চুলের ওপর শীতের প্রভাব পড়ে শুরু থেকেই। তবে চুলের ধরন বুঝে যত্ন নিলে এই শুষ্ক আবহাওয়াতেও চুল থাকবে প্রাণবন্ত।
শীতের প্রভাব এবার শুরু থেকেই প্রকট। এমন সময় সুস্থ থাকতে নিজের খানিকটা যত্ন তো নিতেই হবে। চুলের ব্যাপারটাই যেমন। চুলের ধরন বুঝে যত্ন নিলে এই শুষ্ক আবহাওয়াতেও চুল থাকবে প্রাণবন্ত। এ বিষয়ে বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির সঙ্গে কথা বলে লিখেছন রাফিয়া আলম।
যাঁদের চুলের ধরনটাই শুষ্ক প্রকৃতির, শুষ্ক দিনে তাঁদের চুলের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এ রুক্ষতাই। চুলের আগা ফাটতে থাকে, চুল পড়ে যায়। এ ধরনের চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন উষ্ণ তেল মালিশ করা প্রয়োজন। সমপরিমাণ নারকেল তেল আর জলপাই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
সপ্তাহে এক-দুবার শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট। তবে বেছে নিন সালফেটমুক্ত ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু। প্রতিবার শ্যাম্পুর করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন অবশ্যই। সপ্তাহে একদিন ২ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ মধু আর ১ টেবিল চামচ জলপাই তেল (বা নারকেল তেল) দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
এ ধরনের চুল বেশ দ্রুত তেলতেলে হয়ে পড়ে। আর মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খুশকি। এ ধরনের চুলে তেল মালিশ করার পর ৩০-৪৫ মিনিটের বেশি রাখা উচিত নয়। সপ্তাহে এক-দুই দিন তেল মালিশ করাই যথেষ্ট। হালকা ধরনের তেল বেছে নেওয়া উচিত। কাঠবাদামের তেল দিতে পারেন।
সপ্তাহে দু-তিনবার মৃদু ধরনের শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার হিসেবে লেবুর রস কাজে লাগাতে পারেন। এক মগ পানিতে খানিকটা লেবুর রস মিশিয়ে ওই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই হয়ে যাবে কন্ডিশনারের কাজ।
সপ্তাহে একদিন ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকটি ধোয়ার সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
স্বাভাবিক চুলও শীতে একটু নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। এ ধরনের চুলের যত্নে সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। সপ্তাহে একদিন উষ্ণ তেল মালিশ করাই যথেষ্ট।
সপ্তাহে একদিন ১টি মাঝারি আকারের পাকা কলা, ২ টেবিল চামচ তরল দুধ আর ১ চা-চামচ মধু দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে চুল থাকবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
কোঁকড়ানো চুল এ সময় অতিরিক্ত শুষ্ক ও উষ্কখুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ধরনের চুলের যত্নে সপ্তাহে দু-তিন দিন উষ্ণ তেল মালিশ করা প্রয়োজন। সপ্তাহে এক-দুবার শ্যাম্পু করুন। বারবার শ্যাম্পু না করাই ভালো। অবশ্যই বেছে নিতে হবে সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু। লিভ-ইন কন্ডিশনার বা কার্ল ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। মনে রাখতে হবে, ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে ঘষা যাবে না। সপ্তাহে একদিন ২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু আর ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল (বাজারে কিনতে পাবেন) দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন।
চুলে বারবার তাপ প্রয়োগ করতে গিয়ে বা রাসায়নিক প্রয়োগ করতে গিয়ে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে এ সময় সপ্তাহে একদিন উষ্ণ তেল মালিশ করা আবশ্যক। সপ্তাহে এক-দুবার শ্যাম্পু করা উচিত। মৃদু ধাঁচের শ্যাম্পু বেছে নিন। তাপ প্রয়োগ করতে হয় এমন অনুষঙ্গ, যেমন স্ট্রেটনার বা কার্লার পারতপক্ষে ব্যবহার না করাই ভালো। ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার ও হেয়ার সিরাম দারুণ কাজে দেবে।
সপ্তাহে একদিন ১টি ডিম, ২ টেবিল চামচ টক দই আর ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
এ সময় অবশ্যই পানি খাবেন পর্যাপ্ত। শাকসবজি ও মৌসুমি ফলমূলও খেতে হবে।
চুল ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। কখনোই অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
যেসব প্যাকে ডিম থাকে, সেগুলো ধোয়ার সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন, কুসুম গরম পানিও নয়।
কোনো প্যাকের কোনো উপকরণে অ্যালার্জি থাকলে তা অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
ভেজা চুলে বাইরে যাবেন না।
ঠান্ডা বাতাসে থাকতে হলে অবশ্যই চুল ঢেকে রাখুন।
উলের টুপি, মাফলার, শাল বা শীতের যে অনুষঙ্গ দিয়েই মাথা ঢেকে রাখুন না কেন, ভেতরে সুতি কাপড় রাখুন।
নিয়মিত চুলের আগা কাটিয়ে নিন। নইলে চুল লাবণ্য হারাবে খুব সহজেই।