকি পানির মতো! কিছুতেই হাতে থাকে না, কোনো না কোনো ফাঁক গলে বেরিয়েই যায়! ফাঁকফোকর বন্ধ করে কীভাবে খরচ বাঁচাবেন, সে সম্পর্কেই কিছু পরামর্শ এখানে থাকল।

যতটুকু প্রয়োজন, শুধু ততটুকু নগদ টাকাই সঙ্গে নিন
ছবি: জাহিদুল করিম

১. হিসাব রাখা শুরু করুন

সাদা চোখে এই পরামর্শ খুব সাধারণ মনে হতে পারে। ভাবতে পারেন, হিসাব রেখে আর কী হবে, প্রয়োজনীয় খরচ তো করবই। কিন্তু হিসাব রাখা শুরু করলেই দেখবেন, এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচও আপনি করেন, যা আপনি নিজেও জানতেন না। আজকাল হিসাব রাখার জন্য বেশ কিছু অ্যাপ আছে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন খাত ধরে ধরে হিসাব রাখা সম্ভব। যেমন যাতায়াত, খাবার, ওষুধ, উপহার কেনা—সব খাতের খরচই মাস শেষে আলাদা আলাদাভাবে আপনার সামনে চলে আসবে। ফলে বুঝতে পারবেন, কোন খাতে খরচ কমানো দরকার।

২. অফারে নজর দেবেন না

এটা কিনলে ওটা ফ্রি, চলছে বিরাট ছাড়—এমন নানা বিজ্ঞাপন আমাদের চোখের সামনে আসে। কখনো কখনো অনেক প্রতিষ্ঠান মুঠোফোনে খুদে বার্তাও পাঠায়। অনেক সময় অফারের ফাঁদে পড়ে আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কিনে ফেলি। এ ধরনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে নোটিফিকেশনগুলো বন্ধ করে দিন, পেজগুলো আনফলো করুন। আর যদি এসব করতে না চান, তাহলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ান।

৩. খাবারের ব্যয় কমান

খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের একটা বড় অঙ্কের টাকা চলে যায় খাবার কেনার পেছনে। অনেক সময় রেস্তোরাঁ বা সুপার শপে গিয়ে একটু বেশিই খরচ হয়ে যায়। মজার খাবারের লোভ সামলানোও কঠিন বটে। তাই খাবারদাবারের পেছনে নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করে রাখুন। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাবেন না। কারণ, ক্ষুধার্ত অবস্থায় অনেক সময় আমরা অনেক বেশি অর্ডার করে ফেলি, সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি। অল্প কিছু খেয়ে নিয়ে আগে ক্ষুধা নিবারণ করুন।

৪. ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বাসায় রেখে যান

যতটুকু প্রয়োজন, শুধু ততটুকু নগদ টাকাই সঙ্গে নিন। কোনো ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড সঙ্গে রাখবেন না। তাহলে যতই প্রলুব্ধ হোন না কেন, দিন শেষে আপনাকে খরচ না করেই বাড়ি ফিরতে হবে। একান্তই যদি প্রয়োজনীয় কিছু কেনার পরিকল্পনা থাকে, তাহলেই কার্ড সঙ্গে নিন।

৫. আয়ের কষ্ট মাথায় রাখুন

হঠাৎ কিছু কেনার ইচ্ছা হতেই পারে। তখন ভাবুন, এই পরিমাণ টাকা আয় করতে আপনাকে কত ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ধরা যাক, ঘণ্টায় আপনি ২০০ টাকা আয় করেন। তাহলে দুই হাজার টাকা আয় করতে কষ্ট করতে হয়েছে ১০ ঘণ্টা। অতএব হুট করে দুই হাজার টাকার কিছু কেনার আগে এই হিসাবটা মাথায় রাখুন। এই ভাবনা আপনাকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে নিরুৎসাহিত করবে।

৬. ঋণ বা সঞ্চয়ে মন দিন

ঋণ করে কিনলে বা সঞ্চয় থেকে খরচ হলে সেটা পূরণ করতে কত দিন সময় লাগতে পারে, হিসাব করুন। নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। ধরা যাক, আপনি ২০ হাজার টাকা জমিয়েছেন। মনে মনে ঠিক করুন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা জমাবেন, এক বছরের মধ্যে এক লাখ টাকা জমাবেন। এভাবে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোতে থাকুন। প্রয়োজনে আপনার লক্ষ্যটা লিখে মানিব্যাগে রাখুন। যেন মানিব্যাগ খুললেই লক্ষ্যটা মনে পড়ে।

৭. সময় নিন

হুট করে শখের কিছু কিনে ফেলবেন না। সময় নিন। কেনার আগ্রহ মনে নিয়ে অন্তত এক রাত ঘুমান। হতে পারে, ঘুম থেকে ওঠার পর একই পণ্য আপনার কাছে আর অতটা আকর্ষণীয় লাগবে না।

৮. পুরোনো সরিয়ে নতুন আনুন

যদি নতুন কিছু কিনতে চান, দেখুন আপনার কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করতে পারেন কি না। এতে খরচের কিছুটা উঠে আসবে। এখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজেই পুরোনো জিনিস বিক্রি করা যায়।

৯. তালিকার বাইরে যাবেন না

বাজারে যাওয়ার আগে সব সময় প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করুন। আকর্ষণীয় কিছু চোখে পড়লেও তালিকার বাইরে কিছু কিনবেন না।

১০. নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন

অল্প বাজেটেই আড্ডা দেওয়া বা ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে বাড়ির ছাদেই আয়োজন করলেন ছোটখাটো পিকনিক বা বসার ঘরকেই বানিয়ে ফেললেন ছোটখাটো থিয়েটার, বন্ধুদের নিয়ে দেখলেন কোনো ছবি। এভাবে বড় আয়োজনগুলোর পরিসর ছোট করে আনুন।

১১. ঘরের খাবার খান

বেশ পুরোনো হলেও এটা বেশ কার্যকর পরামর্শ। সব সময় ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি হয়তো শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী, দুপুরটা বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরেই কাটে, তবু ঘর থেকে খাবার নেওয়ার অভ্যাস করুন। রেস্তোরাঁয় নিয়মিত খেলে খরচ বাড়ে।

বাড়িতে একটি মাটির ব্যাংক থাকলে অনেক সময় টাকা জমানো সহজ হয়

১২. খুচরা পয়সা জমান

বাড়িতে একটি মাটির ব্যাংক থাকলে অনেক সময় টাকা জমানো সহজ হয়। খুচরো টাকাগুলো মানিব্যাগে নিয়ে না ঘুরে মাটির ব্যাংকে জমা রাখুন। এতে বড় নোট ভাঙানোর প্রবণতা কমবে।

১৩. হাঁটুন

স্রেফ হাঁটার অভ্যাস করলেই আপনার খরচ কমে যাবে অনেক দিক থেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অফিস একটু দূরে হলেও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন যদি হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস করেন, শরীর ভালো থাকবে, খরচও বাঁচবে।

১৪. ‘শূন্য খরচের দিন’

সপ্তাহে এক দিন বা দুদিনকে বানান ‘শূন্য খরচের দিন’। অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট দিনে আগে নির্ধারিত বাজেটের বাইরে কোনো টাকা ব্যয় করবেন না। সম্ভব হলে পুরোটা দিন কোনো খরচ না করে কাটান। হেঁটে গন্তব্যে যান। বাড়িতে যা কিছু আছে, তা দিয়েই খাবার বানান।

সূত্র: মানিসেভিংএক্সপার্ট ডটকম