বিশ্বের এমনও কিছু দেশ আছে, যেখানে জিব বের করে কিংবা নাকে নাক ঘষে জানানো হয় অভিবাদন। সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যের কারণে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেমন বদলে যায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য, তেমনই ব্যত্যয় ঘটে সামাজিক রীতিনীতিরও। চলুন, জেনে নিই বিশ্বের এমনই কিছু আজব ও অন্য রকম শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা।

ফ্রান্সের প্রেমের শহর প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের সামনে প্রিয়জনকে জড়িয়ে চুম্বন দিয়েছেন তো অনেকে। তবে জানেন কি, ফ্রান্সে পরিচিতদের শুভেচ্ছা জানানোর অন্যতম এক উপায়ও যে এটি? ফরাসি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘লা বিস’। সাধারণত দুই গালে একবার করে চুম্বন দেওয়া হলেও কিছু অঞ্চলে সেটা তিন বা চারবারও দেওয়া হয়। কখনো আবার কেবল গালে গাল লাগিয়ে চুম্বনের মতো শব্দও করা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ এই ইঙ্গিতটি আন্তরিক সম্পর্কের প্রতীক। তবে প্রথমবার দেখা হলে অপরিচিতজনের সঙ্গে এই রীতি অনুসরণ না করে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
ভদ্র ও সভ্য জাতি হিসেবে জাপানিরা বিখ্যাত। এই দেশে শুভেচ্ছা জানাতে হাত মেলানোর পরিবর্তে মাথা খানিকটা নামিয়ে ‘ওজিগি’ করা হয়। জাপানি শব্দ ‘ওজিগি’ অর্থ মাথা নত করা। এটি সম্মান, কৃতজ্ঞতা এবং বিনয়ের প্রকাশ। ‘বাও’ বা ‘ওজিগি’ করার গভীরতা ও সময়কাল নির্ভর করে মূলত পরিস্থিতি ও ব্যক্তির মর্যাদার ওপর। উদাহরণস্বরূপ, আনুষ্ঠানিক পরিবেশে ওজিগি করতে হয় ধীরস্থিরভাবে, বিনয়ের সঙ্গে; আবার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অতটা কড়াকড়ি নেই।
নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম হলো মাওরি সম্প্রদায়। তাঁদের সংস্কৃতিতে আছে ‘হোংগি’ নামের অনন্য শুভেচ্ছা বিনিময় পদ্ধতি, যেখানে দুজনের নাক ও কপাল আলতোভাবে স্পর্শ করা হয়। এটিকে তাঁরা বিবেচনা করেন ‘নিশ্বাস ভাগাভাগি’ করে নেওয়া হিসেবে। মুখমণ্ডলের আলিঙ্গন এই ‘হোংগি’ বন্ধুত্ব ও আধ্যাত্মিক সংযোগের বার্তাও দেয়।
অভিবাদন জানানোর উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মজার হলো তিব্বতের পদ্ধতিটি। এখানে কিছু এলাকায় শুভেচ্ছা জানানোর জন্য জিব খানিকটা বের করে দেখানো হয়। এই প্রথার শিকড় প্রোথিত শতাব্দী পুরোনো বিশ্বাসে; যাতে বোঝানো হয়, আপনি আমার বন্ধু। যদিও বাইরের মানুষের কাছে এই নিয়ম অদ্ভুত মনে হতে পারে, তিব্বতিদের কাছে এটি স্বাভাবিক ও আন্তরিক ইঙ্গিত।
বতসোয়ানায় শুভেচ্ছা জানাতে করা হয় করমর্দন। তবে যে সে করমর্দন নয়! এই দেশে হাত মেলানোর পদ্ধতি বেশ আলাদা। প্রথমে স্বাভাবিক করমর্দন, তারপর আঙুল ছেড়ে দিয়ে হাতের তালুতে হালকা চাপ, এরপর আবার হাত মেলানো—এই তিন ধাপে বিনিময় করা হয় শুভেচ্ছা। বতসোয়ানার এই প্রথা স্থানীয় সংস্কৃতির বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের প্রতীক।
সূত্র: গোইটগিভ, এএফএআর ও অ্যাটলাস লোকালাইজেশন