রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড (কম্পন নিয়ন্ত্রক স্প্রিং) পড়ে সম্প্রতি একজনের মৃত্যু হয়েছে। ব্যয়বহুল গণপরিবহনে এ দুর্ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে নতুন হলেও অনেক দেশেই ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে মেট্রোরেল চলছে। চলুন, বিশ্বব্যাপী মেট্রোতে ঘটে যাওয়া কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার তথ্য জেনে নিই।

স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে মেক্সিকো সিটির অলিভোস স্টেশনের কাছে মেট্রোরেলের ব্রিজ ধসে ট্রেনসহ নিচের রাস্তা ও গাড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৩ জন মারা যান, আহত হন অন্তত ৭৯ জন।
এটিকে এ দশকের সবচেয়ে ভয়ংকর মেট্রো দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর মেক্সিকো সিটিতে দুটি মেট্রোরেলের মধ্যে সংঘর্ষে ২৩ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হন।
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও জনাকীর্ণ মেট্রো সিস্টেম মস্কোয়। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ মেট্রোতে যাতায়াত করেন। মস্কোয় ওই দিন মেট্রোরেল লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হন।
প্রাথমিকভাবে একে সন্ত্রাসী হামলা কিংবা কারিগরি ত্রুটি বলে ধারণা করা হলেও পরে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। তদন্তে মেট্রো কর্তৃপক্ষের অপেশাদারি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অবহেলার অভিযোগ উঠে আসে। এ দুর্ঘটনা মস্কো মেট্রো সিস্টেমের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
ওয়াশিংটনে দুটি সাবওয়ে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে চালকসহ ৯ জন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হন। স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় বাড়ি ফেরার ব্যস্ত সময়ে প্রায় ৪৫ মাইল বেগে চলমান ট্রেনটি টাকোমা ও ফোর্ট টোটেন স্টেশনের মাঝখানে থেমে থাকা একটি ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
সার্কিটে ত্রুটির কারণে সময়মতো ঠিকঠাক নির্দেশনা না পাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একে ওয়াশিংটন মেট্রোর ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়।
স্পেনের পূর্বাঞ্চলীয় ভ্যালেন্সিয়া শহরে মেট্রোরেল লাইনচ্যুত হয়ে ৪৩ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত হন। প্রবল গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে ধারণা করা হয়। ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিসীমা নির্ধারণ করা থাকলেও ওই সময় ট্রেনটি ৮০ কিলোমিটার বেগে চলছিল।
এ ছাড়া ট্রেনটির চাকায় কিছু সমস্যাও পড়ে ধরা পড়ে। পাতাল রেলপথের একটি অংশে ধসের প্রমাণও পাওয়া যায়। সেগুলোও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাতাল মেট্রো–ব্যবস্থার মারাত্মক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দায়েগু শহরে এক ব্যক্তি ট্রেনের মধ্যে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন কমপক্ষে ১৪৭ জন। জানা যায়, অগ্নিসংযোগকারী ৬৫ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক কিম দাই-হান অনেক দিন ধরে বেকার ছিলেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। চিকিৎসা চলাকালে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর তাঁর আস্থা উঠে যায়। হতাশার এক পর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশকে জানান, তিনি জনাকীর্ণ স্থানে আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন। তাই জুঙ্গাংনো স্টেশনে থেমে থাকা ট্রেনটিতে উঠে তিনি পেট্রলজাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।
নিমেষে পুরো ট্রেনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। শুধু তা–ই নয়, এ সময় অপর একটি ট্রেন স্টেশনটিতে এসে দাঁড়ালে সেটিতেও আগুন লেগে যায়। এটি কেবল দক্ষিণ কোরিয়ায় নয়, বিশ্বের মেট্রোরেলের ইতিহাসে অন্যতম মারাত্মক প্রাণহানি।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে মেট্রোরেলে আগুন লেগে ২৯২ জন নিহত ও ১৬৮ জন আহত হন। বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে আগুন লেগেছে বলে প্রতিবেদন দেওয়া হলেও নাশকতার কথাও উঠে আসে।
সরকারি তদন্ত কমিশন জানায়, ট্রেনের ট্র্যাকশন মোটর থেকে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দগ্ধ বগিগুলোর একটির পাশে দুটি রহস্যময় বড় গর্ত পাওয়া যায়, কারও কারও মতে এগুলো বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহারের ইঙ্গিত।
এ কারণে একে সম্ভাব্য সংগঠিত নাশকতা বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সাবওয়ে দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়।
শিকাগোতে দুটি মেট্রোরেলের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হন। উড়াল মেট্রোরেলের লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনকে পেছন থেকে আসা আরেকটি ট্রেন ধাক্কা দিলে চারটি বগি নিচে রাস্তায় পড়ে যায়।
এ দুর্ঘটনাকে শিকাগোর পরিবহন কর্তৃপক্ষের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি