এইচএসসির পর পড়তে পারেন আয়ুর্বেদ ও ইউনানি বিষয়ে

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় রোগ নিরাময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় রোগ প্রতিরোধ
ছবি: সুরাইয়া সরওয়ার

ইউরোপীয় চিকিৎসাপদ্ধতি চালু হওয়ার আগে ইউনানি ও আয়ুর্বেদের মতো চিকিৎসাপদ্ধতির ওপরই ভরসা করেছে এই অঞ্চলের মানুষ। ধারণা করা হয় ৪৬০ থেকে ৩৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিসে হিপোক্রেটিস এবং তার অনুসারীরা ইউনানি চিকিৎসাপদ্ধতির ভিত গড়ে তোলেন। পরে আরবরা এটি নিয়ে কাজ করেন। অন্যদিকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে আয়ুর্বেদের জন্ম হয় প্রাচীন ভারতে। আজকাল আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি এসব চিকিৎসাপদ্ধতির চাহিদাও বিশ্বজুড়ে বাড়ছে।

এসব চিকিৎসাপদ্ধতি শেখার জন্য বাংলাদেশেও আছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে সবুজে ঘেরা এক ক্যাম্পাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটিতে পড়াশোনা করতে আসেন দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা।

কলেজটিতে মূলত দুটি শাখায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়—ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি এবং ব্যাচেলর ব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি। পাঁচ বছর পাঠক্রম শেষে শিক্ষার্থীদের এক বছরের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এই কলেজের পরীক্ষাগুলো হয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আর পড়ালেখা শেষে ডিগ্রি প্রদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ।

স্নাতকদের জন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং শিল্পে কাজের ক্ষেত্র, দুটিই তুলনামূলক উজ্জ্বল

‎‎ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন বলেন, আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় রোগ নিরাময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় রোগ প্রতিরোধ। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানভিত্তিক আয়ুর্বেদ এবং গ্রিক-আরব চিকিৎসা ঐতিহ্য থেকে আসা ইউনানি—দুই পদ্ধতিই দেহ, মন আর পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যের ওপর জোর দেয়।

এখানকার পাঠক্রমে শেখানো হয় পঞ্চকর্ম থেরাপি, হিজামা থেরাপি, আকুপাংচারসহ নানা বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ত্বকের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে এসব চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যও চোখে পড়ার মতো।

কলেজটিতে মূলত দুটি শাখায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়

‎‎কলেজটিতে বর্তমানে আছেন ৪২ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণিকক্ষেই সীমাবদ্ধ না থেকে হাসপাতালের ১০০ শয্যার ওয়ার্ডে সরাসরি রোগীদের সেবা দেয়ার মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা পান। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল বিষয়েও রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ২০০ নম্বরের কোর্স রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে তাঁরা ওষুধ তৈরি ও ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

সোহরাব হোসেনের কাছ থেকে জানা গেল, দেশে প্রায় ৫৫০টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। ফলে স্নাতকদের জন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং শিল্পে কাজের ক্ষেত্র, দুটিই তুলনামূলক উজ্জ্বল। উচ্চশিক্ষার পথও খোলা। ব্যাচেলর শেষে দেশ কিংবা বিদেশে বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বোটানি বা পাবলিক হেলথে মাস্টার্স, এমফিল কিংবা পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে চীন যাচ্ছেন। সেখানে আকুপাংচার বিষয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়া এখন বেশ জনপ্রিয়।

‎‎কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল করলেও গবেষণার সুযোগ এখনো সীমিত। কলেজটিতে ছাত্রদের জন্য একটি হোস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য নেই কোনো স্থায়ী হোস্টেল। কলেজটির প্রোডাকশন ইউনিটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ছাত্রীদের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী থাকার জায়গা।

ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম

সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তীর্ণ হতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষা মিলে অন্তত জিপিএ–৮.০০ পেতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি প্রতিটিতে জীববিজ্ঞানে অন্তত ৩.৫০ পেতে হবে। এই ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মতোই হয়ে থাকে। সাধারণত এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার পর সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।