
ফলে পাবেন দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও পানি। ত্বক ও চুলের জন্য এসব উপাদান খুবই প্রয়োজন। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের মতো উপাদানগুলো ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
সুস্থ থাকতে রোজ ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা। ফলমূল শুধু শরীরকে ভেতর থেকেই সুস্থ রাখে না, ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক সতেজতা ধরে রাখতেও রোজ ফলমূল খাওয়া চাই। তবে পুষ্টিগুণ বিচারে দেশি ফলগুলো থেকেই উপকার মেলে সবচেয়ে বেশি। ত্বক বা চুলের সৌন্দর্যে প্যাক তৈরির মতো নানা কাজেও ব্যবহার করা যায় নানা ধরনের ফল।
টাটকা অবস্থায় যেকোনো ফল খাওয়া হলে পুষ্টি উপাদানগুলো পাবেন ঠিকঠাক। অন্যদিকে গাছ থেকে সংগ্রহ করার বহুদিন পর কোনো ফল খাওয়া হলে সব পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। বেশ কিছুটা কমে যায় এর গুণ।
যেসব ফল দেশের বাইরে থেকে আনা হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটে বেশি। এসব ফল সংরক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভও দেওয়া হয়। অথচ বেশি দাম দিয়ে অনেকেই এসব ফল কেনেন। নানা ধরনের ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলছিলেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
ফলে পাবেন দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও পানি। ত্বক ও চুলের জন্য এসব উপাদান খুবই প্রয়োজন। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের মতো উপাদানগুলো ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এসব উপাদানের প্রভাবে চুলও থাকে ঝলমলে। বয়স হয়ে যাওয়ার পরও ত্বকের গড়ন সুন্দর রাখতে এবং চুল মজবুত রাখতে ভিটামিন সি আবশ্যক। কারণ, ত্বক ও চুলের গঠনগত প্রোটিন কোলাজেন তৈরির জন্য ভিটামিন সির কোনো বিকল্প নেই।
অনেকে ফল খেতে পছন্দ করেন না। তবে ফলের বৈচিত্র্যময় সম্ভারে রসনার তৃপ্তি মিলবে। টক স্বাদের নানা মৌসুমি ফল থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। রঙিন ফল থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন এ। সুস্থ ত্বক ও চুলের জন্য রোজ অন্তত একধরনের টক ফল এবং একধরনের রঙিন ফল খেতেই হবে।
তবে মনে রাখবেন, তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আচার বা চাটনিজাতীয় পদ থেকে ভিটামিন সি পাবেন না। আম, জাম, কাঁঠাল, আতা, আমড়া, জাম্বুরা, লটকন, আমলকী, বেল, কতবেল, কলা, সবুজ মাল্টা, কমলা, ডালিম, পানিফল, লেবু, করমচা, ডাব—দেশি ফলের তালিকাটা বিশাল। যখন যেটার মৌসুম, তখন সেটাই বেছে নিন। ড্রাগন ফলও এখন দেশে চাষ হচ্ছে।
ত্বক ও চুলের যত্নে ফলের নানাবিধ প্রয়োগ সম্পর্কে জানালেন হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
নারকেলের দুধ নিন এক টেবিল চামচ। সঙ্গে মিশিয়ে নিন এক টেবিল চামচ ওট পাউডার। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং বয়সের ছাপ কমাতে কাজে লাগাতে পারেন এই প্যাক।
আমলকীর রস নিন এক টেবিল চামচ। আরও নিন এক চা–চামচ টক দই। ঘনত্ব আনার জন্য যতটা প্রয়োজন, ততটা বেসন যোগ করুন। এই মিশ্রণেই হবে দারুণ এক ফেশিয়াল।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কমলা কিংবা মাল্টার রস কাজে লাগাতে পারেন। এই রসের সঙ্গে যোগ করুন টক দই আর মধু। সব উপকরণ এক চা–চামচ করে নেওয়াই যথেষ্ট। উপকরণগুলো একসঙ্গে বিট করে নিলেই হয়ে যাবে ফেসপ্যাক।
যেকোনো ত্বকের উপযোগী সিরাম তৈরির জন্য পেয়ারার রস নিন এক টেবিল চামচ। সঙ্গে এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেল আর একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস। বিট করে নিলেই হয়ে যাবে সিরাম। কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রেখে দিলে এক সপ্তাহ ভালো থাকবে।
তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী সিরাম তৈরির জন্য কমলা বা মাল্টার রস নিন এক টেবিল চামচ। সঙ্গে এক চা–চামচ অ্যালোভেরা জেল আর একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস মিশিয়ে নিন। একসঙ্গে বিট করে নিন। এই সিরামও একইভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
চারটা আমলকী ছোট টুকরা করে কেটে নিন। এক চা–চামচ মেথি একটু থেঁতো করে নিন। এই উপকরণগুলোকে এক কাপ নারকেল তেলে মিশিয়ে জ্বাল দিন। বেড়ে যাবে তেলের পুষ্টি। এক দিন পর ছেঁকে নিতে হবে।
মাঝারি আকারের একটা পাকা কলা নিন। সঙ্গে টক দই নিন আধা কাপ, অ্যালোভেরা জেল দুই টেবিল চামচ, মেথির গুঁড়া এক টেবিল চামচ, ত্রিফলার গুঁড়া এক টেবিল চামচ, মধু এক চা–চামচ আর নারকেল তেল এক টেবিল চামচ। ব্লেন্ড করলেই হয়ে যাবে হেয়ারপ্যাক। চুলের শুষ্কতা রোধে এই প্যাক কাজে দেবে।